দিনের আকাশ বনাম রাতের আকাশ
রণজিৎ মাইতি
-------------
মানুষ বড়ো বিচিত্র জীব।তার ভাবনার আকাশ আরও বিচিত্র।সেই ভাবনা যখনই যুক্তি বুদ্ধির বাইরে বিচরণ করে তখন আমার বলি কল্পনা । কল্পনার আকাশ সীমা পরিসীমাহীন।তার কোনও পাসপোর্ট,ভিসা লাগে না। কখনও সে পাখি হয়ে উড়ে যায় এক দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আর একটা দেশের সীমানায়।কখনও  ফুল হতে চায়,কখনও হতে চায় সুনীল আকাশ।আবার কখনও কাছের মানুষটিকে দেখতে চায় তার নিজস্ব কল্পনার রঙে রঙ মিশিয়ে।হয়তো যা বাস্তবে কক্ষনো সম্ভবপর নয়। তবু কখনও কি মানুষ রাশ টানে কল্পনা শক্তির? কবি J R Agnesh তাঁর "দিনের আকাশ/রাতের আকাশ"কবিতায় তেমনই একটি আকাশ রচনার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলেন।কি সেই আকাশ ? শুরুতেই কবি বললেন,----


"রাতের আকাশ তুমি নারী হও"
যদি নারী হও---
"তোমাকে পরাব  উজ্জ্বল তারা খচিত কালো শাড়ি"


এটা কি কবির আবেদন,নাকি অনুরোধ? আবার আবদারও হতে পারে । কবির প্রথম বক্তব্যটি যদি আবেদন হয় দ্বিতীয় বক্তব্যটি অবশ্যই ইচ্ছে বা আকাঙ্ক্ষা বলা যায়।যাইহোক তিনি কিন্তু বলেননি নারী তুমি আকাশ হও।কারণ কবি জানেন নারী নিজেই একটি স্বতন্ত্র আকাশ ।সে আকাশ কেমন? না সেই আকাশ স্নেহ,মায়া-মমতা ও ত্যাগে ভাস্বর ।তাই মনে হয় কবি রাতের আকাশেই নারী নামক মহান আকাশ হওয়ার আবেদন করলেন ।কবির এই ভাবনা থেকে স্পষ্ট তিনি রাতের আকাশ সম্পর্কে তিতিবিরক্ত।মনে হয় তিনি "রাতের আকাশ" বলতে রূপকে বর্তমান সমাজ ও সময়কে নির্দেশ করেছেন ।এটা এমন সময় যখন ভাই খেলছে ভাইয়ের রক্ত নিয়ে হোলি,চারপাশে খুন ধর্ষণ রাহাজানি চুরিতে কলুষিত । এমন সময় একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এমন আবেদন স্বাভাবিক নয় কি ? হে অন্ধকার সমাজ বেরিয়ে এসো তোমার পথ থেকে ।হও নারীর মতো সংবেদনশীল আকাশ । নারী অর্থাত্ প্রকৃতি,সে স্বর্বংসহা।স্নেহ মায়া মমতার আধার।তাই তিনি রাতের আকাশকেই নারী হওয়ার আবদার করলেন ।তখন আকাশ ও নারী সমাহার।এখন কবির ইচ্ছে নারী নামক আকাশকে সাজাবেন তারকাখচিত কালো শাড়ি। কেন কালো শাড়ি পরাতে চান কবি ? কালো শাড়ি তো শোকের চিহ্ন বহন করে । হয়তো তা অতীতের ঘুণে ধরা সমাজের চিহ্ন স্বরূপ অক্ষয় থাক কবি তাই চান। আর বুকে বিচ্ছুরিত হবে মায়াবী জোৎস্না। আহা এমন রূপবতী নারী হওয়ার লোভ কেউ কি এড়িয়ে যেতে পারেন? এমন নারীর ললাটে কি একটা যুত্সই টিপ না হলে মানায় ! তাই কবি উদিত পূর্ণিমার চাঁদকেই সুদীর্ঘ ললাটের টিপ হিসাবে পরিয়ে দিলেন । এতোটাই ভাস্বর যেনো চাঁদটি নারীর তৃতীয় নয়ন।


কবি জানেন শুধু নারী শক্তিতেই এই পৃথিবী আকাশ সুন্দর হবেনা। গড়াবে না সমাজ নামক কলের চাকা।তাই কবি সূর্য নামক মহাতেজার কাছেও রাখলেন কাতর আবেদন ।বললেন---
      
"সূর্য তুমি হও নর"।


অর্থাত্ পুরুষের দেহ মন হোক সূর্যের মতো উজ্জ্বল। প্রদীপ্ত হোক কর্মময় জীবন ।তপ্ত প্রখরতায় কেটে যাক মেঘ,সরে যাক কালবৈশাখী ঝড়।নীলাকাশ হোক দুগ্ধফেনিনিভ।


অর্থাত্ কবির ভাবনায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাবনারই প্রতিধ্বনি পেলাম ।
"বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার রচিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর।"
এখানে কবি J R Agnesh ও চান নারী পুরুষ উভয়ের শক্তিতে দিন রাতের আকাশ হোক চির উজ্জ্বল ।


সুন্দর রূপক ধর্মী কবিতা । চমত্কার নামকরণ । যা পাঠে পাঠক হৃদয়ে দোলা দেয় ।তাই এমন একটি সুন্দর কবিতার রচয়িতা কবিকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে জানাই গভীর শুভেচ্ছা ও এক আকাশ ভালোবাসা ।এবং আগামীতে কবির সোনা ঝরা কলম উজ্জ্বল হোক এমনই সরস ফসলে এই আশাবাদ পোষণ করি। শুভকামনা রইলো ।


বি.দ্র.- আমি সকালে পাঠ করেছিলাম । সেই পাঠ থেকেই আমার আলোচনা । এখন কবি তাঁর কবিতায় কিছু কিছু সংশোধন করেছেন দেখলাম । তাই পাঠক কোটেড লাইনে শব্দের পরিবর্তন দেখলে বুঝবেন তা কবির দ্বারা সংঘটিত ।