সিগারেট টানছিলাম, পাশে কেউ গেঞ্জি ধরে টানলো। ঘুড়ে দেখলাম এক ৭-৮ বছরের একটা মেয়ে।


-ভাই ৫ টাকা দেন না।


-৫ টাকায় কি হবে ?


-ভাত খাবো।


-৫ টাকায় ভাত হয় ??


-অল্প করে খাবো।


-(speechless !!) কত টাকা হলে বেশি করে খাওয়া হবে ?


-৫০ টাকা। ভাত ১০ আর তরকারি ৪০।দিবেন ?


-হুম দিতে পারবো।


-এত টাকা দিবেন !! (চোখে মুখে বিস্ময়)তয় ভাত কিইনা দেওন লাগবোনা,একটা উপকার করেন।


-কি উপকার ?


-ঐ টাকার চাউল কিনে দেন। বাসায় নিয়ে যাবো। মা সহ খাবো।


-বাসায় কে কে আছে আর তোমার ?


-মা বুইন আর একটা ভাই। মা হাটবার পারেনা। বুবু কাজ করে। বড় ভাই চা এর দোকানে থাকে। আমি ভিক্ষা করি।


- তোমার বাবা ?


-ছাইড়া গেছে অনেক আগে, মনে নাই।


-হুম। পড়াশোনা কর না ?


-পড়লে ভিক্ষা করতাম কখন ? খাওন জুটবোনা।


১ কেজি চাউল আর কিছু ডিম কিনে দিয়ে বিদায় নিলাম। ৪ জনের সংসারে একদিন চলে যাবে।


খুব অদ্ভুত ভাবে বেড়ে উঠে ওরা।খুব অল্প বয়সেই জীবনকে বুঝে নিতে শেখে।
৭ বছরে যথসম্ভব আমি “কেজি/ওয়ান” এ পড়তাম। এই বিকাল টাইম টাই Drawing করতাম। অবসরে ওটাই শখ ছিল। নিশ্চিন্তে Drawing করতাম। খাওন জুটবে কই থেকে এই চিন্তা অন্তঃত ছিলনা। “পড়লে খাওয়োন জুটবো কই থেকে” এই ধরণের প্রশ্নও মাথায় আসেনাই।এগুলো চন্তার জন্য বাবা-মা ছিল।


>> ৫ টাকায় আমি তো ছোটবেলায় কলম কিনেছি। আমার শিক্ষার উপকরণ। সে ৫ টাকায় ভাত খুজে। তার বেচে থাকার উপকরণ। বর্তমানে আমাকে অফিস থেকে কলম দেওয়া হয়, যার দাম ১৯০ টাকা। আর যেই সিগারেট টা খাচ্ছিলাম তার দাম ১০ টাকা।


পথের ধুলোয় অদ্ভুত ভাবে বেড়ে উঠার মাঝেও তাদের মধ্যে বিবেকবোধ তৈরী হয়েছে। ৫০ টাকা্য হোটেল থেকে ভাত-তরকারি কিনে খাওয়ার থেকে বাসায় পঙ্গু মা আর ভাই বোন কে নিয়ে খাওয়া বেশি তৃপ্তিজনক সেই বোধও এই ৭-৮ বছরের অশিক্ষিত মেয়ের মাঝে তৈরী হয়েছে। ‪#‎শিক্ষায়_শুধুমাত্র_বিবেক_বোধ_শেখায়না‬


এর বয়সে রোজ সকালে আমি ভাবতাম আজ স্কুলে যেয়ে টিফিনে কি খেলব, কার পাশে বসবো, স্যারের কোন হোমওয়ার্ক আছে কিনা।
আর এই মেয়েটা ভাবে রোজ সকালে “কোন রাস্তায় ভিক্ষা করলে বেশি টাকা পাবে” আর ৫০ টাকা আমাদের একদিন মোবাইলে খরচ যায় আর ওদের সবাই মিলে এক বেলা খাওয়া হয়ে যায়।


একই স্রষ্টার স্রিষ্টি আমরা দুইজনই। দুইজনই দুইজনের বাবা-মা এর সন্তান। স্রষ্টা চাইলে আমার আর স্থান টাও উল্টো হতে পারতো। আমরা ভুলে যাই সব।অনেক অহংকার আমাদের। গরীব দের মানুষ ভাবিনা। কখনও তাদের গায়ে হাত তুলি। কাছে আসলে রুমাল নাকে দিই।আমাদের ভাব ভঙ্গি এমন যে আজ আমাদের যা ভালো পজিশন এর ক্রেডিট আমাদের।অথচ স্রষ্টা চাইলে আজ সে চা খাইতো আর আমি গেঞ্জি টেনে ৫ টাকা চাইতাম অল্প করে ভাত খাওয়ার জন্য।


ভালো রেখেছেন স্রষ্টা সত্যিই অনেক। নিম্নবিত্ত এই মানুষ গুলোর জীবন বৈচিত্রের সাথে তুলনা না দেওয়া পর্যন্ত সত্যিই বুঝিনা আমি কতটা সুখে আছি, কতটা ভাল আছি…………


তাই কখোনো এই সব ছোট পথ শিশুদের গায়ে হাত তুলবেন না, নাকে রুমাল দিয়ে তাদের কে তাড়িয়ে দিবেন না, তাদের ই সমবয়সী আমাদের ও আছে ভাই বোন, আজকে এই পথ শিশুর জায়গায় আপনার ছোট ভাই বা বোন থাকলে আপনি কি করতেন? নাকে রুমাল দিয়ে তাড়িয়ে দিতেন????


সফুরা বেগম। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। বাড়ি ভোলা জেলায়। একসময় বাড়িঘর সব থাকলেও নদীভাঙ্গনে হারিয়েছেন সবকিছু। এরপর থেকে ভাঙ্গাগড়ার জীবন সফুরার। হয়েছেন ছিন্নমূল। থাকেন নগরীর দেওয়ান হাট ওভারব্রিজের নিচে। এক সন্তানের জননী সফুরা বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। কাজ না থাকলে নামেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। সেহেরি কিংবা ইফতারের জন্য আলাদা আয়োজন বলতে কিছু নেই। অন্য দশ দিনের মতোই দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতে পারলেই যেন স্বস্তি।


শুধু সফুরা বেগম নয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ও রেল লাইনের পাশে বসবাসকারী ছিন্নমূল পরিবারের রমজান কাটে এভাবেই। সারাদিন উপোষ করলেও তাদের ভাগ্যে ইফতারিতে জুটে না একটি খেজুর কিংবা সেহেরিতে মাছ-মাংস। ইফতার আর সেহেরি বলতে কিছু নেই তাদের। ভিক্ষায় পাওয়া খাবার কিংবা বাসি ভাত দিয়ে সন্ধ্যার আহার। শাক-ভাত দিয়ে সেহেরি। অনেকের কপালে তাও জুটে না।


নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছিন্নমূল পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্রই দেখা গেছে।


দেওয়ানহাট ওভার ব্রিজের নিচে বসবাস করে ৩৫-৪০টি পরিবার। এ এলাকার ছিন্নমূল পরিবারের বেশিরভাগই এসেছেন রংপুর ও গাইবান্ধা এলাকা থেকে। এলাকায় কাজ না থাকায় তারা চট্টগ্রামে চলে আসেন বলে জানান আরেক ছিন্নমূল পরিবারের তিন সন্তানের মা জয়নব বেগম।


মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পাওয়া যায় তা দু’বেলা অন্ন যোগান দিতেই খরচ হয়ে যায়। তাই ভালো খাবারের কথা চিন্তাই করতে পারেন না আম্বিয়া খাতুন।


সিআরবি এলাকার ছিন্নমূল পরিবারের কর্তা নুরু মিয়া জানান, তার দুই শিশুসন্তান ও তিনি ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন।


‘মাছ-মাংস গরিবের জন্য নয়, এসব বড়লোকের খাবার’, আক্ষেপ করে বলেন নুরু মিয়া। মুসলমানের জন্য রোজা ফরজ। তাই রোজা রাখি। কোনো রকমে শাক-ভাত দিয়ে ইফতার ও সেহেরি সারেন বলে জানান তিনি।


পঞ্চাশোর্ধ্ব মনিরা বেগম। কাগজ ও বোতল কুড়িয়ে বেড়ান নগরজুড়ে। রাত কাটান স্টেডিয়াম পাড়ায়। সারাদিনের কুড়ানো কাগজ ও বোতল আলাদা করার কাজে ব্যস্ত। অন্যদিকে কোনো ভাবান্তর নেই। যেন পৃথিবীতে এই একটি কাজের জন্যই তার জন্ম। পাশে বসে কথা বলার চেষ্টা করলে প্রথমে তেমন আগ্রহ দেখাননি।


পরে বলেন, ‘সারাদিন কাগজ-বোতল বিক্রি করে ৩০-৫০ টাকা পাই। তা দিয়ে খাবার কিনে খাই। না পাইলে উপোষ করি। ভিক্ষা করি না। ভোরবেলা হোটেল থেকে ভাত কিনে খাই। রাতে মুড়ি পেয়াজু এনে খাই।’


কথায় বুঝা যায়, এক সময় সচ্ছল ছিলেন। ভাগ্য-বিড়ম্বনা পথে দাঁড় করিয়েছে মনিরা বেগমকে। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের কোনো কিছুই বলতে রাজি নন মনিরা। বাড়ি কোথায়? সন্তান আছে কিনা জানতে চাইলে উত্তর না দিয়ে এক মনে কাজ করতে থাকেন।


নুরুলদিন। বয়স ষাটের কাছাকাছি। বাড়ি রংপুর। থাকেন দেওয়ানহাট এলাকার একটি বস্তিতে। ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বলেন, রমজান মাসে আয় রোজগার ভালোই হয়। রোজা রেখে সারাদিন ভিক্ষা করতে পারি না। সকালে ভিক্ষা করে দুপুরের দিকে বাসায় ফিরে আসি। সেহেরি বাসায় খাই। ইফতার মসজিদ কিংবা মাজারে গিয়ে করি। কোথাও না জুটলে কিনেই খান বলে জানালেন তিনি।


রোজা তেমন গুরুত্ব বহন করে না ছিন্নমূলে এমন লোকের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। জীবনের কঠিন রুঢ়তায় ধর্ম-কর্ম তাদের কাছে এখন অনেকটাই গৌণ।


সংগৃহীত পোস্ট
Ashik Priya, আবদুল্লাহ আল মামুন,