২০১৫ সালে কুষ্টিয়ার দৈনিক বাংলাদেশ বার্তা পত্রিকার নভেম্বর বা অক্টোবর সংখ্যায় অনুগল্প পড়লাম। তখন আমার মনে হলো আমরা যেহেতু কবিতা লিখি। গল্প খুব একটা লেখা হয়ে ওঠেনা। মাঝে মাঝে কবিতার ফাঁকে যদি অস্বস্তি এড়াতে কাব্যের ঢঙে ছোট ছোট কথা গুলো দিয়ে বিজ্ঞান সমন্বয় করে পরমানু গল্প নাম দিয়ে লেখি তাহলে মন্দ হয় না। সেই থেকেই শুরু। এক সময় বড় গল্প লেখা হতো যেটা গদ্য সাহিত্য। উপন্যাস বড় গল্প হিসাবে আছে। পাশাপাশি ছোট গল্পও আছে। মহাকাব্য রচনার যুগ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ছোট গল্পের রবীন্দ্রনাথ চর্চাও কমে গেছে। কবিতায় বিজ্ঞান সমন্বয় করে বিজ্ঞান কবিতা ও বিজ্ঞানে বহুবিধ শাখা নিয়ে ইতোমধ্যে রকেট, বিজ্ঞান সনেট, বিজ্ঞান সমন্বয় করে হাইকু, সেনরু, লিমেরিক, লিরিক,  চর্চা হচ্ছে। নিউক্লিয়াস, ন্যানো, পিরামিড, আকৃতি ও রুহিতন স্টাইলে কবিতা চর্চা হচ্ছে। অনেক ধরণের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। প্রতিনিয়ত হচ্ছে। ফেসবুক সাহিত্য বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, মানুষের বেশী কাজ করতে হচ্ছে তাই সময় কম ব্যস্ত মানুষের। মানুষ ফেসবুকেই দুই একটি লাইন লিখেই মনের প্রশান্তি পেতে চায়। আবার অন্যের এই ছোট খাটো কম সময় লাগে এ রকম লেখা পড়ে সময় কাটানো বা প্রশান্তি পেতে চায়। সেই চিন্তা থেকে এই পরমাণু গল্প লেখা। এই ছোট থেকে ছোট দুই এক লাইনে লেখা ছোট গল্প বিশ্ব সাহিত্যেও চর্চা হচ্ছে। তাই বাংলা সাহিত্য কেনো পিছিয়ে থাকবে এই চিন্তা থেকে পরমাণু গল্পের চিন্তা পরিবর্তন হয়ে পরমাণু কবিতা চর্চা করার কথা মাথায় এলো । এর আগে অণু গল্প চর্চা হয়েছে। পরমাণু কবিতা /গল্পের লেখা ফেসবুকে দেয়ার পর ছড়াকার জগলুল হায়দার ‘জাররা’ শিরোনামে এক দুই লাইনে লিখছেন বলে তিনি ফেসবুকে জানান দিয়েছেন। তবে দৈনিক বাংলাদেশ বার্তা তারপর থেকে মাঝে মাঝে দেখি অনুগল্প ছাপে। সেগুলো আমি মনোযোগ দিয়ে পড়ি। একটি বিষয় উল্লেখ করতেই হয়। সেটি হলো দৈনিক বাংলাদেশ বার্তায় প্রচুর বিজ্ঞান কবিতা ছাপা হয়। সেই সাথে বিজ্ঞান ভিত্তিক অনুগল্প নিয়মিত ছাপা হয়। পত্রিকার সম্পাদক সাহেব ও সংশ্লিষ্ট সকলকে এজন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। পত্রিকাটির সম্পাদক কবি ও সাংবাদিক আবদুর রশিদ চৌধুরী। আর শুরুতে যে পরমাণু গল্পটি (পরবর্তীতে নাম দিলাম পরমাণু কবিতা) লিখলাম তাহলো :


একদিন কবিতার আড্ডায় দেখেছিলাম বুকের বোতাম খুলে অদৃশ্য চোখের ইশারায় যেনো বলেছিলে এ বুকে আয়...। সেই থেকে পাজরের ফরাফরাস জ্বলে জ্বলে তৈরী হচ্ছে সম্মিলিত প্রেমের রসায়ণ। (পরমাণু কবিতা - : রীনা তালুকদার, নীলক্ষেত, ঢাকা : ০৫-১১-২০১৫)


এই পরমাণু কবিতাটির প্রথম শ্রোতা হচ্ছে কবি সামসুন্নাহার ফারুক। যিনি আমার অনেক কবিতারই প্রথম পাঠক। আর নতুন কী লিখছি সেটি তিনি খুব আগ্রহ নিয়ে আমার কাছে জানতে চান। আর এজন্য আমার আগ্রহ আরোও বেড়ে যায়। তিনি এই পরমাণু কবিতাটি শুনে বললেন বাহ্ বেশতো ভাল হয়েছে। আর কবি শেখ সামসুল হক তিনি ইদানিং কোনো নতুন লেখা পড়ে শোনালে খুব একটা মন্তব্য করেন না। জিজ্ঞেস করলে বলেন-ভাল। আরো বেশী জিজ্ঞেস করলে বলেন- বেশী প্রশংসা করলে আপনার লেখা ধীর বা বন্ধ হয়ে যাবে। ভাববেন অনেক বড় কবি যা লিখেছেন সবই ভাল এই ভাব প্রকাশে লেখা ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে যাবে। এবং আপনি যে লেখাটি লিখে বিখ্যাত হবার চেষ্টা করছেন সেটি হয়তো আর হয়ে উঠবে না। তারপর গোলেমালেই সময় পার হয়ে যাবে। সবাই আপনাকে সাহিত্য চর্চায় আছেন বলেই উল্লেখ করবে হয়তো। না -ও করতে পারে। কিন্তু একজন বিশ্লেষকের চোখে আপনাকে বিচার করার জন্য আপনার লেখায় কোনো উপাত্ত খুঁজে পাবে না।


তারপর নভেম্বর মাসে দেখলাম ফেসবুকে একটা পোষ্ট। পরমাণু গল্প লেখার চর্চা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই পরবর্তীতে এটাকে আরো বেশী চর্চা শুরু করলাম পরমাণু কবিতা শিরোনামে৤ যারা পরমাণু কবিতা শিরোনামে লিখবেন। অনেকেই প্রশ্ন করবেন হয়তো এটা কী কবিতা না গল্প।  কবিতার ঢঙে লেখা বিজ্ঞান ভিত্তিক একেবারেই অনুর চেয়ে  ছোট পরমাণু গল্প অথবা কবিতা। পাঠক যেভাবে গ্রহণ করেন। বিজ্ঞান ভিত্তিক ছোট গদ্য কবিতা মনে করতে পারে। আবার বিজ্ঞান ভিত্তিক ছোট গল্প ও মনে করতে পারে। যেহেতু পৃথিবীর জনসংখ্যা বেশী, মানুষের কাজে সময় বেশী ব্যয় করতে হয়। কেউ দীর্ঘ বক্তৃতা, কবিতা, গল্প পড়তে বা শুনতে চায় না। তাই স্বল্প সময়ে প্রশান্তির জন্য কবিতাও ছোট হয়ে গেছে। গল্পকেও আমরা ছোট করে দিতে চাই তা পরমাণু গল্প নয় কবিতা শিরোনামে। তবে অবশ্যই বিজ্ঞান সমন্বয় থাকতে হবে। দর্শন জোরালো হতে হবে। রবীন্দ্রনাথের সেই কথা শেষ হয়েও যেনো হলো না শেষ। তবে গল্পকাররা আমার উপর রেগে যাবেন না কিন্তু। গল্প যারা লেখে তারা ছোট গল্প লিখবে৤ আমি গল্প লেখাকে নিরুৎসাহিত করবো না৤ গদ্য স্টাইলে পরমাণু কবিতা চর্চা করার কথা বলি৤ লেখা ভালো হলে পাঠক ধারণ করতে পারলে লেখা গল্প যত বড়ই হোক তা পাঠক গ্রহণ করবে এবং মনেও রাখে বা রাখবে।


পরমাণু কী ? পৃথিবীতে যত পদার্থ আছে সবই অতি ক্ষুদ্র কণিকা দিয়ে তৈরি। এরা এতই ক্ষুদ্র যে অতি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারাও তা দেখা যায় না। মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণিকার নাম পরমাণু এবং যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণিকার নাম অণু। প্রতিটি পরমাণুরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। প্রধান বেশিষ্ট্য হলো এদের নিজ নিজ পারমাণবিক সংখ্যা। পরমাণু ও অণুর আপেক্ষিক এবং প্রকৃত ভর আছে। প্রোটন, ইলেকট্রন ও নিউট্রন পরমাণুর প্রধান কণিকা। পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটন ও নিউট্রন নিয়ে গঠিত নিউক্লিয়াসই তার প্রায় সকল ভর বহন করে। পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসে অবস্থান করে প্রোটন ও নিউট্রন।এদের সমষ্টিকে নিউক্লিয়ন সংখ্যা বলে; যাকে ভরসংখ্যাও বলা হয়। প্রোটনের সমসংখ্যক ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারদিকে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায়। একই মৌলের আবার একাধিক ভরসংখ্যাবিশিষ্ট পরমাণু আছে যাদের আইসোটোপ বলা হয়। মানবজীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদের ব্যাবহার ব্যাপক।
এই কবিতায় আমাদের কাজ হচ্ছে পরমাণু নিয়ে। যেভাবে মৌলিক পর্দাথের ক্ষুদ্রতম কণিকা দিয়ে পরমাণুর সৃষ্টি। তেমনি এই কবিতাও মানুষের যাপিত জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র  অথচ তীক্ষ্ন আনন্দ বেদনার কথা মালা দিয়েই লেখা হবে পরমাণু কবিতা। বাংলা কবিতা পরিবর্তনে বিজ্ঞান কবিতা হয়েছে। এখন বিজ্ঞানের অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখা নিয়েও কবিতায় নতুনত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। পরমাণু কবিতাও একটি নতুন সৃষ্টি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করছে। প্রথম শিরোনাম ছিল পরমাণু গল্প৤ অনেকের সাথে আলোচনায় সবাই বললো শিরোনাম পরমাণু কবিতা হলে ভাল হয়৤ এই পরমাণু কবিতা চর্চায় একই সাথে কবিতা ও ছোট গল্প চর্চার ইচ্ছেটাও কিছুটা পূরণ হবে৤ তাল ও লয়ে কিছুটা ছোট গল্পের মতই৤ তাই পরমাণু গল্প নয় বরং পরমাণু কবিতা শিরোনামে সবাইকে এটি চর্চার অনুরোধ জানানো হলো।


-রীনা তালুকদার