(যাত্রী প্রতিক্ষালয়ে পাঁচ মাদক সেবক বসে বসে নানান আজব গল্প নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল, এমন সময় এক স্বাস্থা কর্মী বাস ধরবার জন্য অপেক্ষা করছিল।)


তাঁকে দেখে এক মাতাল টিপ্পনি কেটে বলল:-


"ও ভাই স্বাস্থা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে
                            মস্ত করোনা ভুল,
এসো খাদক হই মাদকের মোরা
                             বাঁচাতে জাতি কুল।


স্বাস্থা কর্মী বলল:-


এই ভুল করোনা কুল হারাবে
                            নির্মূল হবে যে বংশ,
মাদক নেশায় সব মান হারাবে
                             অসুখে হবে ধ্বংস।


ভুল করেও কোনদিন
                         না খেও চরস গাঁজা,
খেলে পরে যমদূত তোমায়
                       মৃত্যুতে দেবেন সাজা।


জ্ঞান থাকতে কোনদিনও
                            না করিও ধূমপান,
রক্ত উঠবে মুখ দিয়ে
                           যক্ষ্মা কাড়বে প্রাণ।


মদের বোতল বন্ধু ভেবে
                        হও যদি কেউ মাতাল,
লিভার যাবে পচে গলে
                           জীবন হবে বেতাল।


খেওনা বন্ধু আর কোনদিন
                    খাইনি দক্তা গুটখা পান,
মুখের ভিতর ঘা হয়ে গিয়ে
                  কর্কট রোগে কাড়বে প্রাণ।


হেরোইনের নেশা সর্বনাশা
                   তোমরা না নিও তারে কভু,
মরন কাড়বে জীবন আশা
                       উদ্ধারও করবে না প্রভু।


তাই বলি ওগো বন্ধু আমার
                         মাদক নেশা ভালো নয়,
ক্ষতির আগে যতি দাও
                   নইলে জীবন হানি অতিশয়।


এতো কথা শুনার পরও মাতাল বলল:-


যাক চলে যাক সব কিছু
                      নেশায় আনন্দ নিয়ে রব,
তবুও নেশাটাকে পেশা করতে
                       সকল মানুষে মোরা কব।


বলব ভাই আয় চলে আয়
                        মোদের নেশার আঙিনায়,
মাদক খেয়ে থাকবি সুখে
                   তোরা মোদের এই ঠিকানায়।


মাদক নেশায় শক্তি বাড়ে
                        বুদ্ধি খেলে বোকা মাথায়,
মলম ঔষধ লাগেনা কখনো
                         যত  হাজার গুণ ব্যথায়।


মনের দুঃখ কষ্ট আছে যত
                        সব চলে যাবে সুখটানে,
হৃদয় খানা চনমনে হয়ে
                         লাগে স্বর্গ সুখ এ প্রাণে।


এই ভাবে বলার পর স্বাস্থা কর্মী বাসে উঠে গন্তব্য স্থলে রওনা হলেন, তা দেখে মাতালেরা কৌতুক হাসি হাসতে লাগলো।বছর দুয়েকের পর  একদিন ওই স্বাস্থা কর্মী হাসপাতালে বসে আছে এমন সময় ওই পাঁচ মাতালের একজন হাজির হয়ে কেঁদে বলে উঠল:-


শুন ভাই স্বাস্থা দাদা
                   আমি মস্ত করেছি ভুল,
ধোঁয়ার নেশায় পাগলের লাগি
            আমায় যক্ষ্মা ফোটাল হুল।


কাশি আমার থামে না যে
                         শুধু রক্ত উঠে মুখে,
ধন সম্পদ হীনে পরিবার নিয়ে
                          ভীষন আছি দুঃখে।


পরদিন আর এক মাতালের স্ত্রী এসে বলল:-


মদের নেশায় মাতাল হয়ে
                       বেতাল তার স্বামী,
ডাক্তার বলেছে লিভার পচে
                   কেবল হচ্ছে তার বমি।


দামি দামি ঔষধ কিনে
                   আমি হয়ে গেছি সারা,
বাস্তু ভিটে বিক্রি করেও
                মোর পতি হয়েছে হারা।


আর এক নেশগ্রস্থের পিতা বলল:-


তাঁর ছেলে হেরোইনের নেশায়
                  একদম পাগল হয়েছে,
ঘটি বাটি সব বিক্রি করে
                        ড্রাগে সে মজেছে।


শুকিয়ে গেছে সারা শরীর
                       খায়না কিছু আর,
ড্রাগ এনে দাও ড্রাগ এনে দাও
                        করে শুধু চিৎকার।


জ্ঞান শুন্য পড়ে আছে
                       বিছানার পরে,
গোটা পরিবার হা হুতাশে
                     চিন্তা জ্বরে মরে।


আর এক নেশা গ্রস্ত স্বামীর স্ত্রী এসে বলল:-


দোক্তা পান আর গুটখা খেয়ে
                       তাঁর পতির মুখে ঘা,
জ্বালা যন্ত্রনায় স্বামী যে তার
                  শুধু করছে মা আর মা।


সারে নাতো কোন ঔষধে
                  বরং বাড়ছে দিনে দিনে,
কর্কট তাঁরে খেয়েছে নাকি
                   তার সাধের দোক্তা পানে।


তাই বলি ভাই ভুল করোনা
                              মাদক সেবন করে,
অকালে কেন জীবন যাবে
                         মাদক পিশাচের তরে!
                          ----------- রঞ্জন গিরি।