মিথ্যুক(27-11-21)
রণজিৎ মাইতি
--------------------
প্রতিটি মানব লাইনের আড়ালে লুকিয়ে থাকে একটি নির্মম সত্য;
ঠিক রামধনুর অন্তরালে জলবিন্দু ও সাদা আলোর মতো।
কিন্তু সত্য প্রকাশে মানুষ এতোটাই ভীত
তাই স্বীকার করে না সত্যরূপ অমোঘ সূর্যকে।


যেমন আজ অফিস যাওয়ার পথে দীর্ঘ লাইন দেখে...
এক জীর্ণ শীর্ণ মানুষকে জিজ্ঞেস করলাম...
এটি কিসের লাইন কাকু ?
দীর্ঘ লাইনে জেরবার অস্থিচর্মসার মানুষটি হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন...
"স্বাস্থ্যসাথী বাবু।এই বঙ্গে ওই একজন মানুষইতো আছেন,যিনি সাক্ষাৎ অভয়া হয়ে    রোজ দেখাচ্ছেন বাঁচার দিশা।"


আমি দিশাহীন মানুষ
বুঝতে পারিনা বাঁচার জন্যে লাইন,নাকি লাইনের জন্যে বাঁচা;
কোথায় লাইন নেই!
রিকশা স্ট্যাণ্ড থেকে রেশনের দোকান
স্কুলে ঢোকার সময় গেটের মুখে লাইন,
ট্রেন থেকে নেমে টয়লেটে,মাছ-মাংসের দোকানে লাইন,
দেখেছি বারোভুতের মেলা বসে যে মাঠে,সেখানেও (ওই মেলার সময়টুকু ছাড়া)বারোমাসে লাইনের তেরো পার্বণ !
কর্পোরেশন,লোকসভা বিধানসভা তো আমাদের ভবিতব্য,লাইনের নৈমিত্তিক উৎসব।


যদিও আজ সেসবের বালাই নেই;
তবুও ভীড় দেখে কৌতূহলে জানতে চাইলাম...
কি ব্যপার ভাই,এসেছেন কি কোনো বিশেষ কল্পতরু....?
পাশ থেকে একজন শিড়িঙ্গে জীবন্মৃত মহাগর্বে জানালেন..."দুয়ারে সরকার, কন্যাশ্রী দাদা"


অবশ্য শ্রীহীন আমি কিছু না বলে  কিছুটা এগিয়ে যেতে যেতেই দেখলাম...
একটি শববাহী শকট,পেছনে সারিবদ্ধ কিছু মানুষ 'বলহরি হরিবোল' ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছে...
শোকসন্তপ্ত ওই লাইনেরই একটি শিশুকে জিজ্ঞেস করলাম...
এই খোকা,যাচ্ছো কোথায়?
নিষ্পাপ মুখের সরল জবাব...  "আজ্ঞে কেওড়াতলা,আজ সূর্য ওঠার সময় আমার দাদু নিভে গেছে।"


বুঝলুম,পৃথিবীর সব মানুষই এক একটা চরম মিথ্যুক;
লাইন বিষয়ক ভাবনায় যে কোনো শিশুমুখই ঈশ্বরের একমাত্র ভরসা।।