বলাকা শরত শেষে
ধান সোনা হেমন্ত আসবে আসবে
শোহিনী সুর তুলেছে শুকিয়ে যাওয়া কাঁশফুলে
মেঘনার পাড় জুড়ে সাদা কাঁশবনে বাদামী রঙ
এই নিরামিষ জীবন তার কাছে যেমন ধীরে ধীরে
রঙ রূপে বদলে যাচ্ছে ...
অনেক দিন পর কৃষাণকে পেয়ে
ঘুরে ফিরে দেখা নশ্বর সময়কে
বলছিলো হেমলতা শূন্যতায় উদাস দৃষ্টি

হেমলতা : তোমার মনে আছে নিশ্চয় ...


কৃষাণ : হ্যাঁ....নিরেস জীবন যখন আছে-
সব মনে আছে; সেদিন হলুদ সন্ধ্যা বেলায়
চারদিক মিহিন অন্ধকারে ঢাকা
একাকী এসেছি তোমাকে ফেলে
অজস্র না বলা কথার কাকলী নিয়ে
তুমি জানো না আজও; সেদিনকার দেবদাস যেমন
আমিও ছিলাম দুঃখ বিলাসী এক উন্মাদ।


হেমলতা : আমাদেরও একটা নির্জলা নদী ছিল । এই যে মেঘনার স্রোত ধারা ঠিক এমনই
দীর্ঘ পথ গো-গ্রাসী স্রোতের মুখে- হারিয়ে গেছি তুমিহীন। জানো, কতশত শাশ্বত কথা জমে
আছে মেঘাবৃত বুকের ভিতর। পাথর বুকটা বড্ড ভারী ভারী লাগে যেনো;  তোমাকে বলতে পারলে নির্বিদার পাথরটা সরে যাবে মুহূর্তেই; এসো আজ হংসমিথুন হই পীড়িত বুকে বুক মিশে গিয়ে বলি হারানো নেলাখেপা নদীটার কথা। বর্ষায় টইটুম্বর আমাকে ভাসিয়ে দিক আপাদমস্তক। আজ সেখানে তাড়–য়া দ্বীপের চর পড়েছে দারুণ! ওহ্ ... সব কথা আমিই বলবো ? তুমি কী আজও থাকবে নিরাতপ নীরব সেদিন যেমন ছিলে ?


কৃষাণ : অকপট হাসি ভরা ক্ষেতের ফসল বন্যায় ডুবলে নিকড়িয়া কৃষকের ঘরে কী আলো জ্বলে! নির্বোধ মুখে কী ফোটে কোনো ভাষা ? তার চে’ বরং তুমিই বলো ...  


হেমলতা : কলমীর ভাসমান প্রাণে বৃষ্টির হাজারো কলধ্বনি। আর এই হেমলতা হেমের হিমে জমে গ্যাছে। ফলহীন বৃক্ষের ফুল নিয়ে কেউ নির্ধন সুখী হয়নি। তাই আপন কুলায় আবারো নিরত্যয় প্রতীক্ষা ছিল কোনো উন্মাতাল ঘুঘুর।
কৃষাণ : দেখা পেয়েছো ...!


হেমলতা : হ্যাঁ পেয়েছি ... পেয়ে হারানোর নিরতিশয় ব্যথা।


কৃষাণ : তবে আর কি ! এবার লক্ষ্মীপেঁচার ডাক শোনার অপেক্ষায় কাটুক নিরম্বু জীবন প্রহর!


হেমলতা : একদিন তুমি চাওনি বলেই সন্দীপণ জীবনের বর্ণিল সময়টা আমাকে করেছে নিকৃত নিঃস্ব।


কৃষাণ : সেদিন আমার সময় ছিল অক্ষমতার চাদরে ঢাকা। আজ বয়েসের বলিরেখায় ঢেকেছো সোনালী যৌবন!


হেমলতা : আসবেই যখন কাছে এই ভাটির টানে কেন ? কেন এতটা পথ শূন্যের কাছে গচ্ছিত রাখা!


কৃষাণ :একদিন পরমার্থ ধন চাইতে পারিনি! আর আজ তুমি পরমাদর না চাইলে থাক!!