বাবাদের কাঁদতে হয় না,
বাবারা পুরুষ। আর পুরুষেরা কখনো কাঁদে না।
তুমি কি কখনো কোন বাবাকে দেখেছ কাঁদতে?
ডুকরে ডুকরে, চিৎকার করে, চুপিচুপি কিংবা ভয়ে?
বা কখনো সকনো তোমার মতো না পাওয়ার বেদনায়ে!
কিংবা গভীর রাতে জানালার গ্রীল ধরে
দাড়িয়ে থেকে একটানা অনেকক্ষণ অকাতরে?
দেখোনি তো।
বাবাদের কান্না দেখা যায় না,
বাবাদের কান্নায় কোন শব্দও হয় না,
বাবারা বালিশে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে পারে না,
বাবারা হাউমাউ করে কখনো কাঁদতে পারে না।
চোখের লোনা জলের হয়তো অনেক দাম আছে,
তাই লুকিয়ে রেখে দেয় নিজের কাছে।
ব্যাংকের লকারে রাখা মূল্যবান সম্পদের মতো
যখন হবে প্রয়োজন
তখন যেনো ঠিক পাওয়া যায় হাতের কাছে কতো..।
নয়তো জন্মের সময়ের কান্নাটাই কেঁদে ছিল বেশি করে,
যাতে কখনোই কান্নার কোন প্রয়োজন না পরে।
কয়লার বাহিরটা কালোই থাকে,
ভিতরের পোড়া যন্ত্রণা বুঝা যায় কি?
হাসতে হাসতে বাবারা যন্ত্রণার বোঝা কাঁধে তুলে,
আবার হাসতে হাসতে সব ভূলে।
মাস শুরুর বেতনের টাকায় ক'দিন আর চলে,
তবুও মাসের শেষে একদিন দেখো বলে
লাগবে তোমার জামা আর খাতা,
হাসি মুখেই এনে দেবে, বুঝবেই না তারও আছে ব্যাথা।
সকাল এগারোটায় তোমাদের হালকা নাস্তা,
বিকেলে চিকেন স্যান্ডইউচ বা পাস্তা,
বাবাদের ওসব করতে হয় না চাইতেও হয় না,
বয়স বেশি তো, খেলেও বোধহয় হজম হবে না।
বাবার নাস্তার জমানো পয়সায়
বাবা আমার মুখের হাসি কিনেন সস্তা দরে,
বাড়ি ফিরেন চকলেট পকেটে করে।
রং উঠে যাওয়া শার্টটা পড়তে আমার লজ্জা লাগলেও
বাবার কেন জানি লাগে না।
সংসারের সবকটা মুখের অন্নের সংস্থানে
যার হাতের তালু পায়ের তলা ইস্পাত পাথরের ন্যায় কঠিন হয়
সে বোধহয় কাঁদতেই ভূলে গেছে।
তাই কাঁদতে পারে না। কান্না হারিয়েছে।
রাক্ষসী নদী সব কেড়ে নিয়ে গেলে সবাই কাঁদলেও
এই মানুষটাই কেবল কাঁদে না,
বেদনাতুর প্রিয় মানুষটার মুখের দিকে তাকিয়েও
দিব্যি হাসে ভেসে যায় না।
উৎসবে সবার জন্য নতুন জামা, জুতো, চুলের ফিতে
না পাওয়ার দুঃখটা আমার হয়তো ঠেকে তিতে।
সেই বাবা নামের মানুষটার দুঃখটা মুখে ফোটে ঠিকি
কিন্তু কান্না আমি কি করে দেখি!
শুধু দেখি সেই মানুষটার মলিন হাসি,
আর আমার মুখে তার আত্মতৃপ্তি খুশি।
০২/০১/২০২১
(কলকাতায় বসে লেখা)