বৃত্ত 110
ঘুম (26-04-2019)
রণজিৎ মাইতি
--------------------
বারোটা বাজার আগেই আমাদের বারোটা বেজে যায়
তারপর ঘুমের সাধনা
ক্লান্তির মেডিসিন,অব্যর্থ দাওয়াই।
যদিও ভোর হওয়ার আগেই সংসার কানে কানে বলে,-- "ওঠো,জাগো - - - হে দরিদ্র ভারতবাসী,মূর্খ ভারতবাসী - - - আমার ভাই" !


সেই কোন সাতসকালে গিন্নির হাতে ঘোড়ার লাগাম;
এক কাপ লিকার চা ও দুটো বিস্কুটই সাতটা-দুটোর ভোকাল টনিক।
তখনও মেয়ে ও আমার চোখে এক আকাশ ঘুম।
ভোরের স্নিগ্ধ আলোও মনে হয় পদ্ম গোখরোর তীব্র ছোবল !
হায় শুয়ে থাকলে কি দিন চলে ?
কড়া নাড়ি বাথরুমের দরজায়,দার্শনিক চিন্তার শ্রীভূমিতে।


ভোরের স্নিগ্ধ নরম আলোয় উঠোনে স্থলপদ্মের কুঁড়িগুলো মেলে দেয় একটা একটা পাঁপড়ি;
শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ । ছায়াযুদ্ধও কি লড়ি না আমরা?  
নেমে আসে শাকচুন্নি,মামদো ও গেছো !
তাদের হাসি মুখগুলো কি নিদারুন!
যদিও মেয়ের বয়স সময়কে করে নিছক অবজ্ঞা।
তাড়াতাড়ি ফেস হয়ে নাও সোনা,স্কুল ইউনিফর্ম পরেছো? মোজা ?


ততোক্ষণে সাওয়ারের জলে ধুয়ে ফেলি বিগতের গ্লানি ও কালিমা;  
ফ্রিজের বাসি বিস্বাদ খাওয়ার ফুটতে থাকে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে।
ঠান্ডা-গরম,গরম-ঠান্ডা জীবন অতিক্রম করে আটটার কাঁটা!
তখনও মেয়ে তার পুতুল মেয়েকে নিয়ে খেলায় মগ্ন।


প্রশ্রয়ের বাঁধ ভেঙে যায়,বকুনির জবাবে জানায় মোজা জোড়া না পাওয়ার কথা;
রাগের পারদ চড়তে চড়তে সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ে গিন্নির উপর।
খুঁজতে খুঁজতে এই দুই-কামরার বাড়িটাকে মনে হয় আস্ত মহাদেশ!
রাগপ্রধান জীবনের শাস্ত্রীয় সংগীতও বড়ো করুন মনে হয়;
গলদঘর্ম হতে হতে নাকে মুখে গুঁজি সারাদিনের ফুয়েল।
এভাবেই অবিরাম বেজে যায় প্রতিদিনের স্বরলিপি সা থেকে নি,নি থেকে সা।


ছুটির দিনে এক সন্ধ্যায় একান্তে করি ক্যাবিনেট মিটিং,  
এজেন্ডা ঘুম !
ধনী ভোটে পাশ হয় অর্ডিন্যান্স,ডিনার শেষে সক্কাল সক্কাল যেতে হবে প্রিয় বিছানায়।
জীবন মানেই ইঁদুর দৌড়;অধুনা বেডরুমে যেতেও পাসপোর্ট লাগে,ভিসাও।
সুখের স্বর্গ,নন্দন কানন,প্রেমের অমরতীর্থ এই ছোট্ট কামরাটি।


টানটান বিছানায় ছেড়ে দিই ক্লান্ত শরীর।
মেয়ে সেঁটে আসে বুকে,বাবা প্লিজ,একটা গল্প।
ও ভুলেই গেছে মিটিং এর ডিসিশন,অগত্যা----
অবশ্য মা-বাবার ধমক যতোই কড়া হোক অথবা ভৎর্সনা তীব্র
শিশুরা কখনও কি দমে ?
বড়োদের নিয়ম বড়ো বিচিত্র !
'গল্প না শুনলে ঘুমই আসেনা মা। বাবা প্লিজ একটু পিঠটা - - -'


ঠিক কখন যে মনের অজান্তে মানুষ সংসারের এটেনডেন্ড হয়ে যায় !
একদিকে মেয়ের গল্প ও পিঠ চুলকুনি,অন্যদিকে বউয়ের নাসিকা গর্জন
বেজে যায় একটানা উদারা মুদারা তারায়।
  
রাত বাড়তে থাকে,আমারও বারোটা বেজে যায় ।
এই মহাজীবনও কদম কদম এগিয়ে যায় চিরঘুমের দেশে!