কুয়াশার শিশিরবিন্দুর হিম চাদরের পরশে,
চুপসে গেছে কাশের পাপড়ি,এ শরৎ প্রভাতে,
পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ভেজা আলে শালিখ চড়ে বেড়ায়,
শালুক ও পদ্ম পুকুরে আগমনী বার্তা ভাসে ধূসর আভায়,
বাসকের নীল ফুলের মাঝে স্বপ্নের কুঁড়ি ফোটে,
নীলিকা মুক্ত ক্ষেতে ধানেরা নতজানু হয়ে যেন কাউকে স্বাগত জানাচ্ছে,
কোমল দূর্বা তৃনের তমালী ফুলে পদ ভিজিয়ে,
চাষী যায় মেদিনী পূজাতে, গামছা কাঁধে,কোদাল হাতে,
আশ্বিনের শুভ্রাকাশে ঝাড়বাতির আলো জ্বলে ওঠে ক্রমে ক্রমে,
নব পূজো সংখ্যা আর প্রকৃতির সৌন্দর্য আশ্বিন কুমারী সাজে,
দূরের কোনো জীর্ণ দেওয়ালে এক ঘোমটা পরা বধূ পিটায়তেছে ঘুঁটে,
ভোর ভাঙ্গে চরম ব্যস্ততায় মুরগির আজানে,
দামোদরের মাঝি ঘাটে খেয়ানৌকার প্রতিক্ষায় নোঙর প্রহর গোনে,
আগমনীর সিগনেচার টিউন বেজে ওঠে বাঙ্গালীর মনেপ্রাণে,
মা শিশুর মতন বাঙ্গালীর আশ্বিনের সঙ্গে নিবিড় টান,
প্রজাপতির সন্ধি যেমন ফুলের সঙ্গে চীর অম্লান,
প্রবাসী বাঙ্গালীরা কেও ঘরে ফেরে,কেও কোন দূর মহাসাগরের তীরে পূজোয় মাতে,
মৌমাছিরা যেমন মক্ষিকার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ফুল থেকে ভিড় করে একটা মৌচাকের তরে,
ডাকপাখিরা গান গায় ঝোঁপেঝাড়ে, শিউলির ডালে ঢাক ঢোলের কলতানে মুখরিত এ আশ্বনিকে,
বাংলা ছাড়া খুঁজে পাবে না বৈচিত্র্যময় ভূমধ্যসাগরের তীরে,
বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বিদ্যুতের ফুল্কি ঝলসে পরে ডাঙ্গায় ডাঙ্গায়,
দূর্যোগের মধ্যেও মায়ের নামটি আশ্রয় করে মাসুমের ছাতায়,
পাঁড়াগার পথে পথে আখের গুঁড়, নারকেল, ব্যাসন, তেলের আনাগোনা,
হলুদ,চাল, কুসুম,কলায়ের খোলা খাপুড়ির মধ্যে জোর তোর অভ্যর্থনা,
চতুর্দিকে আনন্দের জোয়ার, ঘরে বাইরে সজ্জিত উৎসবের ফ্রেম,
শৈশবের সাথে বার্ধক্য,হংশের সাথে জল,যূনীর সাথে শ্যমাপোকারা আশ্বিনের রূপে করে প্রেম,
চাতক প্রকৃতির রূপ নদীতে স্নান করে, ডালিমের রাঙা বেদনা বীজ নিয়ে একাবী ভরিয়ে তোলে,
পথ শিশুরা জীর্ণ বস্ত্রে আনন্দচিত্তে শঙ্খ ধ্বনি বাজায়ে মায়ের মন্ডপে আসে,
ডাইনোসর,ম্যামথের দল ক্লাবের থিম পূজায় নববিশ্বের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়,
মোমের শিখা,রংমশাল আর শ্রবনহানিকারক স্পিকারের ধ্বনিতে আশ্বিনের সন্ধ্যা বদলায়,
আধুনিক বিবর্তন ধারায়, তবে ধবল সারস, কাটা ধান ক্ষেতে ঘুঘু, পায়রাদের আশ্বিন বদলায় না,
মহালয়ার ছায়াছবিটাও বদলে যায়, ভদ্রের কন্ঠ বদলায় না,
পূজার সঙ্গীত বছর বছর বদলায়, বদলায় না পুরোনো সুরের মূর্ছনা,
না বদলানো অশ্বিনকে আমি ভালোবাসি,জোছনায় পড়াই কল্পের নক্সী পশমিনা।।