বর্ষা যখন আসে
আলোচক--রণজিৎ মাইতি
- ---------------------
সৃষ্টি ও লয় বা ধ্বংস মনে হয় একই মুদ্রার দুই
পিঠ।যেমন জন্ম বয়ে আনে আনন্দের বার্তা তেমনই মৃত্যুতে হই মুহ্যমান।ভেসে যাই দুঃখের সাগরে । প্রকৃতির যেকোনো ঘটনার ক্ষেত্রেও মনে হয় সমান সত্য । যেমন আমরা অনেক সময় বলি শাপে বর হয়েছে আবার শাপ হয় সর্বনাশের কারণ।


এই প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়লো ।যদিও গল্পটি আলোচ্য কবিতার বিষয় বহির্ভূত ।তবু প্রসঙ্গক্রমে গল্পটি বলার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না।তখন অযোধ্যার রাজা দশরথ ছিলেন নিঃসন্তান । একদিন এক মুনি রাজার কোনও এক ভুল কাজের জন্যে অভিশাপ দেন যে পুত্রশোকে তাঁর মৃত্যু হবে।তখন রাজা দশরথ মুনির অভিশাপটিকে আশীর্বাদ হিসেবে নেন এবং আনন্দের সাগরে ভেসে জান।সুতরাং বলতে পারি একই মুদ্রার দুই পিঠের এক পিঠে সুখ,অন্য পিঠে দুঃখ । আসর বরেণ্য কবি শ্রদ্ধেয় ঘাসফুল এর কবিতা "বর্ষা যখন আসে " কবিতায় এমনই ভাবনার প্রতিধ্বনি পাই।কবি তার ভাবনাটি প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে প্রকৃতি থেকে নেন উপমা । কি সেই উপাদান ? তেমন বিশেষ কিছুই নয়,বেছে নিলেন বৃষ্টিকে।এবং কবি বললেন,


"বর্ষা যখন আসে হাসি আর কান্না সাথে আসে"


সে হাসি কান্নার শিকড় অনেক গভীরে ।
যে "শিকড়ও শোনো বুঝি মাটির সংলাপ"


আমরা প্রত্যেকে দেখেছি বৃষ্টি ।কখনও কখনও তীব্র দহন থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছি ভারি একপশলা ।আপন মনে গেয়েছি,----
"আল্লাহ্ মেঘ দে,পানি দে,ছায়া দে রে"
এবং কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি নামলে জীবনের কোনও না কোনও সময় প্রতিটি মানুষ বৃষ্টির জলে ভিজে জুড়িয়েছি দেহ ও মনের জ্বালা ।মনে হয় এই পৃথিবীতে এমন মানুষ দুর্লভ যিনি একবারের জন্যেও বৃষ্টির জলে ভেজেননি।যদি না ভিজে থাকেন বলতে হয় সে জন দুর্ভাগা । এই বৃষ্টির জল পৃথিবীকে করে শস্য শ্যামলা, সুপ্ত বীজের ঘুম ভাঙে সোহাগী স্পর্শে ।


বৃষ্টি কি শুধু পৃথিবীকে শস্য শ্যামলাই করে ? উল্টো পিঠে কি কিছু নেই ? কবি সে ছবিও এঁকেছেন নিপুণ দক্ষতায়।সেখানে আনন্দের চেয়ে দুঃখের পাল্লা ভারী । কবি বললেন,---


"আবার মায়ের কোলের শিশু ভাসিয়ে দিয়ে
বর্ষা তার বাজিয়ে যায় করুন নুপুর"


প্রতি বছরই পৃথিবী নামক ভূখণ্ডের কোথাও না কোথাও ভেসে যায় অতিবৃষ্টিতে। প্রাণহানি, শস্যহানি,ঘরবাড়ি টেনে নিয়ে যায় বন্যার ভয়াবহ জলস্রোত।গবাদি পশু,পাখ-পাখালি ঢলে পড়ে মৃত্যুর কবলে।ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে নিজের এবং সন্তানের মুখে অন্ন তুলে দিতে না পেরে গর্ভধারিণী হন যন্ত্রণা ক্লিষ্ট ।


এই নিদারুণ বাস্তবতাই কবিতার উপজীব্য ।মূলত এটি একটি রূপক কবিতা । যে কবিতা জীবনের কথা বলে। আলো- অন্ধকার,সুখ-দুঃখ সবই জীবনের অঙ্গ ।চলার পথে উভয়কে নিয়েই আমাদের এই পথ চলা। যেমন বৃষ্টি বয়ে আনে সৃষ্টির বার্তা তেমনই তার প্রলয়ঙ্করী ভয়াল রূপে মানুষ হন দিশেহারা ।


এমন একটি সুন্দর কবিতা উপহার দেওয়ার জন্যে প্রিয় কবিকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই । কলম চলুক এইভাবে ।শুভেচ্ছাসহ শুভকামনা রইলো


বিদ্র--কবি সমীপে আমার ব্যক্তিগত বার্তা
- ----------------------------------
প্রিয় কবিকে একটি কথা বলতে চাই,যদিও এটি আমার ব্যক্তিগত ভাবনা ।আপনার কবিতাটি গদ্যছন্দে লেখা।গদ্যছন্দেরও মাত্রা থাকে ।যা কবিতার ভাবকে সম্পূর্ণ করে। প্রথম লাইনে "সাথে সাথে" হলে আমার মনে হয় আপনার ভাব ও কবিতার গতিময়তা সম্পূর্ণ হতো।
আর "বর্ষা তার বাজিয়ে যায় করুন নুপুর"
এখানে "তার"শব্দটির কি খুব প্রয়োজন আছে ? কবিকে ভাবতে অনুরোধ করবো।আবারও শুভেচ্ছা জানাই