স্বর্গ  (24-06-2020)
রণজিৎ মাইতি
-------------
সেই কোন শৈশবে চাঁদকে স্বর্গ ভেবে হামা দিয়েছি চাঁদের দিকে;
সন্ধ্যায় পড়তে বসে ঘুমিয়ে গেলে মা-ও সেই স্বর্গ নামক চাঁদ দেখিয়ে দু গাল খাইয়ে দিতেন
আমিও ঘুমচোখে কল্পনার স্বর্গরাজ্যে পাড়ি দিতে দিতে গপাগপ খেয়ে নিতাম
যদিও রূপসী চাঁদ ছোঁয়া আজও হয়নি


একটু বড়ো হতেই অর্থাত্ কৈশোরে স্বর্গ ভাবনা আমুল বদলে গেলো;
শচীন-সৌরভকে দেখে ধ্যান জ্ঞান হয়ে উঠলো ক্রিকেট
লর্ডসের মাঠ,ক্রিকেটের স্বর্গ।ইডেন গার্ডেনসকে করে নিলাম স্বপ্নের সাথী
ব্যাট বল নিয়ে কোমর বেঁধে নেমেও পড়লাম ময়দানে
যদিও সেই পবিত্র মাটি ছোঁয়া আজও হয়নি


আর একটু বড়ো হতেই কৈশোরের ধ্যান ভেঙে খানখান
বুঝতে পারলাম এত্তো বড়ো দেশে ওই দু-একজনই ছুঁতে পারেন লর্ডস নামক ক্রিকেট মক্কা
তাছাড়া ততোদিনে বাবা-মা চেনাচ্ছে ভিন্ন স্বর্গের ঠিকানা
'জয়েন্ট দাও,অল ওভার ইন্ডিয়ায় যতো কমপিটিটিভ এগজাম আছে সেসবের জন্যে তৈরি হও;
বড়ো আমলা হতে হবে,তবেই চাকরি সূত্রে যেতে পারবে দেশ-বিদেশ।'
আসলে য়ুরোপ-আমেরিকা ছিলো বাবার স্বর্গ


অবশ্য কে শোনে কার কথা,হয়তো বাবা ভুলে গেছেন প্রেমেরও একটা বয়স থাকে;  
বয়সের দোষে গোপনে গোপনে পারমিতাকেই স্বর্গ ভেবে হাবুডুবু খাচ্ছি তখন মনবৃন্দাবনে ঠিক শ্যামের মতোন
ভেসে যেতে যেতে পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি হৃদয়ের গভীর লাবডুব
মাঝরাতে ল্যাংটো ছাদে পায়চারি করতে করতে তারাভরা আকাশটাকেই ভেবে বসেছি স্বর্গ,আমার যৌবনের নন্দন কানন অর্থাত্ পারমিতা
যদিও একদিন শুভলগ্নে আমার স্বর্গ অন্য এক সুপুরুষের বগলদাবা হয়ে চলে গেলো কোন সে সুদূরে


সুতরাং,স্বর্গ থেকে গেলো অধরা!
বাবার মতো কেরানিগিরিই হয়ে উঠলো ভবিতব্য
দশটা-পাঁচটার ডিউটিতে এ-ওকে ল্যাং মারছি
স্বর্গ ভাবতে পারিনা বলেই কাদা ছোড়াছুড়ি করছি পরস্পরে

আসলে তখন বুঝিনি,যা আজীবন মানুষের অধরা থেকে যায় সেটাই স্বর্গ
সেই রূপসী চাঁদ,বিখ্যাত লর্ডস,হৃদয়েশ্বরী পারমিতা কিংবা ডাকসাইটে আমলা
অথবা এই ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও স্বর্গ নামে কোনও কিছুর অস্তিত্বই নেই!