পাথরের মাঠে ছেনি হাতে কাটে ,
রমানাথের প্রতি বেলা l
যাহা কিছু পায় পেট সে ভরায় ,
অভাব থাকেযে মেলা l
দিনে দিনে তার বয়সের ভার ,
দেহ হয় বড় শ্রান্ত l
জীবনের শেষে কি করবে এসে ,
চিন্তায় ভারাক্রান্ত l
পাহারের গায়ে হাতুড়ির ঘায়ে ,
বানায় সে দীর্ঘ পথ l
সারাদিন কাটে শুষ্ক ঐ মাঠে ,
নিয়েছেযে কঠিন শপথ l
দিন চলে যায় কষ্ট নিয়ে হায় ,
দেখবে সে পথের অন্ত l
অপেক্ষাতে রয় ফেলে সব ভয় ,
চোখ হয় বড় ক্লান্ত l
সহসা একদা পাথরের জমা গাদা ,
ভরলো রঙিন আলো l
কৌতূহল সে নিয়ে এক রতন পেয়ে ,
দুহাতে উপড়ে নিল !
পেয়ে সে রতন করলো তাহে যতন ,
নিয়ে গেল দুস্থ ঘরে l
গিন্নিকে ডাকি দেখালো সে রাখি ,
ঘরের মেঝের উপরে l
গিন্নি নিয়ে হাতে লাগলো তাহা ঘুরাতে ,
ঠিকরে পড়লো আলো l
দশ দিক ঘরে উঠলোযে ভরে ,
গেল আঁধারের যত কালো ।
আনন্দে শুধু তারা হোলো যে হারা ,
কোথায় তাহা তুলে রাখিবে l
রতনের রঙীন আলো আঁধার শুষে নিল ,
কেমন করে তা ঢাকিবে l
আনন্দেতে ভরে নাড়াচাড়া করে ,
দেখে তারে শতবার l
মনে মনে ভাবে এইবার তবে ,
অভাব রবেনা আর l
ঘরেতে ছিলো রাখা শুকনো তাল পাখা ,
অজান্তে গেল ছুঁয়ে ,
হঠাৎ সে পাখাটি সবুজ হলো একি ,
রতনের ক্ষনিক ছোঁয়া পেয়ে l
দুজনেতে দেখে বারবার রাখে ,
শুষ্ক যত পাতার পর l
সবুজ হয়ে যায় মণিটির ছোঁয়ায় ,
একি হয় চমৎকার l
কৌতুহল তার থামে নাতো আর ,
ছোঁয়ায় মৃত পিপীলিকায় l
সহসা পিপীলিকা গুটি গুটি একা ,
কোথা হেঁটে চলে যায় l
দেখিল তাহা দুজনে হয়ে একমনে ,
একি সব অপূর্ব দৃশ্য l
যেখানে মণি ছোঁয়ায় মৃত প্রাণ পায় ,
করিলে রতন যদি স্পর্শ l
যাচাই করিবারে ঘর হতে বাহিরে ,
বনের পথে সে যায় l
প্রাণহীন পাখি উড়ে গেল সেকি ,
রতনেরঐ ক্ষণিক ছোঁয়ায় l
বনের পথ বেয়ে চলে যায় ধেয়ে ,
দেখে সে শুষ্ক বৃক্ষ l
তখনি সে ওমনি ছোঁয়ায় সেই মণি ,
সবুজ হয় ওই শুষ্ক l
এমন এক সময় মানুষ ছুটে যায় ,
রাজারই ঘরের পানে l
সংবাদ যবে পেলো রাজা গত হলো ,
ছুটে গেল সেইখানে l
বলে সে হেঁকে রাজাকে দাও রেখে ,
পরশ করিব তাকে ভাই l
আসে যদি প্রাণ পাবো বড় মান ,
শুধু অনুমতি আমি চাই l
গেল সে পাশে রাজার গা ঘেঁসে ,
রতন লয়ে সে বসিল l
ছোঁয়ালো সে রতন করিয়া বহু যতন ,
প্রাণ তার দেহতে আসিল l
রাজা উঠে বসি দুনয়নে ভাসি ,
কহিলেন ওহে রমানাথ l
এ যাত্রাতে আজি ঘুচালে দুখরাজি ,
ধরো মোর আজি হাত l
সেই সুখ রাতি হলো ধনপতি ,
অভাব হলো যে দূর l
তৃষ্ণাখানি তার মেটেনাযে আর ,
ক্লান্তি গেল লয়ে সুদূর l
পাগলের প্রায় করে সে সঞ্চয় ,
সম্পদ অর্থ রত্ন যত l
মনির ছোঁয়ায় দুখ যে পালায় ,
অভাব হলোযে পরাজিত l
একদিন ভোরে স্নান করিবারে ,
এলো সে নদীর ঘাটে l
মনি খানি বেঁধে গামছা নিয়ে কাঁধে ,
আনন্দে সে সাঁতার কাটে l
ভাবে মনে মনে আজি শুভক্ষণে ,
জাগে মনে অপূর্ব বাসনা l
রতন ছুঁইয়ে ঘরে জাগাবো দেবতারে ,
পূরবে তার শেষ কামনা l
এতদিন ধরে ভুলেছি একেবারে ,
মোর দেবতার কথা l
বৃথা রত্নরাজি শুধু ভরেছি সাজি ,
আজ মনে আসে ব্যথা l
খুশির সীমা তার কোথাও ধরেনা আর ,
হবে আজ কামনা পূরন l
স্বর্গে করবো বাস ছিল মনের আশ ,
পাব তবে মধুর মরণ l
অজান্তে জলের মাঝে হঠাৎ পরলো সেযে ,
তার সেই অপূর্ব রতন ,
হারালো জলের তোড়ে রেখেছিলো বুকে ধরে ,
করেছিলো বহু যতন l
খুশীতে স্নান করে যখন উঠিল পারে ,
দেখে আর রতন নাই l
ভেসেছে জল স্রোতে হারালোতা এই প্রাতে ,
বাঁধা ছিল তার গামছায় l
তখন পাগল প্রায় রতন খুঁজে যায় ,
ভাসে সে নয়নের জলে l
পেলনা দেবের দেখা সবকিছু হলো ফাঁকা ,
মনোরথ গেল সব বিফলে l