18 নাম্বার কয়েদি….শুনতে পাচ্ছ...
জেলার ডাকলেন …
তোমার সাথে একজন দেখা করবে…
মানুষটি ধীরে ধীরে উঠে কাছে এলো l
চোখে মুখে  বার্ধক্যর ছাপ,
কিন্তু কঠোর ব্যক্তিত্ব l
এসে দাঁড়ালো আমার পাশে l
বলতে পারলোনা কতগুলো বছর কেটেছে !
এই চারদেয়ালের মাঝে l
জেলার বললো, প্রায় কুড়ি বছর হবে l
স্যাঁতস্যেঁতে ছোট্ট গুমোট অন্ধোকার ঘর l
তার মধ্যে এতোগুলো বছর !
শুধালেম নাম কি তোমার ?
ও বলতে গেল ১৮ নাম্বার…
আমি চুপ করিয়ে দিলাম l
বললাম ওটা নাম নয় তোমার ,
একটু মনে করার চেষ্টা করো ,
আমি সাংবাদিক তোমাকে সাহায্য করবো l
বলো কি চাও তুমি…..মুক্তি ?
খানিকক্ষন ভেবে নিয়ে উত্তর দিল ,
রোদ্দুর চাই রোদ্দুর…
বললাম মুক্তি নয়….রোদ্দুর !
রোদ্দুর কি ওর কাছে বেশী দামী !
মুক্তির চাইতেও…..
কথাটা কেমন যেন দুর্বোধ্য লাগলো l
ধীরে শুধালেম কি নাম তোমার বলো আমায় ?
কে তুমি…তোমার ঘর কোন মুলুকে….
সে নিরুত্তর রইলো l


জেলের তার কুঠুরিতে ছোট্ট উন্মুক্ত জানালা l
হঠাত করে লোকটির চোখদুটো খুশিতে
চিকচিক করে উঠলো l
এক চিলতে রদ্দুর এসে পড়ছে জানালা বেয়ে ,
ঘরটাকে ঝকঝকে করে তুলছে ,
কি খুশি তার চোখে মুখে !
দুটো হাত বাড়িয়ে রোদের সোনা
সে গায়ে মাখতে লাগলো !
চেঁচিয়ে বলতে লাগলো ,
রোদ্দুর চাই শুধু  রোদ্দুর ….
জেলার বললো, লোকটি বড়ো ভালো মানুষ l
ভারত মাতার বীর সৈনিক ছিল ,
পাকিস্থানি সেনার হাতে ধরা পড়ে কেমন করে,
সে খবর বলতে পারবোনা l
দেখি তার মুক্তির কোনো ব্যবস্থা হয় কিনা l
এতোগুলো বছর কেটেছে এই জেলে ,
কোনোদিন অবাধ্য হয়নি l
ওর এবার ছুটি দরকার…
ঠিকানা নেই নাম নেই !
শুধু বলে রোদ্দুর চাই !
রাত দিনের পার্থক্য জানেনা ,
কখনো রাতের অন্ধোকারে ,
রদ্দুর চাই বলে চেঁচিয়ে ওঠে !


ফিরে এলাম ঘরে, ভাবলাম...
ভারত মাতার এ কোন বীর সন্তান ?
ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে চলেছে !
এতোগুলো বছরে সে শুধু একটাই প্রাণ পেয়েছে ,
এক চিলতে রোদ্দুর !
যে প্রতিদিন এসে ধরা দেয় তাকে ,
তাকে ছুঁতে পারে, তার আপন হয়েছে !
তাইতো কোনো কোকিলের ক্লান্ত সুরে ,
কিংবা সমুদ্রের গর্জনের মাঝে ,
কিংবা কোনো ঝড়ের রাতে,
একটা কথাই  ভেসে বেড়াতে থাকে ….
কান পাতলেই শুনতে পাই
রোদ্দুর চাই রোদ্দুর !