প্রায় তিপ্পান্ন বছর আগে,
কলকাতা নগরী স্তব্ধ হয়েছিল একবার।
নারকেলডাঙ্গার বুকে দেখেছিলাম,
পঙ্গপালের আক্রমণ।
দুপুর তিনটে নাগাদ,
আকাশ কালো হয়ে গেল,
ঝড়ের আশঙ্কায় দরজা জানলা বন্ধ।
কিন্তু নেমে এলো ঝাঁকে ঝাঁকে
পঙ্গপালের দল।


ভয়াবহ অন্ধকারেও সব বাড়িতে
আলো জ্বলে উঠলো,
জানালার শার্সি দিয়ে
রাস্তার অন্য পার দেখা দুস্কর,
পাশের বেঙ্গল কেমিক্যাল হতে
শোনা যাচ্ছে একটানা সাইরেন ধ্বনি,
নিস্প্রদীপ আইন লঙ্ঘন না করে
আমরা সব হ্যারিকেনের স্তব্ধতায়।
যেন কোনো যুদ্ধের তৎপরতা।


অথচ করার কিছুই নেই,
শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল,
দুচারটি পোকা ঘুলঘুলি দিয়ে
ভিতরে পৌঁছে গেল,
দেখতে মোটেই মন্দ নয়,
তবু মনে হচ্ছিল আর কি সূর্য উঠবে না?
আমি তখন সবে এগারোয় পা দিয়েছি ,
ভীষণ এক ত্রাস মনে মনে,
আতঙ্কিত সকলেই,
জানা নেই মুক্তি কখন পাব।


দেড়ঘন্টা পার করে,
আস্তে আস্তে আলো ফিরে এলো,
পুরো আলো মিললো দুঘন্টা পার করে।
সূর্য সূচনা যেন নবীন প্রভাত
ঘোষণা করলো,
ঠিক যখন সন্ধ্যা আগত।
এতক্ষণ অনর্গল শাঁখ বাজছিল,
তাতে ছিলো কোন আশঙ্কার সুর।
অবশেষে নামলো সাঁঝবেলা,
মঙ্গল শঙ্খের ধ্বনি ফিরে এলো
তুলসী তলায়।


সেই কবেকার ঘটনা ,
আজও আমায় নাড়া দিয়ে যায়।
কখনো ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি,
জেগে উঠে.. জল খাই...
সেই সাইরেন, ব্ল্যাক আউট,
যুদ্ধ তৎপরতা,
নগরীর বুকে পঙ্গপাল
ফের বুঝি ঘনিয়ে আসে কাল ...
দমবন্ধ করে পরিবেশ আবার।


* যুদ্ধ নয় শান্তি চাই