শূন্য পকেটে পৃথিবীতে বাঁচার চেষ্টা করা
আর বিনা অস্রে যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেকে আবিস্কার করা একই কথা।
দুটোতেই মরণ অনিবার্য।
প্রথমটায় মরার আগে মরবেন বহুবার। আর পরেরটায় একবারই যথেষ্ট।


স্কুলে বার্ষিক পরিক্ষার আগের দিন মেয়ের মাইনে দিতে পারিনি বলে ডেকেছিল।
হেড স্যার, মেয়েটার সামনে অনেক গুলো কড়া কথা শুনিয়ে শেষে বলেছিল,
"মাইনে দিতে পারবেন না তো এই স্কুলে ভর্তি করালেন কেন মশাই?"
বাবার অসহায়ত্ব দেখে মেয়েটা আমার অশ্রুসিক্ত চোখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।
কি দরকার ছিল বিধাতা তোমার? মেয়েটাকে তো ভর্তি পরিক্ষায় ফাস্ট না করালেও পারতে!
সেদিন প্রথমবার মরেছিলাম। এক অপদার্থ বাবা মেয়ের স্কুলের মাইনে দিতে পারে না।


পরের মাসে, রিনির মা মানে আমার স্ত্রীর ভীষণ শরীর খারাপ হলো।
গায়ে একশো চার ডিগ্রি জ্বর ছুঁই ছুঁই।
সাথে কাঁশি আর প্রচন্ড মাথা ব্যথা তো ছিলোই।
ডাক্তার দেখালাম।
এত্তো এত্তো টেস্ট দিল, তাও কষ্টে-শিষ্টে করালাম।
শেষমেশ ডাক্তার জানাল, মাথার অসুখ ছোট নয় বড়ই,
অপারেশন লাগবে, খরচ বেশি নয় টাকা লাখ দুই।
আমার আবার মরে যেতে ইচ্ছে করলো। কেন!
ঐ যে পকেট শূন্য, ফাঁকা।


গতমাসে, মহামারীতে চাকরি টা গেল।
মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
আমার তো তখন-ই মরে যাবার কথা,
বিধাতা হয়তো ভেবেছিলেন আরেকটু পাক ব্যথা।
আর এখন! গত ছ'মাসের বাড়িভাড়া বাকি!
বাড়িওয়ালা এসে নোটিশ দিচ্ছে রোজই।
"বাড়ি ছাড়।। নয়তো যাবার সময় রেখে দেব ঘটিবাটি।"
উপরন্তু, বাসার চাল ডাল নুন এমনকি যে উনুনের গ্যাস তাও ফুরিয়েছে।
গিন্নি, "বাজার কর, বাজার কর" তাগিদ দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠেছে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে কাকে যেন খুঁজলাম মনে মনে।
তাঁকে যেন জানাতে করলো নিজের অপারগতার কথা।
আমার বোধহয় মরতেই হবে।
স্ত্রী সন্তানের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দিতে পারে না যে স্বামী, যে বাবা, তারতো মরাই উচিত।
১৬/১১/২০২১.
ভারত।