ছাতা কাহিনী  (16-10-2017)
রণজিৎ মাইতি


সেই শৈশবে বাড়ির বাইরে পা রাখলেই---
সে স্কুল হোক, মামার বাড়ি বা ঠাকুর দেখা,
বাবা হাতটা ধরেই রাখতো।
নিজের মাথায় রোদ লাগলে বা বৃষ্টি পড়লেও---
আমার মাথা ঠিকই রক্ষা পেত।
তখন দুষ্টুমির বয়স,পাছে রাস্তার নিয়ম না মানি,---
টেনে নিতো নিজের দিকে,ছায়ায়।
ছাতার তলায়।


ধীরে ধীরে স্কুলের গন্ডি ছাড়িয়ে কলেজ, ইউনিভার্সিটি।
প্রতি ধাপে হাত একটু একটু করে আলগা হচ্ছে ।


যদিও বাবা চাইতো না,আমিই----।
বলতো,--ছেলে মেয়ে বাবা মায়ের চোখে চিরকাল ছোটই থাকে।


যৌবন সেকথা শুনবে কেন ! দাড়ি গোঁফ বলে দিচ্ছে আমি কি,ভোটাধিকার পেয়েছি।
ভাবতে শুরু করেছি নাগরিক।


এখন সু-নাগরিক হতে হবে,
কলেজে বিতর্কে অংশগ্রহণ,হাতে সিগারেট। ভাবার সময় কোথায়,টাকা পয়সা কোথা থেকে আসছে ।
বাড়ি ফিরলে,মা ঠিকই পেয়ে যেতো নিকোটিনের গন্ধ।
বলতো,-- বাবার বয়স হচ্ছে সে দিকে খেয়াল আছে ?
লক্ষ্য করতাম,বাবা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে,আত্মগত ভাব ।
একদিন নীরবতা ভেঙে বলল,--
পাশ টাশ তো করলে,এবার একটা চাকরির চেষ্টা করো।
চেষ্টা যে করিনি তা তো নয়,কিন্তু যা বাজার।
যাইহোক,চেষ্টা করতে করতে একটা জুটিয়ে ফেললাম ।
ওই দশটা পাঁচটা ডিউটি,
তখনও বুঝিনি,একদিন------।
চললো সেই হইহুল্লোড়,ক্লাব আড্ডা সমান তালে।
মাথার উপরে তখনও বাবার হাত।


একদিন বিনা নোটিশে বাবা চলে গেলো, কার্ডিয়াক এটাক্ট।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।


ততদিনে সম্পৃতি আমার হাত ধরে এই বাড়িতে।
মা ছেলে আর বউয়ের সংসার ।
সম্পৃতির পেটের ভেতর সাঁতার কাটছে আমার পুচকু।


পারলৌকিক কাজ মিটে যাওয়ার পর,---
একদিন সকালে বউ বাজারের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিলো।
অনেক দিনের অভ্যেস বেলা করে ওঠা।
আমি বললাম,এতো সকাল সকাল !
বউ এবার নিজের শরীরটা ভালো করে দেখে,দিল একটু মুচকি হাসি।


আমি ইঙ্গিতটা বুঝলাম ।


ও শুধু বললো,-- ভুলে যেওনা না, তুমি
এখন পরিবারের কর্তা। আমাদের মাথা ।


অভ্যাস না থাকায় বিরক্ত বোধ করলাম ।
বললাম কর্তার নিকুচি করেছে।


মা কথাটা শুনতে পেয়ে বলল,-- সম্পৃতি তো ঠিকই বলছে অর্ক, বাবা নেই।এখন তুই-ই তো আমাদের মাথার ছাতা ।


আমি অষ্ফুটে বললাম " ছাতার মাথা "


মনে হয়, চাই বা না চাই---
আমরা সবাই এভাবেই ছাতা হয়ে যাই।
কাঠের বাঁট ওয়ালা পুরনো আমলের ফুটোহীন ছাতা ।