কবি বসে আপন মনে
বাঁধে ছন্দ তাল,
মনের তারে শব্দ সাজান
নেই কোনো খেয়াল।
ঘরের মাঝে পুঁথির বোঝা
কেবল বেড়ে ওঠে,
খাবার যে সব বাড়ন্ত
খেয়াল নেই মোটে।
কখনো তিনি বিভোর হয়ে
আকাশ পানে চেয়ে,
জলের ধারা গড়িয়ে পরে
গালের উপর বেয়ে।
কখনো তিনি গিন্নিকে ডেকে
শোনায় নতুন ছড়া,
কান্না হাসি দিয়ে গড়া
ছন্দ তালে ভরা।
গিন্নি শুনে বলেন হেসে
সবইতো বুঝলাম,
পেটের টান বড় বুঝি
নেই বুঝি এর দাম।
বলেন কবি বলছো ঠিক
কিযে করি বলো,
লিখতে বসে সব ভুলি
কি এলো গেলো!
সব বিকিয়ে দিনে দিনে
ঘরটা হয় ফাঁকা,
কবিতার পাতাগুলো সব
গুচ্ছে গুচ্ছে রাখা।
রাজ্যে রাজা প্রতাপাদিত্য
ভীষণ তেজ তার,
কর্ম ছিল জীবন ব্রত
বইতো দেশের ভার।
কবির কথা শুনে রাজা
ভীষণ যান চটে,
কর্মে যার নেই মন
মানুষ মন্দ বটে।
আরে বাবা বেঁচে থাকলে
কর্ম সদা করো,
কর্ম দিয়ে এজীবনে
নিজেরে তুলে ধরো।
কর্মে নিয়ে ব্যস্ত রাজ্য
অভাব ছিলনা আর,
সবাই রয় পরমানন্দে
খুশি ছিল অপার।
রাজ পেয়াদা এসে দেখেন
কলম কবির হাতে,
বললো তারা রাজার হুকুম
চলুন মোদের সাথে।
কবি বলেন চলো তবে
এতো সৌভাগ্য আমার,
যথা সময়ে বসেছিল
প্রতীক্ষিত দরবার।
কবি কহে প্রণাম রাজন
মোরে তলব কেন?
ঘরে শত অভার হলেও
চরিত্র খাঁটি যেনো।
রাজা জানেন কবি তিনি
শব্দে উৎকৃষ্ট হন,
গুণী লোক সম্মানীয়
অজ্ঞাত তিনি নন।
বলেন তিনি এ রাজ্যে
সবাই কর্ম করে,
কারো ঘরে নেই অভাব
তোমার ঘর ছেড়ে।
কবি কহেন শব্দের ছাঁট
প্রতি নিয়ত ভেজায়,
মনকে মোর গভীর ভাবে
কবিতা দিয়ে সাজাই
তারা আমার রক্ত স্রোতে
তারা আমার নিশ্বাসে,
তারা আমার সজাগ মনের
সত্য ন্যায় বিশ্বাসে।
তারা বুঝি বাল্যকালের
দুষ্টমি ভরা ছড়ায়,
যৌবন আর অস্ত রাগের
চলমান এই ধারায়।
রাজা বলেন তাহলে কবি
কি শোনাবে বলো?
বহু কালের শুষ্ক হৃদয়
খুশির পাল তোলো।
দেখি আজ কোন ধারায়
ছন্দ রচে যাও,
কেমন তুমি স্বর্গ সুখ
কবিতা মাঝে পাও!
বসেন কবি সভা ঘরে
রাজার মুখ চেয়ে,
শুরু করলেন বাল্য সখা
কৃষ্ণ সুদামা নিয়ে।
কথার পরে কথা সাজান
শব্দের উপর শব্দ,
মুগ্ধ শ্রোতারা বিভোর ছন্দে
সভা হলো নিস্তব্ধ।
প্রহর পর প্রহর যায়
নিবু নিবু রাত,
মুগ্ধ সভা সময় ভোলে
পূবে এলো প্রভাত।
কবি যখন শেষ করেন
দীর্ঘ অপূর্ব শ্লোক,
মুগ্ধ রাজা কবিকে বলেন
আজ আমি সার্থক।
কি উপহার চাই বলো
কোন মণি রত্ন,
সব আজ মূল্যহীন
করবো কেমনে যত্ন।
কবি কহেন আছি সুখে
চাইনা কিছু দামি,
রাজার কর্ম রাজা করুক
আমার কর্ম আমি।
দিতে যদি দাওগো রাজা
কণ্ঠের ফুলহার,
তাতেই আমি পূরণ হই
লাগবেনা উপহার।
রাজা বলেন গুণী সঙ্গ
ছাড়তে নাহি চাই,
আজ থেকে রাজ আসরে
তোমাকে যেন পাই।