আমরা এখানে চারজন পেসেন্ট আছি
সকলেরই একই অসুখ, আমরা জানি আর কিছুদিন পরেই মরে যাব---
দেড় মাসে আমাদের মধ্যে ভীষণ বন্ধুত্ব জমে গেছে, বাড়ির লোক রোজ না এলেও আমাদের কোন দুঃখ নেই---
ভোর পাঁচটা থেকে রাত দশটা, দারুণ গল্প হাসি গান জমে ওঠে, ডাক্তারও খুব আনন্দ পান আমাদের আনন্দ উচ্ছলতা দেখে;
তবে রমি,ও এখন ভালো করে কথা বলতে পারেনা,মাঝে মাঝে মুখ থেকে ব্লাড বেরিয়ে আসে ; আমরা ওকে সান্ত্বনা দিই--


পাশের ঘরে ছজন ছেলের বেড; ওদের ডিজিজ ভালো হয়ে যেতে পারে---
অভীক বাগচি, একজন টিচার, তিন বছর আগে বাসে ধাক্কায় জখম হয়েছিলেন, গত বছর ক্যান্সার ধরা পড়েছে; ওর কোন দুঃখ নেই, বলে," আসা আর যাওয়াই তো অনন্তর নিয়মে, যদি আবার আসি ফিরে আর চিনে নিতে পারি,তবে তোমাকে নিয়ে সুখের ঘর বাঁধব পিয়া"
আমি হেসে গড়াগড়ি, কি যে বলেন পাগলের মতো--
উনি বলে চলেন কত কথা, মাঝে মাঝে গানও গেয়ে উতলা মন ভরান।
"পিয়া,তুমি একবার বলনা আমাকে ভালোবাস, একবার বলনা আমরা একসাথে
মরে যাব--"
আমি কাঁদলেই উনি আমাকে বুকে জাপটে ধরেন,রাত দশটার পরে অনেক রাত অবধি আমাদের লুকোচুরি প্রেম চলে--


গতকাল রাত তিনটেয় দুজনে বেডে চলে গেছি,আমার ঘুম ভাঙল সুচিতার চিৎকারে ,
"পিয়া অভীকদা--- "
মানে! কি হল তাঁর?  
পিয়া শুয়ে পড়ল কাঁদতে কাঁদতে---
হ্যাঁ, খুব ভীড় দরজার সামনে ;ডাক্তারও কাঁদছেন, "এমন রত্নখনি ঈশ্বর নিজস্থানে তুলে নিলেন---"
আমি সবার কান্না দেখে একবার হাসলাম; আবার কাঁদলামও, ভালোবাসি একবারও বলতে পারিনি তো অভীক তোমাকে---
ভীড় ঠেলে ওনার শীতল হাতে পরিয়ে দিলাম আমার হাতে বাঁধা কালোব্যান্ড টা;
বেডে শুয়ে সুচিতাকে বললাম,আজ রাত থেকে প্রতি রাতই অমাবস্যা ; পূর্ণিমা রাত
আমাকে আর রজত ছটায় উদ্ভাসিত করবে না রে--- ডক্টর আদিত্য বললেন না তো আমি কবে যাব শান্তি আনন্দ আর প্রেমের দেশে! ওইতো অভীক চলে যাচ্ছেন--
যাও অভীক,আমিও আসছি তোমার কাছে--