কি গো দিদি,,কেমন আছ,,
বিদেশের এই তুষার ঢাকা পথে
দেশের শিশিরের ঘ্রাণ কেমন পাচ্ছ,,,?
কেমন আছে তোমার কোলের বিড়াল,,
যাকে দেশ থেকে নিয়ে আসলে,,
সে খুব ভাল আছে বুঝি,,,
দেশের কড়াই গরম দুধের স্বাদ
সে কি প্যাকেট জাত দুধে পাচ্ছে?


কি জানি ভাই,,কেমন আছে জানি মা
তবে যে কক্ষে বসে আছি,,সেই কক্ষের টিভিটায়
আর রঙ্গিন ছবি দেখা যায় না,,,
কেবল সাদাকালো ছবি আসছে একের পর এক,,।
দেশ থেকে যে সুটকেস টা নিয়ে এসেছিলাম
তা এখনো খোলাই হয় নি,,,,
খোলেই বা কি করব ভাই,,
দেশের রঙ্গিন শাড়ি কি আর এখানে পরা যায়?
শাড়ি পরা দেহ যদি কালো জ্যাকেটে দিতে হয় ঢেকে
তাহলে শাড়ি পরাই বা কেন,,
কেবলি শখের চিহ্ন বিদেশে বহে নিয়ে বেড়ানো!!
তাই  শাড়ীর চেয়েও রঙ্গিন সিঁদুরটা কপালে
আর পরি না,,
হাতের শাখাটাও পাথরের বাধাই শিকল মনে হয়
না পারি ভাঙ্গতে,, না পারি খুলতে।
জানো দেশ থেকে আনা সুটকেসের ভেতর একটা
সুন্দর বক্স নিয়ে এসেছিলাম,,স্বপন বক্স,,
যেখানে হাজার হাজার সকালের রঙিন স্বপ্ন
দুপুরের তরতাজা স্বপ্ন,,
রাতের অন্ধকারের উজ্জ্বলতার স্বপ্ন সাজানো আছে।
কিন্তু বক্সটা বোধহয় ভুল জায়গায় চলে আসলরে,,,
ভুল জায়গায়,,,।
দেখনা গতকালও একটা কাঁচের গ্লাস,,ভালবাসার হাতে
পরিষ্কার করতে গিয়ে ভেঙ্গে ফেলে দিয়েছি,,,
সব ভালবাসা না ভালো হয়,,,না ভালো পায়,


যাকগে মনে হচ্ছে আকাশ দিয়ে
একটা বিমান যাচ্ছে ভাই,,
যত দূর দিয়েই বিমানটা যাক না কেন
তার শব্দ আমার ঘরে আসবেই,,,।
ভয় হয়,,বিমানের শব্দ শুনে বক্স না আবার
জিজ্ঞাসা করে কি গো বিমানটা কি
দেশে ফেরত যাচ্ছে?
কি বলি ভাই,, বল তো,,
দীর্ঘ পনের বছরের অপেক্ষার আদর  খাওয়া বক্স
যদি এত তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করে এমন প্রশ্ন
তাহলে কি বলি বল?
কীভাবে তাকে বুঝাই,,আকাশে উড়া সব বিমান
মুক্তির দেশে কেবল নয়
পরাধীনতার জন্যেও,,, দেয় উড়াল।
আমাদের মত প্রবাসীর স্ত্রীদের বিমান তো
না দেয় মুক্তির জন্য উড়াল
না দেয় পরাধীনতার  জন্য,,।
দেশে বসে হয়ত কোন দিন ভাবি নি ভাই
বিদেশে মাতাল মানুষ কতটা মাতাল হয়,,ঘরের ছায়ায়,,
কত সহজে ভেঙ্গে ফেলে আদরের কাপ,প্লেট,,সব সবকিছু?


উত্তর,,,এর উত্তর কোনদিন কি জানতে পারব রে?
হয়ত পারব না,,হয়ত পারব,,তবে শুনে রাখ ভাই
আঁধার আসলেই সূর্য চলে যায়,,
নাকি সূর্য চলে গেলে আঁধার আসে,,
এর উত্তর জানি নারে,,,তবে
ইচ্ছে করে মা,, ঠাকুরমার মত
আমিও আবার গলায়,,মঙ্গল সূত্র টা
দেখিয়ে দেখিয়ে পরি
আবার চেষ্টা করি,, কপালে সিদুরের দখলটাকে
এই বড় বড় করে দেই,,
আবার গায়ে লিখে দিই,,,,আমি সদ্য বিবাহিত
আমার স্বামী আছে,,আমার পতিদেব আছে
আমার নারীজীবনের ভগবান আছে,,
কিন্তু কেন জানি পারছি না ভাই,,
যে আয়নাটা মনের দেয়ালে দাঁড়িয়ে ছিল,
সেই আয়নাটাই টাস টাস করে কেন ভেঙ্গে যাচ্ছে,,?
কেনরে,,,,কেন ভেঙ্গে যাচ্ছে,,যতনে রাখা
এমন সব জীবনের উপাদান?


এই দেখ,,তোর সাথে কথা বলছি,,
আর ওমনি হাত থেকে পড়ে চশমার গ্লাসটাও
ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল,,
এতদিনের চশমার গ্লাসটা এভাবে ভেঙ্গে গেল ?
আচ্ছা ভাই গ্লাস ভাঙ্গলে
সেই গ্লাস যদি মাটিতে পুতে দেই,,
সেখান থেকে কি নতুন কুড়ি দিয়ে কোন কিছু জন্মাবে?
নাকি দেশের মত এই বিদেশেও
লোকে বলবে,,,কাঁচ ভাঙ্গলে কি আর জোরা লাগে?
তাহলে দেশ বিদেশের পার্থক্য টা কি নাই ভাই
সবই কি এক?
একই হবার কথা ভাই,,একই হবার কথা
নারীদের কপালই যেখানে ভাঙ্গা
সেখানে জোরা না লাগারই কথা,,
আমাদের দেখে যেখানে নদীর জল শুকিয়ে যায়
সেখানে বর্ষায় বর্ষা না থাকারই কথা।


আচ্ছা শুন ভাই,,
জলেতে জল থাকুক আর নাই থাকুক
পুরাতন চশমা ভাঙ্গার এমন নতুন সংবাদ যেন
দেশের বিমান ধরে না যায়,,, দেশে,।
জানস না  কত শত হাজার স্বপ্ন যে
লেগে আছে এই চশমাটায়,,
তাদের এমন মৃত্যু শুনলে সবাই যে
কষ্ট পাবে ভাই,,,
আর কেউ যে স্বপ্ন লাগিয়ে রাখবে না
মেয়ের চশমায়,বোনের চশমায়,
তাই সবাই যেন জানে
এখানে শুধু আলো আর আলো,,
আলোর পাশে আলোরই লাশের এত বড়
অন্ধকারের সংবাদটা যেন
কোন দিন না শুনে ভাই,,আমার মা
আমার বাবা,,,আমার ভাই,,আমার বোন
আমার দেশের মানুষ,,,
শুনেছি আরবের দেশে কাজ করতে যাওয়া
আমার দেশের বোনেরা নাকি ধর্ষিত হয়
মালিকের ধর্মীয় বিশ্বাসের শিকড় চেতনায়,,
আমার দেশের বোনেরা নাকি
সেথায় যৌনদাসী হয়ে বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়
মৃত্যুরে আলিঙ্গন করে,,,
কিন্তু হেথায়,,এই শীত শীত আভরণের দেশে
কতটা গৃহদাসী হয়ে,,বাঁচতে হয়
স্বর্গ পাবার তাড়নায়,,তা কি কেউ জানে ভাই?
কতটা মৃত হয়ে মেনে নিতে হয়
দেশিয় মানুষটির বিদেশি অত্যাচার,,?
এখানে মড়া ফুলটার পুরুনো ছবিটাকে এডিট করে
নতুন বানিয়ে,,জীবিত বলে বলে
ফেসবুকের মত জীবন বুকের টাইমলাইনে
সদাই রাখতে হয় স্ট্যাটাস দিয়ে,,,
ওগো ফুল ভাল আছে,,ফুল জীবিত আছে
ফুল হাসিতে আছে,,ফুল আনন্দে আছে
ফুল বাঁচতে আছে,,,
কিন্তু কেউ জানবে না ভাই,,,
কেউ বুঝবেও না,,ফুলটা চোখের জলে সধবা হয়েও বিধবার জীবন মেনে নিয়েছে,,শিকলের দায়ে।
মেনে নিয়েছে,, হাড়ি পুড়া ভাত,,হাড়িতেই
বাকী কয়েকটি জীবনের অন্নের দায়ে,,
লবণ মাখা হাত মেনে নিয়েছে কাটা গায়ে
বাকী কয়েকটা জীবন,,পিতৃ হাতের ছায়ায় রবে বলে?
মেনে নিয়েছে  এক আগুন আগুন খেলা
বাকী কয়েকটা জীবন শীতল রবে বলে,,


কিন্তু কীভাবে মানব বল তাদের সেই খবর
দেশে রেখে আসা
আমার আকাশ,আমার সাগর জল
আমার দেবদেবী,,আমার বাল্যকাল
আমার যৌবনের সেই সকাল,,
আমার খেলার পুতুল,,,সদা রঙ্গিম টিভি
এক চুমুক উষ্ণ চা,,,রাতের আড্ডা
সব,  সব  যদি চলে যায় জীবন্ত কবরে
আমার প্রবাসের এই খবর শুনে,,।
তাহলে দেবতাই যে অসুর হয়ে যাবে ভাই
অমৃতই হয়ে যাবে বিষ আমার
জীবনের সমস্ত সংবিধানে,,,।


ওই দেখ ভাই, ওই পথিকের
ছাতাটা বৃষ্টিতে ভিজে হয়ে যাচ্ছে একাকার
তবু একফোটা জল ছুতে দিচ্ছে না পথিকের গা,,
আমি না হয় এমনি ছাতা হয়ে রইলাম
তুফানময় এই জীবনে,,,!
ভাল থাকুক না পথিক,,,
পথে পথে,,,ভাল না থাকারও দিনে।
আমি কেবল ভিজে ভিজে
ছাতা হয়ে বেঁচে যাই
ঝড় বৃষ্টি আর বজ্রপাতের সনে।


এক নারীর শ্মশান জীবন দেশেও যা
বিদেশেও তা,,
ব্যবধান শুধু,,ব্যবধান হীনে।