পরপর তিনদিনে প্রকাশিত লেখনীর
দ্বিতীয় অংশ
****-*********-******
লালবাতির নিষেধে স্তব্ধ প্রাইভেট।
শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়,
আচ্ছন্নতা কেটে যায় পথচারীর ডাকে ;
- আ...রে! .... মুক্তো না?
সাদামাটা পাজামা পাঞ্জাবি,
একমুখ দাঁড়ি, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ,
দেখতে দেখতে মোটা গ্লাসের চশমায় -
চোখ আটকায়।
- তু..ই...অবিনাশ তো?
অতীতের স্মৃতিতে ডুবতে ডুবতে,
হাত চলে যায় গাড়ির দরজায়।
- অায়, চট্্ করে উঠে পর,
সিগন্যাল.. হয়ে .. গেছে..ওঠ্..
ইতস্ততঃ ভাব কাটিয়ে গাড়িতে অবিনাশ।
বন্ধুর ঘাড়ের উপর দিয়ে হাত রেখে
মুক্তোর প্রশ্ন -
- তারপর! কি করছিস এখন?
- পাঠশালায় ছাত্র ঠেঙ্গানো,
তবে বেশি দূরে নয়, বাদুতে।
- আরে আমিওতো ওদিকেই যাব
রবীন্দ্রজয়ন্তীতে ভাষণ দিতে।
- ওঃ। এখনো লেখাটা তবে ছাড়িস নি?
সম্মানে লাগে সাহিত্যিক মুক্তাক্ষরের
সত্যিই কি অবিনাশ -
ওর কোনো খবর রাখে না?
- কেন, তুই আমার লেখা পড়িস নি?
- ধ্যাৎ বাবা, গেঁয়ো স্কুল মাষ্টারের
উপন্যাস, গল্প, কবিতা পড়ার সময় কই?
স্কুল কোচিং মিটিং সারতেই দিনকাবার।
- তবে ..এখন..যেন মনে পরছে..
তুই তো একাদেমিও পেয়েছিস, তাই না?
- সে তো অনেক বছর হলো।
পারলে এখনকার লেখাগুলো পড়িস,
ভালোই লাগবে মনে হয়।
- বাব্বা! বাবুর আমার আঁতে ঘা লাগলো?
খারাপ লাগবে তো বলি নি,
তবে হ্যাঁ, তুই তো জানিস -
রবীন্দ্র জগৎ থেকে মুক্তি আমার নেই।
তবুও দু চারটে যা পড়ি -
অধিকাংশে মন ভরে না,
সে হয়তো অক্ষমতাও হতে পারে।
আসলে কি জানিস -
আজকাল কচি কচি ছেলেমেয়ের মুখ,
আমার সমস্ত মন জুড়ে থেকে যায়।
ওদের আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর মুখভরা
হাসির প্রেরণা যোগাতে দিন চলে যায়।
- বেশ আছিস তবে?
- তা বলতে পারিস্।
- অসংখ্য ডানামেলা জীবনের ভীড়ে
আমার জীবন কাটছে গতি নিয়েই।
টুকটাক আলাপে সংলাপে জানা গেল -
অবিবাহিত অবিনাশ আজও খুঁজে চলেছে
রবীন্দ্র ভাবনা পুষ্ট. শান্তির অাশ্রয়।
দশবারো দিন বাদে এখন ফিরছে
বোলপুর থেকে, সেমিনার ছিলো।
মাঝেমাঝেই ওকে ছুটে যেতে হয়
ছাত্রাবাসের উন্নয়নের জন্য।
তাই, অবিনাশ জানেও না,
মুক্তো চলেছে ওরই হাতে গড়া ছাত্রাবাস -
অবৈতনিক শিক্ষায়তন সোনার তরীতে।
শুনে বিস্মিত হয়েছে,
আনন্দও পেয়েছে অনেক।
- জানিস, এবার ওঁর জন্মদিনে আর
শান্তিনিকেতনে থাকাও গেল না।
বেশ বুঝতে পারছিল মুক্তো -
লালমাটীর টান মনের অনেক গভীরে।
অবশ্য এটাই স্বভাবিক।
ক্রমশঃ