জল হয়ে ওঠা (কবিতার আড়ালে কবি এঁকেছেন গণতান্ত্রিকরূপ ও তার পরিসর)
কবি--স্বপন পাল
আলোচক-রণজিৎ মাইতি
--------------------------------------
তুমি তো জলের মতো হতে চেয়েছিলে,
কে চেনেনা জল ? নতমুখ নারীটির মতো
পাত্র ভেদে নিজেকে আকার দেয়।
কে চেনেনা জল, নাবালে গড়িয়ে যায়,
এক যদি সূর্য হাত ধরে, মেঘ হয়ে উড়ে যাবে,
সূর্য ঢেকে দেবে মেঘ কখনো প্রশ্রয়ে,
জলের মতোই যদি হতে চাও, আগে সূর্য ডাকো।
তোমাকে জলের মতো হতে বলে রাতদিন
কানে যারা মন্ত্র দেয়, বলে দিও শুদ্ধতা
তোমার জন্য নয়, অশালীন শোনালো কি ?
জলের অনুর কাছে খোঁজ নাও
কতো তার সহচর মিলেমিশে বয়ে চলে।
শুদ্ধতার নামে যদি তাদের সরাও
জল তবে বিপদ ঘটাবে, পঙ্গু করে রেখে যাবে
শরীর সংসার, জল এতো মিশতে ভালবাসে,
শরীরের সংগঠন ভেঙ্গে কারা ওর সহচর হবে
জল জানে, অতিরিক্ত শুদ্ধতা
চেয়োনা জলের কাছে, জল বড় মিশতে ভালবাসে,
জলের মতন হওয়া তাই খুব সহজ ভেবোনা।
                              ***

আমরা প্রায়ই শিশুদের জিজ্ঞেস করি,বড়ো হয়ে তুমি কি হতে চাও খোকা? কিংবা খুকি তুমি কি পাখি হবে?নিষ্পাপ সহজ সরল শিশুর সোজাসাপ্টা জবাব বাবার মতো,কেউ বলে মায়ের মতো হতে চাই।যেহেতু শিশুর বৃত্ত মা-বাবাকে ঘিরে আবর্তিত সুতরাং শৈশবে তার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে বাবা-মা।সেই ছোট্ট শিশুটি যখন সবে পা রেখেছে বাইরের জগতে তখনই পরিবর্তন হয়ে গেছে তার পূর্বতন লক্ষ্য।কেউ বলছে ডাক্তার হতে চাই,কেউ ইঞ্জিনিয়ার আবার কেউ কেউ শিক্ষক বা উকিল।অথচ কি আশ্চর্য দেখুন,বর্তমান সময়ে কেউ বলেনা মানুষ হতে চাই!ইঁদুর দৌড়ের এই যুগে শিশুরাও সামিল সাফল্য নামক ঘোড়াদৌড়ে।অধুনা তাই শিশুদের আকাশ হতে চাওয়ায় বাসনা বাতুলতামাত্র,কিংবা মেঘ বৃষ্টি জল হাওয়া প্রজাপতি রামধনু ও শূন্য তেপান্তরের আশা করাও অলীককল্পনা।যদি কেউ ভুল করেও বলে আমি জল কিংবা আগুন হতে চাই,তখন অবাক হওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকেনা এই ব্যক্তিকন্দ্রীকতা ও স্বার্থসর্বস্বতার যুগে।

অবশ্য 'জল হয়ে ওঠা' কবিতার স্রষ্টা দার্শনিককবি স্বপন পাল অবাক হননা।বরং স্বগতোক্তির সুরে বলেন জল হতে চাও ভারি উত্তম কথা,তবে জল চেনা ভীষণ জরুরি।সেই প্রসঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন জলধর্ম। বলেন,--জল ঠিক

"নতমুখ নারীটির মতো
পাত্র ভেদে নিজেকে আকার দেয়।
কে চেনেনা জল,নাবালে গড়িয়ে যায়,"

জলের উপমায় নতমুখ নারীর প্রসঙ্গ টেনে প্রবুদ্ধ কবি যেমন একদিকে চেনালেন সমাজে নারীর অবস্থান,তেমনি অন্যদিকে চেনালেন জলধর্ম।যে কথা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও সমর্থন যোগ্য। যার আকার নির্ভর করে পাত্রভেদে এবং স্রোতধারা সর্বদা নাবালে।যা জীবনভর পতনোন্মুখ,এবং পরিসরটি হলো জীবন নামক মোহনা অতিক্রম করে মরণ নামক মহাসাগর ছোঁয়া পর্যন্ত নির্জন পথরেখা ।

সমাজে নারীর অবস্থানও তো তাই।সে যখন বাবার বাড়িতে থাকে তখন তার আকার একরূপ,আবার শ্বশুর বাড়িতে ভিন্ন আর একরূপে।যিনি শ্বশুরকুলের কুললক্ষ্মী স্বরূপিনী,বাবার বাড়িতে সেই নারীরূপ জল কেবলই বাড়ির মেয়ে ।ঠিক যেমন পুকুর ও গঙ্গা জলের পার্থক্য।

অবশ্য এখানে কবির উদ্দেশ্য নিছক নারীকে চেনানো নয়,কিংবা সমাজ ও নারীর সম্পর্কের রসায়ন কি তা চেনোনো।বরং যে মানুষটি জল হতে চায়,তাকে বাস্তব উপমার মধ্য দিয়ে জলের স্বরূপ চেনানোই কবির উদ্যেশ্য।যেহেতু প্রত্যক্ষ উপমা মানুষকে পৌঁছে দেয় চেতনার মর্মমূলে।সেদিক থেকে বলা যায় জল চেনাতে নারীর উপমাটি যথাযথ এবং উপমার প্রয়োগে কবির দক্ষতাও প্রশ্নাতীত।

তবে জল সম্পর্কে কবির এই বিক্ষণ সম্পূর্ণ জলচরিত নয়,বরং আংশিক।অংশ দিয়ে কখনোই সমগ্রকে ধরা যায়না।
বিজ্ঞানমনস্ক বিজ্ঞকবি জানেন জলের প্রকৃত রূপ আসলে ত্রিমাত্রিক।যখন কঠিন তখন সে বরফ,তরল রূপে পাই পেয় জলকে,আর যখন সে উদ্বায়ী তখন সে বাষ্পরূপে উড্ডিন।যার আশ্রয় হলো বলাহক অর্থাৎ মেঘ।সমগ্র আকাশ জুড়ে যার ব্যপ্তি।যার ভেতরে লুকিয়ে আছে রামধনু রহস্য।

রহস্যের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে কবি বুঝলেন,এই কম্মটি নিছক একা জলের নয়।যে সহযোগী মহাশক্তিমান বীরপুঙ্গব এর নিয়ন্তা,তিনি হলেন সাক্ষাৎ সূর্যদেব।যার করস্পর্শে জলের এই রূপ পরিবর্তন।কবির এই দার্শনিক বিক্ষা যা তাঁর কাছে মনে হয়েছে সত্য ও চিরন্তন,তা তিনি বলেও ফেললেন অকপটে।

"এক যদি সূর্য হাত ধরে,মেঘ হয়ে উড়ে যাবে,
সূর্য ঢেকে দেবে মেঘ কখনো প্রশ্রয়ে,"

সত্যিই তো,প্রশ্রয় ছাড়া কখনও কি মহাশক্তিমানকে ঢাকা যায়?এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে  Perssy Bysshe shelley র বিখ্যাত কবিতা  'The cloud'এর একটি লাইন।
"l change,but l can't die"
এই হলো জল।যা নম্রা নারীর মতো সূর্যের প্রশ্রয়ে রূপ পরিবর্তন করে মাত্র।কখনো তাকে ঢেকে দেয়,কিন্তু তার মৃত্যু নেই।কারণ পৃথিবীতে আবার ফিরে আসে বৃষ্টি রূপে।যার গতিপথ নাবালে।গন্তব্যের পথে প্রতিনিয়ত সিক্ত করে রুক্ষ অববাহিকা।

আসলে মাত্রাবোধে জল এতোই উদার যে তার নিজস্ব কোনো জলচল নেই।তাই শ্রেণী বর্ণ ধর্মের উর্দ্ধে উঠে গা ভাসিয়ে দেয় সমাজের উচ্চবিভব থেকে এক্কেবারে নিম্নবিভবে।যে প্রান্তিক মানুষটি সবচেয়ে বেশি দুঃখে-কষ্টে আছেন তার দরজায় দাঁড়িয়ে বলতে পারে কেমন আছেন দাদা?জেনো আমি তোমাদেরই লোক,তোমাদের আত্মার আত্মা,একান্ত আপনজন।

এইভাবে জলের স্বরূপ চেনাতে গিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি কবি অকপটে এও বললেন,--

"যদি জলের মতোই হতে চাও,আগে সূর্য ডাকো।"

অর্থাৎ সূর্য বন্দনার মধ্যেই জলরূপী নারীর উত্তোরণ।বা বলা যায় উল্টোটাও একই ভাবে সত্য।ঘোরাও টারবাইন শক্তি আরাধনার মধ্য দিয়ে,কিংবা গড়াও স্টীম ইঞ্জিনের চাকা।প্রজ্ঞার আর এক নামই তো আসলে সুদর্শনচক্র।জল সেখানেই শান্ত স্থির,যেখানে প্রজ্ঞা অন্তঃসলিলা ও গগনচুম্বী।এমনকি উথাল পাথাল তরঙ্গের কারণও কিন্তু গভীর প্রমা।সুতরাং জল হতে চাইলে আগে সেরে নিতে হবে সবিনয় সূর্যপ্রণাম,আগুনের দেবতার আরাধনা।

এই পর্যন্ত বলার পর কবি একটু ভিন্ন পথে হাঁটলেন,যে পথটিও আসলে অকপটে বলে গেলো সেই জলেরই কথা।

বললেন-বাছা,জল হতে চাও ভালো কথা,কিংবা "তোমাকে জলের মতো হতে বলে রাতদিন
কানে যারা মন্ত্র দেয়," অর্থাৎ রাতদিন Insists করে তাদের বলে দিও-

"শুদ্ধতা তোমার জন্য নয়,"

এই পর্যন্ত একনাগাড়ে বলে কবি একটু দ্বিধাগ্রস্ত হলেন,অবশ্য এই দ্বিধা কবির নয়।চেতনশীল কবি জানেন জলের স্বরূপ,তার শারীরিক সংগঠন।কিন্তু যখনই তিনি সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন তখনই তাঁকে ভাবতে হয় আত্মবোধের কথাটি।কারণ সাধারণের বোধে নিষ্কলুষ গঙ্গার পবিত্রতা আজন্ম প্রথিত,সেই জলকে যদি কেউ আগ বাড়িয়ে বলেন তা শুদ্ধ নয়,মানে অশুদ্ধ। তখন কি চরম আঘাতপ্রাপ্ত  হয় না সাধারণ মানুষের বিশ্বাস?

কিন্তু বাস্তবকে অস্বীকার করতে পারেন না বিদগ্ধ কবি।তিনি জানেন গঙ্গার পবিত্রতা উপর উপর,আসলে সে নিজে পতিতপাবন।পাপীতাপীদের নির্দ্বিধায় টেনে নেয় আপন শান্ত নির্লিপ্ত হৃদয়ে।শীতল জ্ঞানবারিতে ডুবে পাপীরা পবিত্র হলেও আদতে তাদের কলুষ ধারণ করে গঙ্গা নিজে হয় কলুষিত।

এই সত্য জেনেও কবি তাদের কাছে প্রশ্ন করেন,আমার কথাটি "অশালীন শোনালো কি ?"
প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়ার কারণ,কারুর ভেতর কবির কথাগুলি অশালীন মনে হতেই পারে।কবিও তা ভালোই জানেন,তাই তেমন দোষে দুষ্ট হওয়ার আগেই স্বপক্ষে স্বতঃপ্রণোদিত যুতসই যুক্তি দিয়ে তা খণ্ডন করলেন কবি নিজেই।সেজন্য কবি ডুব দিলেন গভীর জলের তলদেশে।ঢুকলেন জলের শরীরী সংগঠক অনু-পরমানুর অভ্যন্তরে।যা আসলে বিজ্ঞানেরই কথা।একমাত্র আনাড়ি ছাড়া যার বিরুদ্ধে ভিন্নস্বরের অবকাশ কারুরই নেই।

এবার বিরুদ্ধ মত খণ্ডনের জন্যে কবি বললেন,--
যদি অশালীন শোনায় আমার কথাটি,তবে--

"জলের অনুর কাছে খোঁজ নাও"

তত্ত্বতালাশ করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে--

"কতো তার সহচর মিলেমিশে বয়ে চলে।"

বহমান সমাজের দিকে তাকালেই বোঝা যায় গণতান্ত্রিক জলের আদল।তার তরল শরীরে(  অনু-পরমানুতে) একদিকে যেমন মিশে থাকে শিক্ষিত ভদ্র সভ্য সৎ মিঁয়া,তেমনি মিশে থাকে চোর গুণ্ডা বাটপাড়।এরাই প্রকৃত অর্থে জলের সহচর।জলগণতন্ত্রের স্তম্ভস্বরূপ।

তাই কবি এবার বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের শোনালেন সাবধানবানী-

"শুদ্ধতার নামে যদি তাদের সরাও
জল তবে বিপদ ঘটাবে,"

কি সেই বিপদ?এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেলো কবিগুরুর লেখা "গান্ধারীর আবেদন" নাটীকায় অহঙ্কারী দুর্যোধনের একটি সংলাপ।যা আসলে রচয়িতার নিজস্ব বিক্ষণ।কথাটি এই-

"লোক সমাজের মাঝে সমকক্ষ জন
সহায় সুহৃদ রূপে নির্ভর বন্ধন।"

অর্থাৎ আমজনতা জলের অনু-পরমাণুর মতো একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত।যে সংগঠন ভেঙে ফেলা মানেই জল রূপ গণতন্ত্রের অস্তিত্ব বিপন্ন।সুতরাং শুদ্ধতার প্রশ্ন তুলে জলকে আলাদা করার ভাবনা বাতুলতা মাত্র।যা অলীক কল্পনা ছাড়া কিছু নয়।যা বিপদের কারণ।

কি সেই বিপদ সেটুকুও কবি অকপটে জানাতে ভুললেন না ।

"পঙ্গু করে রেখে যাবে
শরীর সংসার,"

কারণ প্রবুদ্ধ কবি জানেন স্বভাবের বিরুদ্ধে কোন কিছু কৃত্রিমভাবে আরোপ মানেই তা অস্বাভাবিকতা।কোনো সিস্টেম তখনই স্থিতাবস্থায় ঘেরে যখন সে প্রকৃতিগত।এবং যা কিছু প্রকৃতিগত সেটাই তার স্বভাব।সুতরাং কবি ভাবিত হয়ে পড়েন সমাজ সংসারের সুস্থতা নিয়ে।সমাজ সংসারের পঙ্গুত্ব কে চায়?তাছাড়া তিনি জানেন এখন এটাই তো বাস্তব জলধর্ম--

"জল এতো মিশতে ভালবাসে,"

যেমন সাধারণ মানুষ ভালোবাসে একে অপরের নির্ভর বন্ধন হয়ে জলের অনু-পরমানুর মতো সঙ্গবদ্ধ থাকতে,তেমনই হলো জলস্বভাব।

সুতরাং "শরীরের সংগঠন ভেঙ্গে কারা ওর সহচর হবে জল জানে,"

ঠিক রতনে রতন চেনার মতো ব্যপার।আসলে এই কথাটির মধ্য দিয়ে কবি আধুনিক সমাজ সংসারের দিকে ছুঁড়ে দিলেন সুক্ষ ব্যঙ্গ।বুঝে নেওয়ার ভারটিও সম্ভবত কেনারাম বেচিরামের উপর ছেয়ে দিয়ে নিজে ফিরে গেলেন মৌলিক স্বত্বায়। তারপর কবি আবারও বললেন--

"অতিরিক্ত শুদ্ধতা চেয়োনা জলের কাছে,"

কারণ কানা-খোঁড়া,কিংবা যেকোনো প্রফেসনের মানুষ তার কাছে স্বাগত।তার কোনো ছুতমার্গ নেই।তাই আবারও বললেন--

"জল বড় মিশতে ভালবাসে,"

কার সাথে মিশতে ভালোবাসে?জল জলের সাথে,সুরের সাথে,সৌন্দর্যের সাথে,সর্বোপরি জীবনের সাথে। অর্থাৎ জলকে রূপক হিসেবে সামনে এনে প্রকারান্তরে কবি বলে গেলেন মানুষকেও মিশতে হবে মানুষের সাথে।একে অপরের সাহচর্যে বাঁচার নামই তো জীবন।তবেই মনুষ্য জীবনও পাবে জলের মতো স্বার্থক খরস্রোত।

তাই সবশেষে যারা হৃদয়ে জলধর্ম ধারণ করে বাঁচতে চান,কিংবা বাঁচার ইচ্ছা প্রকাশ করেন কবি তাদের মনে করিয়ে দিলেন--

"জলের মতন হওয়া তাই খুব সহজ ভেবোনা।"

স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠে আসে কেনো সহজ নয় জল হওয়া?কারণ বর্তমান ভোগবাদী সমাজে মানুষ এতোটাই ব্যক্তিকেন্দ্রীক যে সে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ,নিজের ভালো-মন্দ ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেনা,সেখানে জলজীবন সত্যিই বড়ো কঠিন এবং অভাবনীয়।যিনি সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে থাকতে পারেন তিনি তো প্রকৃত গণতান্ত্রিক মানুষ।

অর্থাৎ কবির শেষ বক্তব্যে পেলাম গণতন্ত্রের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত।যা সমাজের বর্তমান দাবী।একমাত্র জলই পারে সেই দাবী পূরণ করতে।তাই কবি নির্দিধায় জানিয়ে গেলেন জল হওয়া মোটেই সোজা নয়।

গণতান্ত্রিক জলের নামে ভণ্ডামি চলতে পারে,যা বর্তমান সমাজে চলছেও। কিন্তু গণতন্ত্রের ধারকবাহক ও তার একমাত্র নজির জল হওয়া বড্ড কঠিন।যা রপ্ত করতে হয় নিগুঢ় চর্চা ও গভীর অনুশীলনের মাধ্যমে।ধীশক্তির বিকাশই পারে উদার গণতান্ত্রিক পরিসর রচনা করতে।যা একমাত্র জলেরই আছে।

কবিতার বোধ,বিস্তার,কবির বিজ্ঞানমনস্কতা ও যথাযথ শব্দের প্রয়োগ কবিতাটিকে একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।যেহেতু কবিতাটি জল অর্থাৎ জীবন ও সমাজের শরীরী সংগঠন নিয়ে ভাবিয়ে তোলো পাঠককে,সুতরাং নামকরণটিও যথার্থ।

সুন্দর কবিতা।কবিতায় উপমা,রূপকের ব্যবহার,যুক্তিবোধ ও নির্মাণটিও অসাধারন।বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কবি যেভাবে মেলে ধরেছেন এক একটা যুক্তি তা মনে করিয়ে দেয় শৈশবে শেখা বীজগণীত।ঠিক a=b,b=c,c=d হলে a ও c, a ও d কিংবা b ও d এর সম্পর্ক কি হবে নির্ণয় করার মতো ব্যপার।যেমন এখানেও আমরা কবির যুক্তির সোপানে চড়ে পৌঁছে গেলাম জল, নারী ও সমাজের মধ্যেকার সম্পর্কের গভীরে।জল কিভাবে,কতোটা ভালোবাসে সহচর রক্তনদীর অকৃত্রিমধারা।

কবিতার সবচেয়ে যে বিষয়টি বেশি স্পর্শ করলো তা হলো ড্রমাটিক মনোলগ।কবি নিজেই প্রশ্নকর্তা আবার যুক্তিযুক্ত জবাবটিও দিয়েছেন কবি স্বয়ং।অথচ পাঠ শেষে পাঠকের মনে হবে তার উথ্বাপিত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কোনও বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাশীল মানুষ।এবং যে জবাবের আড়ালে নতুন কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই।

এমন একটি সুন্দর কবিতা উপহার দেওয়ার জন্যে প্রিয় প্রবুদ্ধ কবিকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই।কবির কলম উত্তরোত্তর আরও শানিত হোক এই কামনা করি।