একদিন বাড়িয়া উঠিব,
জন্মের দোষে বাড়িয়া উঠিব ঠিক-
এখনকার দুঃখদশা ছায়া হয়ে মাড়াবে অতীত।


কুণ্ঠিত জটিল সময়ের কোটর ছেড়ে-
বাড়িয়া উঠিব- সরল বিস্তৃত যমুনার মতো।
সুখে অসুখে বাঁচিয়া রইবো; ওতো সুখ-
সুখের ছোবলে, এখনকার বিষে ভরা দেহ
দুঃখে-সুখে মিলে, বিষে-বিষে হইবে কি জল?
হইবে কি অন্ত্রের ব্যথা লাগব- হৃৎপিণ্ডে ফোটা হুলের-
বন্ধ হইবে কি ক্ষরণ? মরি মরি করি যে ব্যথা আমরণ।
তবু বাড়িয়া উঠিব, পিতৃপুরুষের ছায়াতলে-আশীর্বাদে,
ফের ছায়া হবো কারো, কায়া হবো কারো
ঘূর্ণিত নিয়মের আগত প্রজন্মান্তরে।
কিন্তু আমার ফল হইবে কি তাতে?
আমি যে মুক্ত পাখির মতন, পোকার মতন
ছুটন্ত ইঁদুরের মতন; ছুটতে চেয়েছি ঢের-
সমুদ্র মন্থিত বাতাসে-বুক ভরে উঠা গাঙচিলের মতন।
আমি তো চেয়েছি, প্রাচীন সত্তা- বুনো বনবাসী।
মাটির কাছে, পাখির কাছে, আশ্রিত হতে-
যতটা প্রাচীন হওয়া লাগে।  
ঘাসের কাছে, মেটো পোকার কাছে- তামাকের রঙ হয়ে
যতটা কাছে মেশা যায়, ততটা প্রাচীন।
চেয়েছি- ধূলিময় মরু, মরুর ঝড়-কাটাবৃক্ষ বুকে
কখনো সমুদ্র স্নান- শুভ্র ঝিনুকে মুক্তো মাণিক্য রূপে।
আমি তো চেয়েছি প্রস্তর যুগ; যুগের প্রেমিকা-
প্রস্তরবাসি মা, মায়ের আঁচল, জুঁইয়ের খোঁপা।
পাথুরে মাটি, মাটির গন্ধ- লাল প্রস্তর ছেড়ে
আমি কেন পতিত হলাম, জটিল সভ্য-যন্ত্রযানে?  
আমাকে কেন বাধিলো শিকলে, বেড়ি পড়ালো হাতে?
কেন বালকের লিপির মতো শিখতে হইলো-
দুঃখ-সুখের বর্ণিত বেরস বর্ণমালা?
কেন শিখালো, নবযুগের প্রেম; প্রেমের বিরহ
লুণ্ঠিত সুনিপুণ হৃদয়ের বলিদান?
আমার রক্তে চেতনা বিকাশ, সমাজের নিয়ম-
শেষ মূর্ছনায় রক্ষিত সম্মান, ঢালিয়া দিলো কে?
কে দিলো রক্তে আগুন, হৃদয়ের অসুখ
ফুল রূপে, হুল হয়ে বুকের প্লাবন?


এ দায় নিবে কে- কে খুলিবে বেড়ির বাঁধন?
কে দিবে সমবেদনা, কে বলিবে সমাধান?
আমি জানি, এই নব সভ্যতাও জানে-
অপরাধ পরিস্ফুট হয়, অপরাধী ছাড়াই।
তাই ঢের করেছি পণ- ফেলে নব্য জন জীবন,
আমি ফিরে যাবো, ফিরে পাবো, ফিরিয়ে নেবো-
আমার বলিষ্ঠ বার্ধক্য জীবন।
তাই ক্রমে ক্রমে বাড়িয়া উঠিব- সুবিশাল সমুদ্র সম,
বিশালদেহ সুরভীর বট বৃক্ষ সম; মায়ের আরতি কিংবা
প্রভুর দোল মঞ্চ সম। যদি নাও পারি, অতটুক বাড়িব-
যতটুক থাকে, আলোকশক্তি-আঁধারবেধি সুউচ্চ বাতিঘরে।


০৮ মাঘ ১৪২৮ / ২২ জানুয়ারি ২০২২ / শনিবার  
নারায়ণগঞ্জ।