কবি বেড়িয়েছেন  খুব ভোরে,
সদ্য স্নাত কবি পত্নী একা ছিলেন ঘরে l
সূর্য প্রণাম সারলেন, জুঁই ফুলের মালা চুলে,
ভোরের প্রথম সূর্য কিরণ তার সঙ্গে  মিলে,
তাকে অপরূপ শোভায় পরিপূর্ণ করেছিল l
একটি গোলাপী রংএর শাড়ি পরনে ছিল l
তাতে তার রূপে আর একটা মাত্রা যোগ হয়েছিল l
দীর্ঘদিন অসুস্থার পর আজ অনেকটা সুস্থ লাগছিল l
ঘরে কবি পত্নি একা, ছিলেন সন্তানহীনা রমণী l
তবে সে দুঃখ কাটিয়ে উঠেছিলেন কোনোক্রমে তিনি l


খোপায় লাগানো সোনার ফুলটা কোথায় ?
তিনি খুঁজতে লাগলেন দৃষ্টি পরে যেথায় ,
খুঁজতে গিয়ে আলমাড়ির ড্রয়ার খুললেন
ভাবলেন কত গয়না কি করে এই জীবনে পরবেন!
তিনি যতটা সম্ভব নিয়ে তা দিয়ে সাজলেন,
দীর্ঘ অসুস্থতার পরে অপূর্ব সকাল উপহার পেলেন l
তাই তার নতুন করে সাজতে ইচ্ছে হলো l
বাইরের পৃথিবীতে  তখন বসন্ত এসেছিল l
মনের গুঞ্জন আর কোকিলের কুহুতান ,
মনে হলো তারা এক রেখায় বহমান l


চাবিরগোছাটা দিয়ে আর একটা ড্রয়ার খুলতে
অতীতটা ভেসে উঠলো পারেননি ভুলতে ,
শুকনো ফুলের মালা !
মনের আঙিনায় যেন দিয়ে গেলো দোলা l
পুরোনো রাতের সানাইটা বাজলো আবার !
মনের কোনগুলোতে সুর বাজলো তার ...
আজ তো সেই তারিখ মধুমাখা !
হৃদয়ে আজো আছে  সযত্নে গাথা l
আজকের দিনে কবি তাকে রাঙিয়েছিলেন !
তার হাত ধরে সব ছেড়ে বেড়িয়েছিলেন l
সে অনেক বছর আগে ,
এই তারিখ কবির কি আজ মনে পড়ে ?
নিজের মনে গুনগুন গান গাইতে লাগলেন !
আজ কবি নিশ্চয় তার মনের  ইচ্ছে জানবেন l


দুপুরে কবি এলেন ,
কবিপত্নী আজ নিজের হাতে সব রান্না সারলেন l
দাসীর উপর আজকের দায়িত্ব দেননি কোনো l
আহার শেষে বললেন ডেকে ওহে কবি শোনো ,
সময় হবেকি আজকের দিনে শুধু !
কবি বললেন না বধূ...
গল্পের শেষ ভাগটা তাহলে বাকি রয়ে যাবে l
তারপর তা নিয়ে প্রকাশ করতে যেতে হবে l
অনেক কাজ আছে আজ ,
তোমাকে নিয়ে বলো কি কাজ ?
কথার চাবুকটা সজোড়ে লাগলো পত্নীর গায় ,
মুহূর্তে অন্ধোকার ঢাকলো চোখ বেদনার ঘায় !
কবি পত্নীর মাথাটা হঠাত ঘুড়তে লাগলো ,
তার কাছে সব কিছু বৃথা মনে হলো l
আজকের দিনের কথাটা কবি ভুললেন হেলায় ?
লেখা শুধু মূল্যবান , নই আমি, বড়ো কঠিন শোনায় l
কবির ঐ লেখায় কি ধন আছে,কি আছে যাদু ?
এ সংসার, জীবন, তার চেয়ে পেলেন অধিক মধু l
কবি পত্নি মেঝের উপর বসে কেবল ভাবলেন !
কিছু খেলেননা তিনি  শুধু ভেবে চললেন l
সময় গড়িয়ে চলল দুপুর হতে বিকেল হলো l
মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যায় চিন্তা এলোমেলো l


এমনি করে অনেকক্ষন হলো সময় পার l
দরজার ধাক্কার আওয়াজে সম্মতি ফিরলো তার l
দাসী এসে বললো ডাক্তারবাবু ডাকলেন ,
কোনোক্রমে কবি পত্নী তার সামনে এলেন l
ডাক্তার বললেন বউঠান বড়ো গোলমাল হলো ,
আজ কেনো রক্তচাপ বড্ড বেড়ে গেলো l
কয়দিন পূবর্ে দেখে গেলাম প্রায় সব ঠিক l
যত্ন করেননি দেহে তাপ অধিক l
অষুধ আমি দিয়ে গেলাম সময় মতো খাবেন l
সব ঠিক হয়ে যাবে ধৈর্য্য  ধরে রবেন l
হেসে কইলেন কবিপত্নি শরীরটা বড় জ্বালাচ্ছে ,
চাইছে ছুটি এসংসারে তাই এমন  হচ্ছে l
ডাক্তার বলেন বেশতো কদিন ঘুড়ে আসুন ,
পাহাড় কিংবা সমুদ্র একটা ভেবে দেখুন l
চেঞ্জ চায় শরীরটাযে একঘেয়ে সংসরে ,
সত্যি দেখবেন হবে মুক্তি  এই রুদ্ধ ঘরে l


কবিপত্নি মনে মনে হেসে শুধু বললেন ,
যে ছুটিতে যাব আমি,ডাক্তার নাহি বুঝললেন !
এদেহের ছুটি, আত্মার ছুটি, সংসার হতে বিদায় ...
যাব আমি অনেক দূরে এটাই শুধু উপায় !
মনে পড়লো অনেক কথা প্রথম প্রেমের সুখ l
আজ কেন সেসব স্মৃতি বয়ে আনে দুখ l
সুমুদ্রের বালিতে ছিলাম বসে  পাশাপাশি ,
অস্তরাগের সূর্য ছিল আনন্দ রাশিরাশি  !
কবি সেদিন বলেছিলেন এসমুদ্র এআকাশ ,
এই টুকরো সময় আর এলোমেলো বতাস ,
তোমার কবিতার খাতায় সাজিয়ে দিও !
আমাকেও এই  ঢেউএ ভিজিয়ে নিও !
কথাগুলো  কবি পত্নীর লাগছিল  দুর্বোধ্য,
কেমন করে লেখেন কবি এসব দিয়ে কাব্য l


আজ আমি লিখবো কবি পত্নি ভাবলেন l
যার দম্ভে কবি তাকে তুচ্ছ  করলেন !
কত দিন কলম ধরেনননি তিনি ,
কি দিয়ে করবেন শুরু বোঝেননি l
কি করে কবি প্রকাণ্ড আকাশ  নিজের করেন !
তা কখনো হয়নাকি ? খাতায় সূর্য ধরেন l
লিখতে তাকে হবেই মাথা হয়েছে নত l
অবহেলার অপমান লাগছে তীরের মতো l
কবির মতো সে ও একদিন….
তার কণ্ঠস্বর হয়ে এলো ক্ষীন l
চোখ যেন বন্ধ হয়ে আসে,
আঁধার ঘনায় তার চারপাশে l
তবু লিখতে হবে ….
অনেকটা পথ চলতে হবে l
কেমন করে লিখলে কবি হওয়া যায় ?
তার জন্য জানেননা কিবা করতে হয় l


অবশ শরীরে শুরু করলেন লেখা ,
হৃদয় উড়ে যায় আজ পেয়েছে পাখা ...
ভাবলেন সাদা পাতার পরে কোন মণি রাখবো ?
স্বর্গের কোন পারিজাতের শোভাখানি ধরবো ?
কোন মায়ারাতের চাঁদ কথা বলবে !
রূপকথা হয়ে তারা দীপখানি জ্বালবে !
ভোরের সূর্যটাকে টেনে তুলে আনবো ,
হৃদয়ের রং দিয়ে তাকে আজ রাঙাবো l
আরো কত প্রেম  ঢেলে কবি হওয়া যায় ?
সে খবর আমি আজ পাবো নিশ্চয় l
লিখে গেলেন  কত ভাবে নিয়ে কত ছন্দ ,
কবি পত্নীর হলোনা কভূ পছন্দ l
কবির মতো হয়না যেন  মনে চিন্তা ঘনায় l
লিখলেন আর ছিঁড়লেন  বিফল হয়ে যায় l
পছন্দ হলোনা তার এলোমেলো লেখা যতো ,
লিখলেন আর ছিঁড়লেন ক্রমে অবিরত  l
ক্লান্ত হয় দেহ খানি চোখ আসে বুজে ,
কান্না এসে হয় জমা লেখা আসেনাযে ?
কবি পত্নি ভাবলেন যোগ্য তিনি নন ,
এজীবনে পাবেন না কোনো দিন কবির মন l
অবহেলা অপমানে বিদীর্ণ হৃদয় ,
অন্ধকারে ভরা তার জীবন কণ্টকময় l


মেঝেতে লুটিয়ে পরে কাঁদেন অবিরত ,
ছড়ানো চারিদিকে কবিতার টুকরো যত l
অবশ হয়ে পড়ল শরীর ক্রমাগত ...
বেদনার চাবুক পড়ল শতশত !
গয়নাগুলো  কেন আজ লাগে বেমানান ,
কবির কাছে তিনি তুচ্ছ নেই সম্মান l
সমস্ত সাজ তিনি খুলে ফেলে দেন
ইষ্ট দেবতাকে তিনি মুক্তির কথা বলেন !
বোধহয় দয়া হলো তাঁর  মুক্তি সেদিন পেলো ...
পরমপুরুষের কাছে সে চলে গেল l
যেখানে আছে শান্তি , নেই অবহেলা l
সেইখানে ভেসে গেল জীবনের ভেলা !
সেখানে সবকিছু হওয়া যায় , মন যা চায় !
চাইলে কবিও হয়ে ওঠা যায় !
সেখানেতো নেই প্রতিযোগিতার খেলা ,
ছুটি পেলেন কবিপত্নী সাঙ্গ হলো মেলা !
মেঝেতে টুকরো টুকরো ছড়ানো কাগজগুলো ,
হৃদয়টাকে কবিরকি টুকরো করে দিল ?
সে খবর কেউ জানেনা , জানবেনা কোনোদিন l
হয়ে গেল কবি পত্নি আঁধারে বিলীন !!