হৈমন্তী পাতা ঝরে বৃক্ষরাজির ক্ষুন্ন শুণ্য মনে,
প্রত্যয়ী তারা গজাবে নব পল্লবে সেই বাসন্তী অঙ্গনে!
হে সতীর্থ! ঝরে গেছে কত বসন্ত জীবনের দিনে-রাতে,
দেখেছি কি আজো নূতন সূর্য জঞ্জালক্লিষ্ট যুগের প্রভাতে?
কি করেছি আমরা ক্ষুধা-ত্রাস-দুর্নীতির ক্ষয়িষ্ণু প্রেক্ষাপটে?
আপন স্বার্থ-নিমগ্নতায় দেখিনি কিছুই-দুঃসময় সংকটে!
শুনিনি নিসর্গের অগ্নিজ আর্তি, দেখিনি রক্ত ঝরা টিয়ার বুক,
উদাসীন দেখিনিঃ ছিন্ন বোনের নগ্ন দেহ অথবা ঝলসানো মুখ!
প্রায় অনিয়মের বিদ্যাপিঠে আমরা আছি যারা শিক্ষক-
আত্মঘাতী প্রায় ব’নে যাই সবাই যেন বন্ধ্যা জমির কৃষক!
রক্ষক প্রায় ভক্ষক হয়ে আছি যারা প্রশাসক-অফিসার,
স্বপরিবারে ঘুরি এসি কারে-আদায় করি ন্যায্য অধিকার!
সে গতিতে উড়ে বস্তি, কাঁপে কংকালসার ছিন্ন মূল,
ভাঙ্গে কত ফুলশয্যা, জীবন কাটায় কেউ মৃত্যু সমতুল!
এ ছাড়া করি যারা নানা নামে নানা পদে সমাজের নানা কাজ,
সেবার নামে পকেট ভরি, উপরে ওঠার সিঁড়ি গড়ি-মস্ত ধান্দাবাজ!
বস্তিতে, দরিদ্র পল্লীতে অন্ধকার কিন্তু ঠিকইঃ “ক্ষুধার মাণিক জ্বলে,”
নগ্নপ্রায় মেয়ে, হাড্ডিসার ছেলে, শালুক কুড়ায় আজো বিলে- ঝিলে!
বুড়ো স্বামী নিয়ে পাথর ভাঙ্গে ফুলি ঠিক অশ্রুভেজা ভিখঝোলা,
আজো তামাটে কৃষক-শ্রমিক তাকায় সজল চোখে- আত্মভোলা!
কারো সম্পদ হয়তো ঠাঁই পেয়েছে আমাদেরই কারো পকেটে,
দেখছেন সবই সর্বদর্শী পরমপ্রভু- কি করছি ভ্রান্তি- বিভ্রাটে!
কারো ক্ষিপ্র গতিতে কাঁপে রাজপথ, আবার চলে গেছে অনেকেই
কেউ রোগক্লিষ্ট প্রহর গোনে- হয়তো চলে যাবে বিনা নোটিশেই!
আজ ভয়ংকর ভায়োলিনে শুনি: কিশোরী পতিতার কক্ষবন্দী চিৎকার,
ডেড বডি সেজে মুখ বুজে সইঃ পীড়ক, ধর্ষক, ঘাতক- এ সভ্যতার!
চেতনা গ’র্জে ওঠে বজ্রের শিখায়, বেড়ে যায়ঃ ক্ষোভ-দ্রোহ-দুর্গতি,
জিঘাংসু প্রকৃতি তাই ঢালবেই রোষাগ্নি, সভ্য-অসভ্যের প্রতি!
তাই হে সতীর্থ! এসো বাকী দিন গুলোয় রেখে যাই সামান্য অবদান-
যাতে তৃপ্ত হবে দেশ-জনপদঃ অবক্ষয়ের প্রেক্ষিতে জানাই আহ্বান!