দেবীর মন্দিরে এলেন এক সন্ন্যাসী,
বার্তা ছড়িয়ে পরলো চারদিকে।
তিনি নাকি ভবিষ্যৎ বলে দেন!
অসংখ্য ভক্ত জমা হলো মন্দিরে,
কারো মনে সংশয়, কারো কৌতূহল,
কেউ বলেন শক্তি কিছু নিশ্চয় আছে।
নইলে সবাই তাঁকে  বিশ্বাস করবে কেন।
কে আগে যাবে তার ধুম পরে গেল,
অনুচর এসে বলেন, একে একে আসুন
আমাদের বাবা বড়ই ক্লান্ত।
শুরু হলো পরিচয় বাক্যালাপ,
সবাই জানতে চায় নিজের ভবিষ্যৎ!
তার পরিবারের ভবিষ্যৎ।
সারাদিন সমস্ত মানুষের সুখ দুঃখ শুনতে শুনতে
দিন গড়িয়ে গেল সন্ন্যাসীর।
ধীরে ধীরে দিনের আলো বিদায় নিল,
সবাই ঘরের পানে চলল।


মন্দিরের বাইরে শুধু কাজ করেন
এক দলিত মহিলা,
সকালে তাকে এসে প্রণাম করেছে দূর থেকে।
তার কাজ শেষ হয়নি তখনো।
রোজ সকালে ফুল তুলে, মালা গাঁথে,
মন্দিরের দালান সাফ করে,
জল তুলে, ঠাকুরের বাসন মাজে।
কিন্তু দেবালয় কক্ষে তার যাওয়া বারণ।
নবীন সন্ন্যাসী লক্ষ্য করলেন তাকে।
ভক্তরা সব বিদায় নিল,
সন্ন্যাসী  মহিলাটিকে জিজ্ঞেস করলেন,
তুমি জানতে চাইলেনা তোমার ভবিষ্যৎ।
মহিলাটি ছায়ারও স্পর্শ এড়িয়ে দূর হতে বলে,
আমিতো ভালো আছি প্রভু।
ভবিষ্যৎ, সময় নিজের ছন্দে বয়ে যাক...
তার জন্য উতলা আমি নই।
ভালবাসায় মোড়ান সংসার আমার।
স্বামী আর মেয়ে নিয়ে বাস।
আর আছে মন্দিরের দেবতা,
যাকে দূর থেকে সেবা করি, স্পর্শ বাঁচিয়ে।
কিন্তু আমার মন সর্বক্ষণ
ছুঁয়ে থাকে তাকে।
আমার স্বামী এই দেব মূর্তি গড়েছেন,
কিন্তু প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর আর তাকে স্পর্শ করেনি।
সন্ন্যাসী অবাক হয়ে শুনলেন,
দেখলেন যে দেব মূর্তি  তার স্বামীর হাতে গড়া
সেই দেবীর চোখ মিলে গেল,
এই দলিত মহিলার চোখের সনে
ভালো করে দেখলে পুরোটাই যেন মিলে যায় মুখের আদল
তিনি হাসলেন, বললেন মা জল দেবে?
তেষ্টা পেয়েছে খুব।
মহিলাটি জলের পাত্র এনে তার সামনে রাখলো স্পর্শ বাঁচিয়ে।
সন্ন্যাসী বলেন মা, জলের ধারা দাও আমার করপুটে।
মেয়েটি ইতস্ততঃ করায়,
তিনি বলেন, তুমি ঈশ্বরের সন্তান!
আমার  কাছে জাতের কোনো  বিচার নেই।
মনে বললেন, স্বয়ং দেবীমা তোমার রূপ ধরে
হাসি মুখে বেদীতে বিদ্যমান,আর...


দাও... জল দাও  মা...


একথা ছড়িয়ে পরতে লাগলো,
ঊত্তর থেকে দক্ষিণ  গ্রামের সব কোণে।
রাতের অন্ধকারে  কথাগুলি  গভীর হতে লাগলো...
মহিলাটির স্বামী মহিলাটিকে নিতে এলো।
কি যেন আলোচনা হলো তাদের!
মেয়েটি পরে বললো প্রভু,
আজ রাতেই এ গ্রাম  ছেড়ে চলে যান।
আমাকে ক্ষমা করে দিন।
আর হাতে দিল এক উজ্বল দীপ।
বললো এ আঁধারে এই আলো পথ দেখাবে আপনাকে।
সন্ন্যাসী হাসি মুখে রওনা দিল,
হাতে ধরলো দীপখানি।
হয়তো ভাবলো, মানুষের মনের আঁধারে দীপ জ্বালাতে এসে,
কোনো এক অপরিচিতা দলিত  কন্যা  দীপখানি জ্বেলে দিয়ে,
তার পথের  আঁধার দূর করার প্রয়াস করছে,
একোন পরীক্ষা দেবীর?
এমনকি স্বয়ং দেবী তার রূপ নিয়ে বেদীতে বীরাজমান!
এই মূর্খ মানুষগুলো জানতেই পারেনি কোনোদিন।
বললেন হে দেবতা, ওদের প্রাণে শুভ বুদ্ধি ঘটাও।
ঈশ্বর ওদের ক্ষমা করো তুমি।
পরে মিলিয়ে গেল নবীন সন্যাসী  মানুষের ভিড়ে, অচেনায়।


পরের দিন সকাল,
মোড়লেরা বিচার করতে এসে দেখে
সে তো নাই!
ঝড়টা কয়েটা দমকা লাগিয়েই চুপসে গেল,
সব রাগ পরলো দলিত মহিলাটির উপর।
কিন্তু উপায় নেই,
বিনা পয়সার এমন কাজের লোক পাবে কোথায়,
সে কিছু না বলে নিজের কাজে মন দিল।


সন্ন্যাসী চলে গেছেন বহুদিন।
তারপর হঠাৎ শোনা গেল, সেই সন্ন্যাসীর ভবিষ্যৎ বার্তা,
একেবারে সত্যি হয়ে গেছে সবার ক্ষেত্রে!
গ্রামের মানুষগুলো তখন হায় হায় করে উঠলো,
ভাবলো সেতো ধরা দিয়ে ছিল!
রাখতে পারলামনা  তাকে ভালোবাসায় বেঁধে!
তবে মনে মনে হাসলো দলিত মেয়েটি,
ভাবলো তার সেবা সন্ন্যাসী ঠাকুর  গ্রহন করেছেন।
আর মন্দিরের ওই দেবী,
যার মুখের অনেকাংশ ওই দলিত মেয়েটির সাথে মিলে যায়,
তিনিও হয়ত বললেন, যাক নিশ্চিন্তে সে চলে গেছে।