ওকে জাগিওনা, ঘুমাতে দাও ওকে।
ছেলেটা অনেক দিন শান্তিতে ঘুমায়নি,
ঘুমাতে দাও, কেউ স্পর্শ কোরোনা।
আজ কোনো দুঃশ্চিতা ওর কাছে বসবেনা।
ওর মুখে কেমন প্রশান্তি আজ!
ঠিক যেন যুদ্ধে জেতা এক সৈনিক!


এইতো সেদিন সন্ধ্যাকালে দেখা হয়েছিল,
বলছিল কাকু, একটা চাকরি দরকার।
বোধহয় স্কুলের চাকরিটা হয়ে যাবে।
তাহলে আমার বোনটার জন্য
আর ভাবতে হবেনা।
যা লাগবে দিয়ে ওর বিয়েটা দিয়ে দেবো।
আর বাবার হার্টের অপারেশনটাও
করিয়ে দেবো,আর দেরী করবোনা।
মায়ের স্বাস্থ্যটা ভেঙে গেছে,
কি হয়েছে জানিনা।
একবার ডাক্তার চেকআপ দরকার।
টিউসনির টাকায় কোনোভাবে সংসার চলে।
চাকরিটা বড় দরকার।
ভাইটার লেখাপড়াও...
কথাগুলো বলেছিল।


আজ ট্রেনের লাইন থেকে
একটা পঁচিশ বছর বয়সী যুবকের
লাস পাওয়া গেছে।
ওযে আমাদের কানাই...
সেদিন ওই আমাকে  মনের কথাগুলো বলছিল।
লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিল।
গ্রাজুয়েট হয়ে আর পড়ার সুযোগ হয়নি।
অভাবের তাড়না, তাই চাকরির দরকার ছিল।


কেউ যেনো বলাবলি করছিল,
এক বড়লোক বাপের মেয়ের সঙ্গে
তার নাকি মেলামেশা ছিল।
কেউ বলে ওর মাথা স্বাভাবিক ছিলনা,
কি জানি, তার জন্যই কি আজ…
কথাগুলো বাতাসে ফিরছিল!
তবে সত্যি একটাই,
তার একটা চাকরি দরকার ছিল...


কানাইএর শরীরটা  তুলসীতলায় শোয়ানো।
পুলিস ওর বৃদ্ধ পিতা মাতাকে
নানারূপ প্রশ্নে বিভ্রান্ত করছে।
কোনোটার উত্তর তারা দিচ্ছে,কখনো চুপ।
ছেলে হারানোর শোকে পাথর তারা।
চোখে জল আসেনি, শুধু উত্তর খুঁজছিল।
কি হলো? কি হবে এবার।
বোবা কান্নাগুলো সমস্ত মুখ জুড়ে।
তবে একটাই সত্য,
কানাইএর একটা চাকরি দরকার ছিল।