যে দিকে দুচোখ যায় দেখিতে বিশাল মাঠ,
মাঠেরই এক কোনে বসেছে আজি
মায়াবতীর হাট।
কিছুদিন আগে মায়াবতীর হাটে এলাম
ঘুরে দুজনা,
কিনে দিলো মোরে অনেক কিছু
চেয়ে ছিলাম আমি যা।
হাটের মাঝে ঘুরিলাম আমরা
আসিলাম সন্ধ্যায় ফিরিয়া,
চন্দ্র যে তার আলো দিল
ভূবন মাঝে ছড়ায়।
মাঠ থেকে সে আসিলে ফিরে
বলিব আমি তারে,
চুরি-ফিতা আর লাল শাড়ি,
আনিয়া দিবা মোরে।
আরও আনিবা দুপসার জিলিপি
না হয় বাতাসা,
না আনিলে কথা কইবনা
বলিছি আমি যা।
পতি তাহার সব শুনিয়া
হাটেতে গেল চলিয়া,
পথের পানে তাকাইয়া রই
যত দুর দেখিতে পায়।
মাটির ঘরে প্রদীপের আলোয়
ভাবিতেছে সে বসে,
কখন যে তার প্রাণের পতি
বাড়িতে ফিরিয়া আসে।
মাটির ঘরের ভাঙ্গা দেয়ালে
জানালার ওপাশ দিয়া ,
চন্দ্র যে তার দিয়াছে কিরন
হাসিয়া হাসিয়া।
বাঁশের ঝাড়ে জোনাকিরা জ্বলে
ডাকে ঝিঁ ঝিঁ পোকা ,
পুকুর পাড়ে হাসনা হেনা
ফুটেছে থোকা থোকা।
পতি তাহার হাটে গিয়া
ফিরিতেছে সওদা করে,
বধূর শখের জিনিস কিনে
আনিতেছে থলে ভরে।
এটা-সেটা সে আনে কিনে
আসিতেছে থলে ভরে
বাকি যেন থাকে,
থাকিলে বাকি না নিলে সব
থাকবে সে যে রেগে।
এ ভেবে চলছে হেটে
নির্জ্ন গাঁয়ের ধারে,
অন্ধকারে পথ দেখিতে
চন্দ্র আলোকিত করে।
সেদিনের হাটে দিয়েছি কিনে
একটি পুতির হার,
বধূয়া আমার তাতে খুশি
চায় না কিছু আর।
আরও দিয়েছি সেদিনের হাটে
লাল ফিতা তায়,
কতখানি খুশি হইয়া ছিল সে
বোঝানোর সীমা নাই।
হাটিতেছে গায়ের পথে
একলা অন্ধকার,
বধূয়া তাহার প্রহর গুনে
তারই অপেক্ষার।
হাটিতে হাটিতে এমন সময়
শিমুল তলায় এসে
মস্ত বড় সর্প্ কে সে
পায়ে দিল পিসে।
আঘাত পেয়ে সর্প্ তারে
মারিল কামড় পায়ে,
বিষের যন্তনায় লুটাইয়া পড়িল
কেউনা তারে দেখে।
বধূ তাহার অপেক্ষায়
দিঘল রজনী ধরে ,
পতি তাহার কখনো
আসেনা দেরি করে।
তবে কেন হচ্ছে দেরি
তাহার এতক্ষন,
কি কারনে করছে দেরি
ভেবে পায়না মন।
জেগে জেগে তার প্রহর কাটে
পথ পানে চেয়ে থাকে ,
জোছনা ছড়ানো চন্দ্রটিকে
ঘোলাটে মেঘে ঢাকে।
প্রভাতের সময় দেখিল এমন
নির্জ্ন পথের ধারে,
কে যেন জীর্ন্ শীর্ন্
রহিয়াছে পথে পড়ে।
সহসা ধরিল কাছেতে গিয়া
তাহার গায়ের কবির মিয়া
রহিয়াছে পড়িয়া।
হাটের থেকে ফিরিতেছিল
রাতের আধারে,
জংলার সাপ না বুঝিয়া
দংশিল তারে।
বাড়িতে গিয়া বলিল তাহারা
বলির তাহার বাড়িতে,
তাই শুনিয়া বধূ তাহার
লুটাইল মাটিতে।
কি দোষে তাহার পতিকে-
বিধি নিল কাড়িয়া,
চিৎকার করে কাঁদিতে
লাগিল একথা বলিয়া।
কেন বিধাতা ভাঙ্গিল স্বপ্ন
ভাঙ্গিল সাধের সংসার,
তাহার কান্নায় আকাশ
বাতাস হয়েছে একাকার।
 ২০১০