বসন্তে আজ ফুলের ছত্রগুলো
ছড়িয়ে গেছে নীলের দ্রাঘিমায়,
প্রতি নতুন সবুজ পল্লবেতে
আদরে ঢাকে জীর্ণ ডালের গায়।
রাজা তখন শোনেন দেশের খবর
প্রজার মাঝে নিয়ে আপন আসন,
জন দরদী রাজা প্রতাপ রায়
প্রজার কষ্টে হন কাতর ভীষণ।
রাজার সভায় লোকে তখন পূর্ণ
পত্র দিল উদয় দেশের রাজা,
তোমার সাথে যুদ্ধ করার সাধ
নইলে পাবে ভীষণ রকম সাজা।
পত্র পরে রাজা উঠে দাঁড়ান
অপমানে মুখটি তাহার লাল,
হারলে হবে বন্দী রাজপুত্র
ঘনাবে তাই অতি কষ্টর কাল।
প্রতাপ ছিলেন ভীষণ বুদ্ধিমান
উত্তরেতে সম্মতি দিয়ে দিলেন,
তার পূর্বে আবদারের এক কথা
রাজার কাছে জানাতে তিনি বলেন।
উদয় রাজা ভাবেন মনে মনে
জীবনখানা কেবল যুদ্ধে গেলো,
পেয়েছি যখন সুযোগ বিনোদনের
এর চেয়ে, কি আর আছে ভালো।
বসন্ত রাতে জোছনা যখন ভাসে
দোলা শুধু দেয় মনের কোন,
অহং ভুলে খেলি হোরিখেলা
হয় যেন এক শ্রেষ্ঠ বিনোদন।
প্রতাপ রায়ের প্রস্তাবখানা তার
পছন্দ হলো মেনে নিলো তাই,
উদয় রাজা রানীর কাছে এসে
সেই সংবাদ জানিয়ে দিয়ে যায়।
রানী তখন খুশির ওড়না দিয়ে
হাজার সোনা সাজিয়ে নিল গায়,
এতো দিনে মনের উঠান জুড়ে
উঠলো বেজে রিনিঝিনি পায়।
উদয় রাজা রানী লয়ে সাথে
সঙ্গে নিলেন শতেক উপহার,
পৌঁছে গেলেন প্রতাপ রাজার দেশে
মনে তার খুশির প্রবল জোয়ার।
আবির হাতে প্রতাপ পুত্র এসে
ছড়িয়ে দিল রাজা রানির পায়,
দাসিরা বহে রাঙা ফাগের থালা
উত্তরীয় দিলেন প্রতাপ রায়।
মধুর সুরে বসন্ত রাগের আলাপ
ছড়িয়ে গেছে রাজার ফাগুন বনে,
স্বর্গ হতে পারিজাত সম
এলেন রানি চতুর দাসির সনে।
দুই জনেরই অঙ্গে ফুলের শোভা
গায়ে তাদের অতি সাধারণ বেশ,
হাতে লয়ে মিষ্টি ভরা থালা
কটির পরে দুলছে কালো কেশ।
উদয় রাজা চিনতে নাহি পারে
কেবা দাসী কেবা প্রতাপ জায়া,
রানী ভেবে দাসির পানে চেয়ে
মুগ্ধ রাজা দেখে চোখের মায়া।
ফাগুন বায় ফোটায় রাঙা পলাশ
কোকিল তখন কুঞ্জে কুঞ্জে গায়,
রঙের নেশা মাতায় দুচোখ ভরে
মনে খুশির দোলা লেগে যায়।
বলেন রাজা মুগ্ধ তোমার রূপে
এসো তবে হোরি খেলতে চাই,
ফাগুন বনে প্রেমের আগুন জ্বলে
আর কিছুতো উপাই আমার নাই।
উদয় রাজা বলে প্রতাপ রায়
তাকে আমার রানী করতে চাই,
এই কাজেতে ব্যাঘাত দিলে যেনো
ধ্বংস হবে উপায় বুঝি নাই।
প্রতাপ বলে মাপ করবেন রাজা
আমার কোনো অভিযোগ নাই,
পরিচয় তার রানীর দাসী বটে
তাহার পরে স্নেহের ঘাটতি নাই।
উদয়রাজা প্রতাপ রানী ভেবে
দাসীকে করেন প্রেম নিবেদন,
প্রতাপ রাজার সহস্র অনুচর
অট্টহাস্যে ভরায় ফাগুন বন।
উদয় রাজা মুখটি করে নীচু
বলে প্রতাপ তোমার হলো জিত,
হেরে গেলাম শত রাজ্য জিতেও
দুনিয়ার তাই এটাই বুঝি রিত।
অহংকারে বন্ধ ছিল আঁখি
রত্ন আমার চোখের পাশে হারায়,
চোখটা আজ খুলে দিলে তুমিই
কৃতজ্ঞতা কেমনে আজ জানাই।
শুনে প্রতাপ কহে, ওহে শ্রদ্ধেয়
বন্ধু হবার বাসনা আজ জানাই,
যুদ্ধ শুধু ক্ষত বয়ে আনে
এর অধিক আরতো কিছুই নাই।
ফাগুন হাওয়ায় এই বার্তা ছড়াক
এই পৃথিবীর মধুর পদতলে,
শান্তি মেখে বাঁচবো মোরা সবাই
সুখের তারা জ্বলবে হিংসা ভুলে।
প্রতাপ রাজার ফাগুন বনে সেদিন
দুই রাজা মিলন মেলায় ভরায়,
উঠেছিল হাজার রঙের স্রোত
শান্তিগুলো সবার মাঝে ছড়ায়।