চোখে আর ভাসেনা, তোকে প্রথম দেখার ছবি,
ছোট্ট ছিলাম তাই পড়েনা মনে, এখন যতই ভাবি।
বর্ষ পরেই নিয়েছি বিদায়, প্রাইমারি ছেড়ে যাওয়া,
গল্প তখন হয়নি কিছু হয়নি কথা কওয়া।
সময়ের স্রোতে ঘুরে ফিরে এসে হাইস্কুলেই দেখা,
বিভাগ খ-এর ষোলো রোল তোর, মনের পাতায় লেখা।
অন্য ক্লাসে বসতিস তুই আমাদের থেকে দূরে,
প্রতিযোগী তুই হয়েছিস বলে হিংসা করেছি তোরে।


বছর পেরিয়ে সেকশন ভাঙল, সবাই একই সঙ্গে,
হিংসা বুঝি বেড়ছিল তখন, ঝগড়াঝাটি তুঙ্গে।
সারা ক্লাসে কেউ না এলেও হতনা কোনো ক্ষতি,
তুই না এলে জমত না ঠিক ঝগড়া করার সাথি।
ক্লাসে তখন মনিটর তুই, খুবই ঢং করতিস,
মাঝে মঝে অকারণেও বোর্ডে নাম লিখতিস।
স্যারের কাছে হেঁয়ালিপনায় কত নালিশ করেছিস,
ঠাঠ্ঠা গুলো না বুঝেই, স্কেলের বারি খাইয়েছিস।


ঝগড়াঝাটির মাত্রা সেদিন থেমে থাকেনি কথায়,
হঠাত করেই চড় মেরেছি প্রচন্ড রাগের মাথায়।
কাঁদতে কাঁদতে অফিসে গিয়ে ঢুকলি ম্যামের ঘরে,
সঙ্গে তোর এইচ্ এম্ এল কিচুক্ষণ পরে।
ঘন্টা দুয়েক অপমান করলেন, মেরেছিলেন চড়,
অভিমানে আর কথা বলিনি, এই ঘটনার পর।
একটি ঘটনা বদলে দিল, ক্লাসের কত ইতিহাস,
শান্ত ক্লাস, মৃত ক্লাস, কেউ করে না উপহাস।


পরীক্ষা শেষ, নতুন ক্লাস, বুক করে দুরুদুরু,
এমন সময় টিউশিনিতেও তোর আসা শুরু।
পড়তে বসতাম ছাদে গিয়ে হ্যারিকেনের আলোয়,
চায়না নামে তখন তোকে ডাকতে লাগত ভালোই।
সেই সন্ধ্যায় তোর হ্যারিকেনে পাথর দিলাম ছুড়ে,
কান্না হয়ে ভাঙল কাঁচ চিতকার করে।
শুভদার ভয়ে নতুন কাঁচ আনতে হয়়েছিল তখন,
সেই ধার এখনো মেটেনি থেকে যাবে আজীবন।


এত বছর ঝগড়া করেও ক্লান্ত হইনি দুজন,
ভগবান তাই ফন্দি করেই থামিয়ে দিল তখন।
সময়ের সাথে সব ভুলে গিয়ে, খুবই কাছে এলি,
ঝগড়াগুলো দূরে সরিয়ে হাতটা ধরে নিলি।
দোস্ত বলে ডেকে ডেকে পাগল করেছিস আমায়,
একই সঙ্গে কাটিয়েছি সবথেকে খুশির সময়।
তোর আমার বন্ধুত্ব যেন দীর্ঘ উপন্যাস,
প্রার্থনা করি কখনও যেন হয়না এর বিনাশ।


হঠাত করেই ভাগ্যের ফেরে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া,
চোখের জলে বিদায় দিয়ে দুঃখের কথা কওয়া।
এখানে এসে পাবনা না জানি বন্ধু তোর মতো,
চিঠি লিখেও পোষ্ট করেছি, ডেকেছি তোকে কত।
প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়়ে দুএকবার দেখা,
তোর জন্যই ওই সময়টা থাকত ধরে রাখা।
অল্প সময়েই খুশির আসরে কতই মজা হত,
সর্ব সুখে সুখী তখন মনটা ভরে যেত।


মান অভিমান কত হয়েছে, সবই হেরে গেছে,
দোস্তের কাছে দোস্ত হয়ে থেকে দোস্তি জিতেছে।
এত বছর পরেও তবে কেন অভিমান,
ভুল করেও দোস্তকে কখনও করিনি অপমান।
ভুল বুঝেছিস তুই আমায় জানিনা কিসের জোরে,
ক্ষমা করিস নাইবা করিস থাকিস না তুই দূরে।
তোর আমার বন্ধুত্ব, এক দীর্ঘ উপন্যাস,
পাতায় পাতায় ধুল জমেছে, তাইতো সর্বনাশ।


রনি, তুই মান অভিমানে থাকিসনা আর দূরে,
ভালোবাসা দিয়ে ডাকছি তোকে আয় না আবার ফিরে।
হাসব, খেলব, গান গাইব, ঘুড়ব সারাদিন,
বেখেয়ালি তুলির টানে মনটা করব ব়ঙীন।
গল্পের আসর মাতাব আবার নতুন খুশি নিয়ে,
আয় ফিরে আয়, আয় না তুই অতীত ভুলে গিয়ে।
তোর আমার বন্ধুত্ব, এক দীর্ঘ উপন্যাস,
এমন করে ছিঁড়ে ফেলিসনা, মুছে ফেলিস না বিশ্বাস।