বৃত্ত 3 (29-08-2018)
রণজিৎ মাইতি
--------------------
শিশুটি দুপুর থেকে মুখিয়ে থাকে বিকেলের প্রত্যাশায়
মধ্যাহ্ন ভোজের পর দোতলার এক চিলতে ব্যালকনি থেকে----
বারবার তাকায় সুনীল আকাশে
উফঃ এখনও রোদের তেজ কমেনি 'মা'


এদিকে মায়ের কঠোর অনুশাসন
কেন খোকা,তোমার কি খেলনার অভাব রেখেছি ?


ছোট্ট শিশু,ঘুপচি ফ্ল্যাট বাড়ির এক চিলতে ড্রয়িংরুমে- --
টয় ট্রেন,টেডি ও খেলনা গাড়ি চালাতে চালাতে---
লন্ডভন্ড করে দেয় মায়ের সাজানো গোছানো সাধের সংসার ।
ছোটাছুটিতে ভেঙে যায় ফ্লাওয়ার ভাস
'ঝনাৎ' শব্দে মা ছুটে আসে হাতের কাজ ফেলে
খোকা,তুমি কি শান্ত হয়ে খেলতে পারো না !
দিলে তো সব তছনছ করে ,
বাবা আসুক,বলছি তোমার সব দুষ্টুমির কথা
তারপর ড্রয়িংরুম ফিরিয়ে আনে আগের জায়গায়


এদিকে বেলা গড়িয়ে বিকেল নামতেই
মায়ের চোখ এড়িয়ে শিশুটি বেরিয়ে যায় রাস্তায়
পথের ধুলোবালি,কাদামাটি,নাম না-জানা ঘাস,ফুল তাকে টানে
পাড়ার আর পাঁচটা শিশুর সাথে মহানন্দে খেলে কানামাছি,এক্কাদোক্কা
সন্ধ্যে নেমে এলে পাখিদের মতো ফিরে আসে---
চার দেওয়ালের বদ্ধ কামরায়


তখন সারা গায়ে মাখা কাদামাটি
বাথরুমে সাওয়ারের নিচে স্নান করাতে করাতে চলে মায়ের ধমক
ওই সব রিকশাওয়ালা,সবজিওয়ালী বাড়ির ছেলে মেয়েদের সাথে খেলতে তোমার লজ্জা করেনা
জানো,তোমার বাবা কত বড় অফিসার
কখনও দেখেছো ওদের বাড়ির সামনে অফিসের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে ?


অবশ্য অবোধ শিশুর মাথায় এসবের বিন্দু বিসর্গ কিছুই ঢোকে না  
কাঁদতে কাঁদতে বলে----
আমি তবে কার সাথে খেলবো মা ?


কথাটি কানে আসতেই
আমি ফিরে যাই মধু স্যারের জ্যামিতির ক্লাসে
নতুন করে চিনে নিই,---
বৃত্ত ব্যস ব্যাসার্ধ জ্যা।
স্যার,কম্পাস দিয়ে পরীক্ষার খাতায় যতোই বৃত্ত আঁকি না কেন
আদতে আমাদের সমস্ত ঘুর্ণন নিজস্ব পরিধিকে ঘিরে