বৃত্তি পাশ করার পরে,
মাস্টারমশাইকে গেলাম প্রণাম জানাতে,
দেখলাম,
সজল নয়নে তিনি রতনকে বলেছেন,
"ওরে! তোর মধ্যে আগুন আছে,
সেই তাপ হারাস নে কক্ষনো,
আমরা তো শেষ পারাণির কড়ি গুনছি,
তোদের সামনে তেপান্তর,
সত্যকে সঙ্গী করে এগিয়ে চল,
দেখবি কোন বাধাই বাধা নয়,
চরৈবেতি...."


হিংসে হচ্ছিল আমার,
হতে পারে রতন ক্লাশের ফার্স্ট বয়,
হতে পারে অনেক কিছুতেই ও এগিয়ে,
গান,আঁকা, আবৃত্তি এমনকি
খেলাধুলায়ও ওর জুড়ি মেলা ভার,
তা ...বলে ...


"মনি! কিরে? দূরে কেন? আয়,
কাছে আয়"


সম্বিত ফেরে তাঁর  আত্মিক স্পর্শে,
ভুল ভেঙে যায়,
ওর কাছে আমাদের একমাত্র পরিচয়,
আমরা এই দেশের সন্তান।
লজ্জায় মাথা নীচু হয়ে গেল।


হাইস্কুলে কেউ কারো খোঁজ রাখে না,
তাই, এরপর থেকে,
স্বাধীনতার সকাল কাটতো
ক্লাব প্রাঙ্গণে, বেশ আনন্দে, হুল্লোড়ে...


এমনই এক স্বাধীনতার সকালে,
মাস্টারমশাই চলে গেলেন ভোরের আলোর টানে,
নক্ষত্রের পতন আকস্মিক,
যেন স্বাধীন বুলবুলির উড়ে যাওয়া-
শেষবারের মতো স্বাধীনতার স্বাদ নিয়ে।
স্বজনহারানোর ব্যথায় সে বার,
রুদ্ধ হয়ে আসছিল বক্তাদের কণ্ঠ,
আশ্চর্য! তিনি যেন এক নতুন শহীদ।
বিপত্নীক মাস্টারমশাইকে ঘিরে ছিলো,
তাঁর অসংখ্য সন্তান,
শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলো আপন পিতৃবোধে।
আমিও ভাবছিলাম বারবার,
সেই অমোঘ বাণী,
সত্যকে সংগী করে এগিয়ে চল...।


(ক্রমশঃ... দ্বাদশ খণ্ডে সমাপ্য।)