স্বাধীনতা তুমি কি এই বিভাজিত দারিদ্র সীমারেখা?
একপাশে যার শত কয়েক সুখ আর
অন্যপাশে দেড়শ মিলিয়ন ব্যাথা ।


স্বাধীনতা তুমি কি এই ক্ষুধাভরা রাজপথ?
একপাশে যার পাদুকাবিহীন,তপ্ত রোঁদে দগ্ধ দেহের
বস্তা ধরা পথশিশুর কপাল গড়িয়ে ঘাম।
ওপাশে তার, সিগনালে দাঁড়ানো
এলিওন অথবা টয়োটা করোলার,ভিতরে বসা এসি ম্যানিয়ার
মেম সাহেবের হিন্দি ছবির গান।


স্বাধীনতা তুমি কি এই ব্র্যান্ড নিউ নিশানের
লাখ টাকার কালো কাচ?
একপাশে যার নাদুস-নুদুস,ইংলিশে শুধু ফাটুস-ফুটুস
আল্লাদি ললনা।
ওপাশে তারই, ক্লান্ত-ক্লিষ্ট, জীর্ণ-বৃদ্ধ পিতার বাড়ানো হাতে
যুবতি মেয়ের পাত্রস্থ হওয়ার ছলনা।


স্বাধীনতা তুমি কি ঐ বনানি-গুলশানের বিভেজিত কালো লেক?
একপাশে যার সারি সারি বাড়ি,বিলাসি বিকেলের
ফুস্কা,চটপটি আর কফি হাউসের বাবুয়ানা।


ওপাশে তুমি কি দাড়িয়ে সাক্ষী ?বস্তী শিশুর শুকনো মুখখানা।
কুচকুচে কালো লেকটি যেন বাবুদের বেহায়াপনা।
ওপরে তারই দাড়িয়ে আছে ঝুলন্ত পায়খানা।


স্বাধীনতা তুমি কি বেকার যুবকের ক্ষয় হওয়া স্যান্ডেল?
ওপরে তার নো ভ্যাকেন্সি আর মামু খালুর নো টিকিট
তলাতে তার দূরদৃষ্টি,বৃত্তি ভর্তি, বহু বছরের গুনকীর্তি,
আর ফাইল ভরা সার্টিফিকেট।


স্বাধীনতা তুমি কি শ্রমজীবী আর পেশাজীবীর ঘর্মিত বুক?
ওপরে তার রাষ্ট্রযন্ত্র, বিকার-গ্রস্থ ধনিক তন্ত্র
অভাবের দায়, আজকে সে তাই, রাষ্ট্রের হৃৎপিণ্ড।
তলাতে তার অভাবের সংসার, স্বাদ মেটানোর সাধ্য যে কার
সেই নাকি আবার রাষ্ট্রের মানদণ্ড।


স্বাধীনতা তুমি কি বৃদ্ধ পিতার চশমার সাদা কাচ?
ভেতরে যার নোনতা চোখের জল,
নিহত মেয়ের দগ্ধ দেহের যৌতূকের চিহ্ন ।
বাইরেতে তার আইনের জাল
গোঙ্গানি কান্নার বিচার দিয়েছে,
ঐ পশুদের দল।


স্বাধীনতা তুমি কি শামসুরের সেই স্বাধীনতা ?
কাজী নজরুল আর রবীন্দ্রের সেই প্রিয় জন্মভুমি,
তবে কেন যেন  মনে হয় তুমি আজ অন্য তুমি।