একটা সত্যি কথা বলি? কিছুদিন
আগেও "ঋত্বিক ঘটক" নামক প্রবাদতুল্য
মানুষটাকে আমি চিনতাম না!
তাকে দীর্ঘ দুমাস ধরে স্টাডি করার
পর ভাবলাম এতদিন তাকে না জেনে,
না বুঝে,না চিনে আমার
বুঝি জীবনটাই বৃথা।
এখানে আমি ঋত্বিককে নিয়ে প্রবন্ধ
লিখতে বসিনি। ঋত্বিককে নিয়ে ১০০
পৃষ্ঠা লিখে যেতে পারব। কিন্তু
ঋত্বিককে নিয়ে বহুবার বহুভাবে
লেখা হয়েছে... তাই ভাবলাম
লোকটাকে নিজ-আঙ্গিকে দেখি।
সেই আঙ্গিক থেকেই এই লেখা।
ঋত্বিক ঘটককে আমি পছন্দ
করি বলবনা। বলবনা তিনি আমার
আদর্শ। আমি ঋত্বিক
ঘটককে ভালবাসি। কারন তাঁর
সাথে আমার চিন্তা-চেতনার
অস্বাভাবিক মিল রয়েছে। মানুষ যখনই
কোনো মানুষের সংস্পর্শে আসে তখন
তার ব্যাক্তিত্ব তাকে আকৃষ্ট করে।
কিন্তু ঋত্বিক ঘটককে চেনার
আগে থেকেই আমি যেন তার
চেতনা ধারন করেছিলাম।
ব্যাপারটা কাকতালীয় হলেও সত্য।
"তোরা আমার বড় ভালোবাসার ধন।
তোরা এই বাংলাদেশের অংশ।নবীন
বাংলাদেশ। আমিও একদিন নবীন
ছিলাম... অনেক আশা,বিশ্বাস আর
উৎসাহ পুঁজি করে একদিন
প্রেমে পড়ে গেলাম..."
সত্যিই তার চিন্তার
গতিবেগে দৌড়ানো আমার
পক্ষে সম্ভব হয় নি। এই কয়েকটা কথায়
তিনি তার বাংলাদেশের প্রতি সকরুন
অনূভুতি প্রকাশ করেছেন। ভবিষ্যৎ
প্রজন্মের
প্রতি তিনি আশাবাদী ছিলেন।
আবার তার ব্যক্তি জীবনের হতাশার
কথাও ফুটে উঠেছে।
এখন প্রশ্ন উঠতেই
পারে আমি তো "নীলকন্ঠ বাগচী"র
কথা বলছি। কিন্তু আমি বিনা দ্বিধায়
বলতে পারি "নীলকন্ঠ বাগচী" আর
"ঋত্বিক" এক ব্যাক্তি।
"তোমরা ভাবো। ভাবা প্র্যকটিস কর।
আমার তো কিছু হল না। দ্যাখ
তোমাদের দিয়ে যদি কিছু হয়..."
"নীলকন্ঠ লোকটা ৩০ বছর ধরে দুই
বাংলার সাংস্কৃতিক মিলনের
কথা বলে গেল। আজ যখন
তা এতটা কাছে... lost in the sea of
alcohol..."
হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন লোকটা ৩০ বছর
ধরে কাজ করে গেছে। কাউকেই
পাশে পায় নি। এমনকি নিজের
স্ত্রীকেও নয়। আমি alcohol বলব না।
প্রগাড় হতাশায় ডুবে মরল লোকটা।
লোকটার music sense ছিল
অসাধারন। অসাধারন শাস্ত্রীয়
সংগীতের কাজ দেখতে পাই
"মেঘে ঢাকা তারা" সিনেমায়।
আবার বাংলাদেশের লোকসংগীতের
অপরূপ ব্যাবহার "যুক্তি তক্কো আর
গল্পে"... "নমাজ আমার হইল
না আদায়" যে তার কি অপরূপ
সৃষ্টি তিনি নিজে কি জানতেন?
এটা আমার শোনা একমাত্র "বিশুদ্ধ"
বাংলাদেশী লোকসংগীত।
হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির ওপর তার
প্রগাড় ভালবাসা আমায় মুগ্ধ করেছে।
"ভেক নাচ"এর ওপর তার presentation
অসাধারন।
প্রত্যেকটা শিল্পীই তার সৃষ্টির কিছু
অংশ ধোয়াসা রাখতে পছন্দ করেন।
তিনিও রেখেছেন... তার কিছু
সিনেমায় ব্যাবহৃত নাচের বিষয় বস্তু
আজো বোঝা সম্ভব হয়নি।
তিনি নাটকের লোক ছিলেন। নাটক
অনেকে তার দুর্বলতা মনে করলেও
আমি বলব নাটক তার
সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ।
সবচেয়ে আগে এইটা ভাবাই শ্রেয়
তিনি গননাট্য আন্দোলনের নেতৃত্ব
দিয়েছিলেন। তিনি মানুষের জন্য,
মানুষের হয়ে কাজ করতেন। চাষির
জমি নিয়ে, দূর্ভিক্ষ নিয়ে,
তিনি ছাড়া এত গভীর ভাবে আর কেউ
কি ভেবেছে?
তাকে নিয়ে লেখার একটাই কারণ।
আমি নিজের
মাঝে "ঋত্বিক"কে ধারন করেছি।
আমাকে আমার
"ঋত্বিক"সত্বা শক্তি দেয়,
ভালোবাসা দেয়,সংযম দেয় ,
বিদ্রোহের ঝাঁঝালো রক্ত প্রবাহ
দেয়।
ঋত্বিক বলুন, নীলকন্ঠ বলুন আর ভবাই
বলুন... তাঁকে আমি প্রচন্ড ভালবাসি।