জীবন সমৃদ্ধ কবিতার অন্তরাত্মায় উঠে এসেছে বাস্তব সমাজচিত্র
---------------*------------------
'এক ভাগ ডাঙায়'
রচয়িতা কবি--কান্তিময় ভট্টাচার্য
আলোচক---রণজিৎ মাইতি
......................................
পৃথিবীতে কান্না বড়ো বেশি
কাঁদতে কাঁদতে কান্নাজল
দখল কোরে নিয়েছে পৃথিবীর তিন ভাগ


এক ভাগ ডাঙায় শুয়ে আছে খিদে-দারিদ্র্য
তাদের জোর কোরে সরিয়ে দিচ্ছে কর্পোরেট হাত
হা-হা হাসির একশো তলা বাড়ি


পৃথিবীটা কার ? রাজনীতির ? হিংসার ?
জাতি-দাংগার ?


তবে প্রেম নয় কেন ?
কেন লালসার শিকার হবে বৃক্ষ-বায়ু-আকাশ
কেন ধ্বংসের আনন্দ উত্তর থেকে দক্ষিণে
পুব থেকে পশ্চিমে
আগুন অহংকার নিয়ে হেঁটে বেড়াবে


আর আমরা রক্তহীন সমাজ বয়ে বেড়াবো
ক্রীতদাসের মতো জো-হুঁজুর, নিষ্ঠুর হাততালি


----------
কিছু কিছু কথা বিদীর্ণ করে হৃদয়,তেমনই কিছু কিছু সুর।আবার কিছু কিছু কথা ও সুর ভাসিয়ে নিয়ে যায় আনন্দ সাগরে।তবে কথা ও সুর উভয়কেই হতে হয় সত্য।কারণ কাল্পনিক চরিত্র বিনোদনের মাধ্যম হতে পারে,কিন্তু রূপালী পর্দার অন্তরালে তা চিরকাল অবাস্তব।তাই তেমন ঘটনা মানুষকে সাময়িক আবেগবিহ্বল করতে পারে,অর্থাত্ কান্নার বিষয় হলে যেমন কাঁদাতে পারে,তেমনই আনন্দ বা খুশির বিষয় হলে মুখে ফোটাতে পারে তাৎক্ষণিক হাসি। কিন্তু এসবের কখনও দীর্ঘ মেয়াদি স্থায়ীত্ব নেই।অবশ্য শ্রদ্ধেয় কবি কান্তিময় ভট্টাচার্য তাঁর রচিত 'এক ভাগ ডাঙায়' নামক কবিতায় যে চিত্রনাট্য রচনা করলেন তার প্রভাব সুদূর প্রসারী।কারণ তাঁর গল্পের বিষয় ছুঁয়ে আছে সমগ্র পৃথিবীর মাটি।সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে সেই মাটি কেমন?তা কি নরম তুলতুলে,ফসলের উপযোগী,নাকি রুক্ষ কাঁকুরে ?অবশ্য আমাদের সব কৌতুহলের নিরসন করেন কবি স্বয়ং।কারণ ভূমিপুত্র হিসেবে মরুভূমিকথা ক্রমেলক যতো ভালো বলতে পারবে ততোটা ভালো কি বলতে পারবে শাখামৃগ?আবার শাখামৃগ যতোটা জানবে গাছেদের শ্বাস প্রশ্বাস,পাতার মর্মরধ্বনি, ততোটা কি বলতে পারবে জলজ নীলতিমি?সুতরাং কবির 'এক ভাগ ডাঙায়' কবিতায় আশা করতেই পারি কবির বর্ণিত চিত্রনাট্য সম্পূর্ণ বাস্তব চিত্রনাট্য।কারণ কবির চারণভূমিও ওই তিন ভাগ জল ও একভাগ ভাঙা নিয়ে আবর্তিত।


প্রথম দুটি স্তবকে উঠে এসেছে কবিদর্শন।কবি দেখলেন খণ্ড চারণভূমির তিন ভাগ এমনিতেই জলমগ্ন কান্নাজলে,বাদবাকি একভাগ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য পীড়িত।স্বতঃই ভেতরে ভেতরে উৎসুক হয়ে উঠি কবি চিত্রিত স্থিরচিত্রের আত্মার সন্ধানে।কোথায় কতোটা জলযন্ত্রনা ও কোথায় যন্ত্রণাময় মৃগতৃষিকা!কোথায় এদের উৎসমুখ?ক্ষুধা-দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করতে করতে সেখানে কি ছিটেফোঁটা কান্নাজলও অবশিষ্ট নেই?বিদগ্ধ কবি শুরুতেই চোখের সামনে যে ছবি মেলে ধরলেন তাতেই আমাদের আত্মারাম খাঁচাছাড়া।কি সেই ছবি?দেখুন নিপুণ শব্দফুলে কিভাবে এঁকে দিলেন সেই ছবি।আর আমরা পাঠক হিসেবে শব্দফুলের  ঘ্রাণে হলাম স্পষ্টত আহত।সত্যিই কি নিদারুণ পরিনতি তিন ভাগ জলমগ্ন ও এক ভাগ ডাঙা এই পৃথিবী নামক গ্রহটির ।কবি তাঁর দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে বললেন ---


"পৃথিবীতে কান্না বড়ো বেশি
কাঁদতে কাঁদতে কান্নাজল
দখল কোরে নিয়েছে পৃথিবীর তিন ভাগ"


দেখুন বাস্তব থেকে উঠে আসা কবির এই বিবৃতি যেনো আমাদেরও ভিজেয়ে দিলো কান্নাজলে।আসলে কবির বিবৃতির একটি বর্ণও যে মিথ্যে নয়,তাই অবলীলায় তিনি বলে গেলেন।এবং তাঁর বিক্ষা এতোটাই নিঃসন্দেহ যে তাই তিনি অকপটও।এই অকপটতা ছুঁয়ে যায় পাঠক অন্তর।   অন্ততঃ একদিকে ইতিহাস ও অন্যদিকে ভূগোলের শিক্ষাও তো সেই কথাই বলে যায়।সত্যিই এই পৃথিবীতে সুখের চেয়ে দুঃখের পাল্লা অনেক ভারি।হয়তো তা তিন ভাগের বেশিও হতে পারে,কিন্তু কবি এতোটাই সাবধানী নিছক বিতর্কে না জড়িয়ে জলমগ্ন পৃথিবীর তিন ভাগকেই তুল্যমূল্য করলেন দুঃখ সাগরের সঙ্গে।কারণ তিনি জানেন এই তিন তিনটে ভাগ মনুষ্য জীবনের ক্ষেত্রে খুব একটা কম নয়।একশো বছর আয়ু ধরলে তার পঁচাত্তর বছর যদি দুঃখে কেটে যায় তবে জীবনের কতোটুকু অংশ তোলা থাকে সুখের জন্যে !বাদবাকি পঁচিশ বছরের মধ্যে শৈশবই তো অর্ধেক,যে স্মৃতি বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যায় জীবন থেকে।সুতরাং সুখ নিতান্তই অল্প,কিংবা মহাজীবন ও মহাকালের নিরিখে নেই বললেই চলে।সুতরাং কবির বিক্ষণ এক্কেবারে যথার্থ,সত্যিই 'পৃথিবীতে কান্না বড়ো বেশি'।কতোটা বেশি?না,যা দখল করে নিয়েছে জীবন নামক ভুবনডাঙার তিন ভাগ,অর্থাত্ জীবনের বারোআনা!


এখন রচয়িতা কবির জীবনানুভূতির সাথে একবার মিলেয়ে দেখুন আপনার অনুভূতি,পরিষ্কার হয়ে যাবে প্রিয় কবির চিত্রিত চিত্রনাট্য কতোটা অকাট্য সত্য।ভেবে দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায় পৃথিবীর মতো বৃহৎ ব্যাসের একটি গোলকের তিন ভাগ কতোটা হতে পারে!ভাবতে গিয়ে সত্যিই কুলকিনারা পাই না,হাঁ ততোটাই বিস্তৃত মানুষের দুঃখের মানচিত্র!


এবার সত্যদ্রষ্টা কবির কাছে জানতে চাইবো তাঁর মনন ঝুলি থেকে নতুন কোনও দুধ সাদা বেড়ালের দেখা মিলবে কিনা,কিংবা মানসনেত্র থেকে নতুন কোনও লেজার,উৎসারিত কোনও হিকস্-বোসন কণা।প্রশ্নটাও করে ফেলি অবলীলায়।ওহে কবি,আপনি তো প্রথমেই পৃথিবীর তিন ভাগের গল্প দিয়ে শুরু করে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিলেন,বাদবাকি এক ভাগের কি হবে?আপনার ঝুলি থেকে কি আশান্বিত কোনও সাদা বেড়ালের মুখ দেখবো?অর্থাত্ জীবনাকাশে উড়ছে কি সুখের লোটন কিংবা মুখী,গেরোবাজ,নিদেনপক্ষে গোলা পায়রা? অবশ্য কবি সেটুকু জানাতেও কৃপণ নন।তিনি সত্যকে দেখেন সত্যের আলোয়।তাই লক্ষণীয়,শুরুতেই নামকরণে বলে দিয়েছেন "এক ভাগ ডাঙায়"।


হাঁ,প্রশ্নের পাহাড়ে জমতে থাকা আমাদের এই ভূবনডাঙা কবিকেও ভাবিয়ে তোলে।সেই মাটি কি সদা সুবাতাসের বার্তাবাহক? কুসুমসুবাসে কি সদা মো মো করে গোষ্পদস্বরূপ সাধের নন্দনকানন?আমাদের মনে উথ্বিত সব প্রশ্নেরই উত্তর পেয়ে যাই কবি চিত্রত চিত্রনাট্যের পরবর্তী অংশে।  


"এক ভাগ ডাঙায় শুয়ে আছে খিদে-দারিদ্র্য
তাদের জোর কোরে সরিয়ে দিচ্ছে কর্পোরেট হাত
হা-হা হাসির একশো তলা বাড়ি"


হাঁ,কবির বিবৃতি আমাদেরও নিঃস্ব করে দেয়,নেমে আসি বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে। বলতে ইচ্ছে করে,'হায়রে পৃথিবী,হায় হায় জীবন!'এই হলো এক ভাগ ভূবনভাঙার সুখের নমুনা!তিন ভাগ যদিওবা ঝরিয়ে ফেলে মেঘভার,হয় মেঘমুক্ত।একভাগ সেটুকুও পারেনা!বরং খিদে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ভুলে যায় কান্নাজলের কথা।শুষ্ক চোখ জোড়া তাকিয়ে থাকে ফ্যালফ্যাল।করকর করে চোখ।কালে কালে তারাই হয়ে ওঠে আর এক ভুবন ডাঙার চোখেরবালি। যারা তিন + একেরও বাইরে।অথচ মনে করেন তারাই সমাজ, তারাই সভ্যতা।শুধু তাই নয়,তারাই নিজেদের মনে করেন গণদেবতা!অথচ ক্ষুধা-দারিদ্র্যের সাথে যাদের বসত তারা ফুটপাতের ধারে দিনের আলোয় শুয়ে বসে থাকলেও রাতের আঁধারে ঘুমানোর অধিকার টুকুও নেই।কর্পোরেটের চিকন হাত প্রকাশ্য দিবালোকে তাদের জোর করে সরিয়ে দেয় প্রকাশ্য রাজপথ থেকে।আর সেখানে হাসে একশো তলা বাড়ি।অর্থাত্ কবি এক ভাগ ডাঙার চিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কিভাবে এই সবুজ গ্রহটি সৃষ্টির শুরু থেকে অদ্যাবধি 'বীরভোগ্যা বসুন্ধরা' হয়ে উঠছে,এবং তা ক্রমশ চলমান।আগামীতে নতুন কিছু যে দেখতে পাবো সে আশাও ক্ষীণ।কারণ খিদে-দারিদ্র্যের অসহ যন্ত্রণার মধ্যেই তো জন্ম নিচ্ছে সুবৃহৎ হর্ম্য।যে ভিতের গভীরে কান্নার পাহাড়,অথচ সেখানেই জন্ম নিচ্ছে গগনচুম্বী হাসির এভারেস্ট!আর সেই এভারেস্টের তলায় কোন এক আস্তাকুঁড়েতে জন্ম নিচ্ছে আগামী,যেখানে চুঁইয়ে আসা সভ্যতা নামক পাদপ্রদীপের আলোয় ঝলসে যাচ্ছে হতদরিদ্রের ক্ষয়াটে চোখ!


অবশ্য এসব দেখে মানবিক বোধে পুষ্ট কবি স্থির থাকতে পারেনানা,তাঁর কোমল মনে উথ্বিত হয় হাজারো প্রশ্ন।যে প্রশ্নের গভীরে চোরাস্রোতের মতো সুপ্ত বয়ে যায় দ্রোহের আগুন।কবি প্রকাশ্য রাজপথে করেও ফেলেন হৃদয়ের গভীরে জমতে থাকা প্রশ্নগুলো।
  
"পৃথিবীটা কার ? রাজনীতির ? হিংসার ?
জাতি-দাংগার ?"


ঘটমান বর্তমান সেদিকে ইঙ্গিত করলেও কেউই সুস্পষ্ট জবাব দেয়না।না সমাজ,না রাষ্ট্র।বরং ওই সব সঙ্গত প্রশ্নগুলো ছুঁড়ে ফেলে ডাস্টবিনে।আর প্রশ্নকর্তার মুখে কুলুপ এঁটে দিতে সুকৌশলে প্রচার করে "এই বেশ ভালো আছি"।


অবশ্য সবাই কুলুপ পছন্দ করেন না।তেমন মানুষই বলতে পারেন "সত্যের জন্যে সবকিছু ত্যাগ করা যায়,কিন্তু কোন কিছুর জন্যে সত্যকে ত্যাগ করা যায় না।এই যেমন কবি,মানবতার আলো কবিকে সত্যের পথ দেখায়।এবং কবিতাটি পাঠ করতে করতে কবির সাথে সাথে আমরাও কোথাও সুস্পষ্ট জবাব না পেয়ে পাঠক হিসেবে জড়িয়ে যাই প্রশ্নের আত্মায়।নির্ভর করতে হয় নিজস্ব মননের উপর।তখন মানুষ হিসেবে আত্মশ্লাঘা করার মতো কোথাও এক একটু খড়কুটোও খুঁজে পাইনা,বরং মানুষ হিসেবে আসে আত্ম জিজ্ঞাসা।ঘিরে ধরে দোদুল্যমানতা,চুরমার হয়ে যায় সভ্যতা,মনে হয় দর্শনও আসলে বড়ো বড়ো তত্ত্ব ছাড়া কিছু নয়।তখন মনে মনে বলি এ আজাদি ঝুটা হ্যায়?গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ সবই লোক দেখানো কথার কথা।বরং মেনে নিতে ইচ্ছে করে এই ভূবনভাঙা হিংসার,জাতি-দাঙ্গার,এই পৃথিবী সাইলকের।'বীরভোগ্যা বসুন্ধরা'র তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় কবি বর্ণিত বাস্তব চিত্রনাট্যের আনাচেকানাচে।


অবশ্য মানবদরদী কবি এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চান,তিনি এই রাজনীতি,হিংসা ও জাতি দাঙ্গা দীর্ণ পৃথিবীকে দেখাতে চান আশার আলো।ভুলে যেতে চান ইতিহাসের পঙ্কিল কালো অধ্যায়। তাই প্রশ্ন করে ফেলেন---  


"তবে প্রেম নয় কেন ?
কেন লালসার শিকার হবে বৃক্ষ-বায়ু-আকাশ
কেন ধ্বংসের আনন্দ উত্তর থেকে দক্ষিণে
পুব থেকে পশ্চিমে
আগুন অহংকার নিয়ে হেঁটে বেড়াবে"


মানবিক বোধে দীক্ষিত কবি জানে পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে একমাত্র প্রেমের আলো।সুতরাং সঙ্গত প্রশ্নে সমাজ ও সভ্যতাকে বিদ্ধ করেন বিদগ্ধ কবি।এই প্রেম কেমন?আমাদের বাংলা অভিধানে প্রেমের নানান রূপ,প্রেম অর্থে সাধারণত নর-নারীর সম্পর্কের রসায়নকে বুঝি।কবি সুচারু ভাবে এই রসায়নের বাইরে বেরিয়ে নিখাদ ভালোবাসার সম্পর্কের আবেদন নিয়ে হাজির হলেন।ঠিক যিশু,হজরত ও শ্রীকৃষ্ণের মতো।অতএব প্রশ্নের নেপথ্যে যেনো উদাত্ত কণ্ঠে গেয়ে উঠলেন 'ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কি'।এই ভালোবাসায় দেহ নেই,শোষণ বঞ্চনা নেই,নেই রক্তচক্ষু,আছে কেবল মানবতা ও বিশ্ব ভাতৃত্ববোধ।এই ভাতৃত্ব বোধই পারে হিংসা দীর্ণ পৃথিবীকে আলোর পথে ফেরাতে,প্রকৃতিকে প্রকৃতির চোখে দেখতে এবং হিংসা ও ধ্বংসের আনন্দ ভুলে বরং ভালোবাসার আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেবে মানুষের চুড়ান্ত অহং স্বত্বা।সুতরাং বলতেই পারি দরদি কবির প্রশ্নগুলো আপামরের এবং প্রতিটি প্রশ্নের গভীরে লুকিয়ে আছে মানবিক সওয়াল।


বিদগ্ধ কবি এও জানেন,যদি প্রেমের পথ থেকে সরে হিংসা ও জাতি দাঙ্গা প্রশ্রয় দিই কালে কালে আমাদের একভাগ চারণভূমিও হবে সম্পূর্ণ রক্তহীন,অর্থাত্ আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে রক্তশূন্য বা হৃদয়হীন মানব মানচিত্র!তা কি খুবই সুখের হবে?এই প্রশ্ন কবির সাথে আমাদেরও তাড়িত করে।কবি তা চাননা বলেই চিত্রনাট্যের সমাপ্তিতে আমাদের ইগোয় দিলেন গোপন কঠিন আঘাত।


"আর আমরা রক্তহীন সমাজ বয়ে বেড়াবো
ক্রীতদাসের মতো জো-হুঁজুর, নিষ্ঠুর হাততালি"


হে সভ্যতা,হে স্বাধীনতাকামী মানব,বলো হৃদয়হীন সমাজ সভ্যতার মূলসুর তবে কি হবে?আজও কি করে যাবে জো-হুজুর ও বোকার মতো দেবে হাততালি!


আসলে চেতনশীল কবি সুকৌশলে মানুষকে মনে করিয়ে দিতে চাইলেন দু-শো বছরের পরাধীনতার ইতিহাস।এবং পরোক্ষে দিলেন উত্তোরণের নিদান।সভ্যতা তথা সমাজ ও মানুষকে সুখ সমৃদ্ধির একমাত্র পথ দেখাতে পারে মানুষে মানুষে সহাবস্থান,সৌভাতৃত্ববোধ।যাহা আমরা প্রেম নামে চিনি।


চমত্কার কবিতা,কোনো সন্দেহ নেই কবিতাটির আবেদন দেশ কালের সীমানা ছাড়িয়ে চিরন্তনতা দাবি করে।যা নিঃসন্দেহে হিংসাদীর্ণ পৃথিবীকে আলোর পথ দেখাবে।নামকরণটিও ভারি চমত্কার ।কবিতাটি সমালোচনা করার মতো তেমন কোনও উপাদানও চোখে পড়লো না তেমন।শুধু বলবো কবিতায় ব্যবহৃত 'হুজুর' শব্দটি মেজে নেওয়ার দরকার বোধ করি।বোঝাই যাচ্ছে কবি প্রচলিত 'দাঙ্গা' শব্দটি ভেঙে 'দাংগা' লিখেছেন।এটা কবির ব্যক্তিগত ইচ্ছে।সুতরাং কিছুই বলার নেই।কবিতাটি যে মানবিক বোধসম্পন্ন যেকোনো মানুষকে ছুঁয়ে যেতে বাধ্য তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।মননশীল এমন সুন্দর কবিতা উপহার দেওয়ার জন্যে শ্রদ্ধেয় প্রিয় কবিকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই।কামনা করি আগামীতে কবির শানিত কলম আরও আরও শানিত হোক।