প্রিয় প্রিয়তমা,
শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
আশাকরি ভালোই আছো, অধমে করেছো ক্ষমা।
চিঠি পেয়ে বেশ অবাক হয়েছো হয়তো, তাই না?
হাতে নিয়ে ভাবছো তুমি আমায় চিনো কি না!
আমাকে তুমি একসময় ঠিকি চিনতে,
বাইশটা বছর, সময়টা কি খুব বেশী ভূলতে?


যে কারণে চিঠি লিখবো ভেবে কলম ধরেছি আজ,
বলবো বলে বহুকাল তা বুকে রেখেছি যেমন থাকে তাজ।
কতোদিন ভেবেছি তোমাকে জানাই
আমার অব্যক্ত সব কান্নার লম্বা কাব্য,
আমার কষ্টটা কিছুটা হলেও লাঘব তো হতো
নাহয় করলোই পূর্ণ নব্য দুঃখ।


তাই লিখা।
তোমার মনে আছে?
তুমি মাঘ মাসের তীব্র শীতে কাঁথা গায়ে হাত ধরে
বনগাঁয়ের যাত্রা দেখতে চেয়েছিলে পাশে বসে।
আর আমি অবিবাহিতা মেয়ের হাত কি করে ধরি!
বাবা জানতে পেলে
নির্ঘাত কান বরাবর কয়েকটা থাপ্পড় দিতেন কসে।


তুমি চাঁদনি রাতে ডিঙি নৌকায় চড়ে
কড়াই বিলের লাল পদ্মফুলে
আমার সাথে করতে চেয়েছিলে ভরা জোছনায় স্নান,
আর আমি লোকলজ্জার ভয়ে সাহসী নায়ক সাজতে পারিনি
নৌকার বৈঠা আর ধরা হয়নি,
তোমার সদাহাস্যজ্বল মুখ কতবার করেছি ম্লান।


তুমি দ্বাদশ রাতে সব ফেলে এক কাপড়ে
শুধু আমার জন্যে তোমার চেনা পৃথিবীটা ছেড়ে
পাড়ি দিতে চেয়েছিলে অচেনা অনেকটা পথ,
আর আমি! আমি অজানার ভয় অক্ষমতার জেরে
সেই পথের পথিক হতে গেছি ভূলে,
প্রমাণ করেছি মিথ্যে ছিল সারাজীবন পাশে থাকার শপথ।


তার পর বাইশটা মাঘ মাস এসে চলেও গেছে,
শতশত ভরা পূর্ণিমার চাঁদ জোছনা দিয়ে একা একাই হেসেছে।
তোমাকে আর ভেজানো হয়নি,
লজ্জা সংকোচ তোমার সামনে আর দাড়াতে দেয়নি।


এখন আমি প্রতি শীতে যাত্রা দেখার ছলে নিরবে হাঁটি,
চোখ বুজে 'বা হাতের মুঠিতে তোমার অনুভব খুঁজি,
নৌকায় বসে একা একা জোছনা ধরি
ঝলঝলে আকাশের তারা গুলোকে স্বাক্ষী রাখি।
অনেক খুঁজে চিনে রেখেছি সবুজ ডাঙা
শুধু এখন আর তুমি নেই
আমারো আর হয়ে উঠে না নিয়ম ভাঙা।
বুক চিতিয়ে তোমাকে কেড়ে নিয়ে, নিয়ম ভাঙা যায়!
অনাদিকাল থেকে চলে আসা নিয়ম
আমি ভাঙি কি করে!
না আমার সাধ্য আছে।
ভালো থেকো দূরে বা কাছে।


ইতি,
তোমার...না, তোমার হই কি করে!---
"ক্ষণিক দেখা কেউ কপালের ফ্যারে।"
২১/১২/২০২০