মায়ামৃগ (10-07-2019)
রণজিৎ মাইতি
--------------------
কতো চড়াই উতরাই পেরিয়ে এখন দাঁড়িয়ে আছি মধ্য চল্লিশে
সংখ্যা বড়ো করতে চাইলে করতেই পারি অনায়াস
বছর থেকে মাস,দিন থেকে ঘন্টা ও মিনিট সেকেন্ডে ভেঙে ভেঙে
বিলিয়ন ডলারের মালিক কখনও কি হিসেব দাখিল করে সেন্ট পেনিতে ?
অবশ্য মানুষের মতো বড়ো হওয়ার খেলায় মাতে না মানবেতর
পূব দিগন্তে চেনা নরম হলুদ সূর্য যখন অস্ত যায় তার রঙ বিচিত্র জবাকুসুম
অথচ দুপুরের গনগনে আঁচে পুড়িয়ে দিয়েছে পিঠ,হাত মুখ
তাকিয়ে থাকি সদ্য ফোটা গোলাপ কিংবা দিঘি ভরা শ্বেতপদ্মের দিকে
কালকের ফোটা তাজা পাঁপড়িগুলো আজ কেমন নেতিয়ে পড়েছে
আর ঝরে পড়া বিষন্ন শরৎ শিউলি


এসব দেখেই কৌতুহলের পারদ চড়তো চড়চড় করে
শৈশবে মা-বাবার হাত ধরে কোথাও বেড়াতে গেলে প্রশ্নের পর প্রশ্নে বিদ্ধ করতাম
একটা বয়স থাকে যখন সব বিষয়েই চরম বিস্ময়


এটা কি,ওটা কি
আগুন কেন পোড়ায়,বৃষ্টির কারণ
পাতা নড়ে কেন,ফুল ফল সবকিছু প্রশ্নের আওতায়
অবশ্য আমার প্রশ্নমালায় কখনও তাদের বিব্রত হতে দেখিনি
নির্লিপ্ত মুখে একটাই কথা, 'বড়ো হও,সব জানতে পারবে'


শীতের সকালে পাড়ার ছেলেরা রোদ পোহাতে পোহাতে মাপতাম ছায়ার দৈর্ঘ্য  
ভাবতাম বড়ো হওয়া সম্পর্কে বাবার প্রত্যাশিত মাইলস্টোন কি এখনই ছুঁতে পেরেছি  ?
অবশ্য পড়াশোনায় ফাঁকি দেখলেই বাবার সেই একই কথা
অনেক বড়ো হতে হবে সোনা


একটার পর একটা পাশ করতে করতে এখন এক নামকরা অফিসের বড়বাবু
বিয়ে সংসার সন্তান নিয়ে ভাসছি মহাসাগরে
বাবাকে এখন আর বড়ো হওয়ার কথা বলতে হয়না
বরং সে ভাবনা এখন আমার গভীরে প্রোথিত
স্বয়ংক্রিয় যানের মতো গড়িয়ে গড়িয়ে চলে আপন গতিতে


মাঝে মাঝে জীর্ণ ও শীর্ণ বাবা-মা এর দিকে তাকাই
একটু বিশুদ্ধ হাওয়ার জন্যে কি গভীর আকুলিবিকুলি  
সাহস করে বলতে পারি না, 'বাবা,তোমার কল্পিত মানচিত্র কি হয়েছে সম্পূর্ণ !!'
অন্ধকার আকাশে তারাগুলো আজও পূর্ণ যৌবনা
চাঁদের গায়েও দেখি না কোনও বলিরেখা
অথচ আমার বাসনার জগতে প্রতিদিন জন্ম হয়,আবার মৃত্যুও
তাই আজও প্রশ্নবানে করি জর্জরিত  
সে অভিমুখ একান্ত ব্যক্তি কেন্দ্রীক
বাবা-মা নিজেরাই কি ছুঁয়েছে কখনও অত্যুচ্চ শিখর !
নাকি হারিয়ে গিয়েছে স্বপ্ন কোন এক অজানা গিরিখাদে  


অবশ্য এই বয়সেও বেরিয়ে আসতে পারিনা রানিং ট্রেক ছেড়ে
আজও ছুটি সজোরে , প্রাণপণে
মনে হয় মানুষকে আমরণ ছুটতেই হয় মায়ামৃগের পেছনে পেছনে