“উদ্‌ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে
স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে
নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন
বিধ্বস্ত…।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


বিবর্তন চলছিল। তাও আবার মেরুনরঙা বিবর্তন। বিবর্তন হতে হলেতো তার প্রেক্ষাপটও লাগে। তাই কবি প্রেক্ষিত তৈরি করেন,
“বিষণ্ন কালের গায়ে তখনো বৈরাগী চাদর..।”


বিবর্তনও এক ধরণের বিপ্লব । বিবর্তন মানেই তো যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে অনাস্থা রেখে অন্য (উন্নত) অবস্হানে যাওয়া। কবি এখানে যে বিবর্তনের কথা বলেছেন তা বোধ করি সামাজিক বিবর্তন। আর পৃথিবী এবং মানব সভ্যতার ইতিহাসটাইতো বিবর্তনের  ইতিহাস । সেই আদিম মানুষ থেকে আধুনিক মানুষে রূপান্তর। নানা বৈপ্লবিক উথ্থান পতন। কিন্তু বিবর্তন যখন সংঘঠিত হতে শুরু করে তখন কায়েমী স্বার্থবাদীরা তার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায় । অতীত আঁকড়ে থাকা আলোখেকো এসব সুবিধাভোগীরা তাতে তীব্র বাদসাধে। কিন্তু পতন কি ঠেকাতে পারে। ইতিহাস কি বলে? কবির কথায়,


“ একদল আলোখেকো পতঙ্গ এসে
প্রকাশ্যে হানা দিয়ে গেলে
প্রবালকীটেরা আর বাঁচেনি অতলে!”


এ মৎস চোখধারীরা সবকিছু তছনছ করে দিতে চায়। এরা আঁধারপন্থি দানব। নিঃশেষ হবার আগে সাধারণ্যে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়।কখনো ভিন্ন কৌশলে সান্ত্বনার বাণী উদ্গিরণ করে। কিন্তু এতেও কাজ না হলে মরণকামড় দেয়। সবশেষে  মাথা নত করে পরাগি আদরে ভেসে উঠে। “প্রবালকীটেরা আর বাঁচেনি অতলে!” কবিতায় এটি অতিশয়োক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কবিতায় আলো আঁধারি খেলাটা কবি ভালই খেলতে পারেন। আর এ কৌশল বেগবান করতে মাছ, শেওলা, প্রবাল অর্থাৎ সাগর তলের একটা আবহ  এ কবিতার অনুসঙ্গ রূপে নিয়ে এসেছেনে। এটিও ভাল লাগার বিষয়। সল্পায়তনের এ কবিতায় কবি মানবসভ্যতার ইতিহাস ও সংগ্রামী প্রবণতা পরোক্ষে উপজীব্য করেছেন। এটিও তাঁর বিশেষত্ব। অনিবার্য শব্দের মেল বন্ধনই কাবতা হলে, মেদহীন আধুনিক অনিবার্য শব্দচয়নে এটি কবিতা। রূপকই কবিতা হলে, রূপকের অনন্য ব্যবহারে এটি কাবতা। কবি তাঁর কাব্য রচনায় স্বাধীন। কবিতার পাঠক কবিতার রসে রসিক হতে ঈশ্বরকণা খুঁজার মতো কাব্যমর্ম খুঁজে নিক।


“ এই শ্রাবণের বুকের মাঝে আগুন আছে।”


কবিগুরুর এ গীতি সুধায় শেষ করার আগে প্রচণ্ড ধীশক্তি সম্পন্ন কবি ‘আগুন নদী’ কে জানাই শুভেচ্ছা ।তাঁর সৃষ্টিশীলতার আগুন ছড়িয়ে পড়ুক কুলুকুলু বেগে চলা বহতা নদীর মতো।