বরাহপুরাণ(07-07-21)
রণজিৎ মাইতি
-------------
একসময় আমার লক্ষ্য ছিলো সৌরভ;
সেসব অতিকচি কলাপাতা কথা।
গলির প্রেক্টিসে ফুটওয়ার্ক থেকে চোখ পিটপিট সবেতেই আমি নকল দাদা;
উৎসাহের উপাদান হিসাবেও শুনেছি 'গলি থেকে রাজপথ'এর অজস্র মিথকথা।
সুতরাং চাগিয়ে রাখার জন্যে একান্ত ইচ্ছেঘোড়াটিই যথেষ্ট;
তাছাড়া লাগামটিও থাকে স্বপ্নসুন্দরীর চারু হাতে।


একটু বড়ো হতে,মানে-
যখন নরম কচি দুব্বো গজায় গোঁফ-দাড়িতে,সবেতেই ডোন্ট কেয়ার ভাব;
ময়ূরপুচ্ছ লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায় গড়েরমাঠে সকাল ও সন্ধ্যে;
সেই বয়সে আমিও মজলাম 'দিল তো পাগল হ্যায়' ছায়াছবির নায়কের প্রেমে।
চুলের ছাট থেকে পোশাক-আশাক,হাঁটাচলা সবেতেই শাহরুখ।
অবশ্য সেসবই অপরিণত বয়সের খেলা।


আসল খেলা শুরু হলো তারও কয়েক বছর পরে;
পরীক্ষার খাতায় লেখা লক্ষ্য আলেখ্য যখন বাস্তবের মাটিতে ফারাক আসমান-জমিন;
যেখানে মেলেনা পাণিনির ব্যকরণ,পতঞ্জলিভাষ্য
যে কল্পঘুড়ি এতোদিন আপন খেয়ালে পতপত করে উড়তো শূন্য আকাশে
সেও লাট খেতে খেতে ভোকাট্টা
মনে হয় তখনই শুরু হয় জীবননাট্যের আসল খেলা।


দেখলাম এক একটা বন্ধুতরী ভিড়ে গেলো এক এক বন্দরে
অরুণ ধরলো বাবার তেজারতি কারবার,স্বপন বাঁ-হাতের ক্যরিশমায় কর্পোরেশনের ক্লার্ক,
আশ্চর্য,ক্লাসে সবচে খারাপ ছেলে হিসেবে যার সবচে বেশি বদনাম
শিক্ষকরা যার পারফরম্যান্সে সাদৃশ্য টানতো মানবেতর জীবের
সেই তপন কর্মরত প্রয়াত বাবার চাকরি হাতিয়ে এক নামকরা অফিসের উদিয়মান সূর্য!


আর শালা এই অধম,যার টপ্ টু বটম গুডি বয়ের তকমা;
রসায়নে পোস্ট গ্রাজুয়েট হয়েও চাকরির পরীক্ষায় ফেলিওর হতে হতে পাড়ার মুদিওয়ালা 'গণশা'!


এখন সৌরভও সৌরভ ছড়ায়না ব্যক্তি আকাশে,শাহরুখও অতীত
ভুষিমালের ওজন করতে করতে বেড়ে গেছে নিজেরই ওজন;
পেল্লায় ভুঁড়ি জুড়ে গজগজ করেনা রসায়নের অলৌকিক স্বরগম
বরং সে স্থান নিয়েছে কতো ধানে কতো চালের লৌকিক গজল।


বাবা বলতেন,'মানুষ হ,পড়াশোনা দ্বারা গড়ে নে আপন ভাগ্য;
সাধনার ফসলই তো গড়পাড় রোডের উজ্জ্বল ইতিহাস।'


মানুষ হয়েছি কিনা জানিনা,তবে নিক্তিতে প্রতিনিয়ত মাপছি মানুষ-অমানুষের বর্তমান সংজ্ঞা ও সংজ্ঞার ভাগ্য।
আপনিও কি জানেন কে এর প্রকৃত নিয়ন্তা ?
কোন সুদর্শনচক্র বলে লেখা হয় অভিনব বরাহপুরাণ !