কাঁচের শিশি      
               রামপ্রসাদ(হলুদ ঘাস )


মা"বাসন্তী জমিদার বাড়ির সকালের যাবতীয় কাজের শেষে ..অবশিষ্ট .ভাত- ডাল  ও অন্যান্য তরি তরকারী আনাটাই চার ছেলে এক মেয়ের,কোন ভাবে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন  !স্বামী.... নিজের  মতো গান বানিয়ে মন ভোলানো পয়সায় শুধু মনটাই ভোলায় ! খেজুর ও তাল পাতার ছাউনিতে,সূর্য ওঠা থেকে অস্ত আর চাঁদের আলোয় ভরে থাকে বাসন্তীর সোনার কুঁড়ে ঘর ! জাত পiত্  ছোঁয়াচে রোগের প্রকোপে স্কুল,পাশের বাড়ি ছোটদের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে দূরত্ব বজায় রাখতে হতো ! জাতের বড়াই কিন্তু বাসন্তীর হাতের রান্না, ঘর মোছা, পুজোর ফুল তোলার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তো না !পাঁচ ভাই বোনের বয়েসের তফাৎ 2- 3 বছরের ! বাবা  - মায়ের শাসনের অভাবে  বেড়ে ওঠা বাসন্তীর পরিবারে ছিল  অকৃত্রিম হাসি ! ছিল অল্প আহারে পেট ভর্তি জলে  মনের তৃপ্তি ! এই ভাবেই চলছিল বাসন্তীর সংসার ! শীত ,গ্রীষ্ম ,বর্ষা ঋতুর পরিবর্তনের দৃষ্টি  পড়লো সেজো ছেলে হারাধনের উপর ! পুকুরের ঝাঁপ দিতে গিয়ে পুকুর ঘাটের  ইটের আঘাতে দৃষ্টি হারাল চিরদিনের জন্যে !  এই দুর্দিনে দরিদ্রতার প্রকোপে হারাধন হারিয়ে ফেললো  তার অমূল্য দুই চোখ ! বাঁচার অবলম্বন হিসেবে ধরিয়ে  দেওয়া হয়েছিল ভিক্ষার ঝুলি,পাশে ছিলনা কেউ ,ছিলনা কোনো পথ চলার সাথী ! শেষ সম্বল অন্ধকার দুর্গম পথ চলার সাথী একমাত্র "লাঠি "! ধীরে ধীরে বাড়ছে বাসন্তীর বয়েস, কমছে কর্ম ক্ষমতা ,বাড়ছে পেটের  গহবর ! অন্যiন্য ছেলে ও মেয়ে কোন রকম পেট চলানোর জন্যে বারো মাস কাজে নিজেদের মতো বাবুদের দ্বারস্থ হয় ।
এই দিকে স্বামীর শ্বাস কষ্ট অন্য দিকে অভাব ! চিকিৎসার অভাবে স্বামীর মৃত্যু , ছেলের অন্ধত্ব ,হৃদয় ভাঙলেও মনের জোর বাসন্তীকে বাঁচিয়ে রেখেছে ! সাত বছরের হারাধন এখন চৌত্রিশ এ পৌঁছেছে ! কেমন আছিস বললেই সঙ্গে সঙ্গে ,,,,ও  মানিক তুই ! অনায়াসে চিনে ফেলতো !হেঁ আমি ভালো আছি পুরোনো দম দেওয়া ঘড়ির মতোই ! হঠাৎ বয়েসের অসুখে বাসন্তীর পরলোক গমনে সেজো ছেলে হারাধনের পায়ের তলার মাটি সরে গেল ! মেয়ের কোনো মতে কাঠুরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিয়ে হয় ! ছেলেরাও বিয়ে করে নিজের মতই থাকে  ! মা " ই ছিল এক মাত্র সম্বল! গরমে আঁচলের হাওয়া , ঘুম পাড়ানি গান, ছিল প্রখর রৌদ্রের আচ্ছাদন ! অন্ধ ভাইয়ের ভিক্ষা জীবিকায় সম্মান ক্ষুন্নের ভয়ে বিবেচক ভাইয়েরা ওদের কাছে স্থান দেননি !কেটে গেল এক বছর ,,,,,,এলো বেঁচে থাকার নতুন মোড়!
স্ব-ইচ্ছায় এক রমনী হারাধনের চিরসাথী হয়ে এলো "বাসন্তী" কুঠিরে ! সুখ এসে আছড়ে পড়লো কুঠিরের কোণায় কোণায় ! জ্বললো সন্ধ্যের বাতি, একবছরের মধ্যে কোল আলো করে এলো হারাধনের উত্তরাধিকারী !
খুঁজে পেয়েছে হারিয়ে যাওয়া আলোর রেখা ! যেখানে হাজার আশা, স্বপ্ন সব কিছু হারিয়ে গিয়েছিল ! আজ হারাধন সুখী ! এখন নেই পাতায় তৈরি কুঁড়ে ঘর ,নেই আহারে পেট ভর্তি জল ! একদিন সন্ধ্যের দিকে এলো ভীষণ জ্বর ,সাধারণ ওষুধে আর কাজ না হওয়ায় স্থানীয় স্বাস্থ‍্য কেন্দ্রে ভর্তি করে  স্ত্রী কাজল ! ধরা পড়লো সংক্রামক রোগ, ধরে রাখা গেলনা হারাধনকে ! আকাশ ভেঙে পড়লো কাজলের মাথায় !যে কাজলের নিয়তি সেই হারাধনের কপালেই বাঁধা হলো