সাতচল্লিশের দেশ ভাগের পর
গঙ্গার জল কতো হয়েছে এপার ওপার,
কতো ঢেউ আছড়ে পড়েছে নদীর দু'ধার
তাতে কারো ভাগ্য বদলেছে, কারো ঘর ভেঙেছে,
কারো কপাল পুড়ে হয়েছে ছারখার।


চক্রবর্তী বাবু দেশ ত্যাগ করেছিলেন সেই কবে!
ঘরের ভিতর কুঁপিবাতি চালিয়ে মশারী টাঙিয়ে
চুপিচুপি রাতের আঁধারে আটচল্লিশে,
আজ তিয়াত্তর বছর পর
দেখবে বলে ঠাকুরদার সেই "বাবুর বাড়ি"
ফিরলো তার-ই বংশধর স্বাধীন বাংলাদেশে।
দেখাটা মায়ার, ভালোবাসায় মেটানো মনের পিপাসা,
পথটা দূর না হলেও
এতো বছর পর বাধা, পাসপোর্ট আর ভিসা।
সব শেষে নদী পেরিয়ে কাদায় মাখিয়ে গা
যখন পৌঁছলেন ঠাকুরদার জন্ম ভিটায়, রাখলেন পা
তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধা ছুঁই ছুঁই,
দেখলেন অনন্ত যৌবনা কালীমন্দির এখন নগ্ন
কালের সাক্ষী বসতভিটার ধ্বংস স্তুপ
ভাঙ্গা ইট আর তার চারপাশে ক'টা নেড়ি কুকুর আছে নিশ্চুপ।
ঝোপঝাড় ঘন জংগল আর আগাছায় ছেয়ে গেলেও
স্বান্তনা, আজ এতো বছর পরও লোকে চেনে "বাবুর বাড়ি"
গেলে অন্তত চেয়ার পেতে বসতেও দেয়
কৃতজ্ঞতায় জুটে এক গ্লাস জল আর শুকনো মুড়ি।
ফিরে এসে গাড়িতে বসে যখন আমায় শুনাচ্ছিলেন
তাঁর ঠাকুরদার দেশ ত্যাগের গল্প
সন্ধার আধো আলোয় আমি তাঁর চোখে জল দেখতে পারিনি
তবে তাঁর ধরে আসা গলার ক্ষীণ স্বর আমার কান এড়ায়নি
শুনতে পেয়েছিলাম অস্পষ্ট অল্প অল্প।


পরে শুনেছিলাম কলকাতায় গিয়ে বউ বাচ্চাকে শুনিয়েছিলেন,
বাংলাদেশে তাঁর ঠাকুরদার সেই " বাবুর বাড়ি" ভ্রমনের গল্প
বউ নাকি ঠাট্টার ছলে বলেছিল,
"তুমি এতোদিনেও ওদেশের সাথে সম্পর্কটায় টানতে পারোনি দাড়ি!"
শুনে চক্রবর্তী বাবু বলেছিলেন, "কি করে ভুলি বলতো!
ওখানটাতেই তো পোঁতা আছে আমার বাপ ঠাকুরদার নাড়ী!"


৩০/১২/২০২১.
চট্টগ্রাম।


*গল্পটা সত্যিকারের কাহিনি নির্ভর। তাঁকে যখন এই কবিতাটা উপহার দেই, তখন তিনি অনেকক্ষণ নিরবে কেঁদেছিলেন। শেষে আমাকে জড়িয়ে ধরে পিট চাপরে ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন।