(অনেক লম্বা,সময় না থাকলে পড়বেন না)


দাদা,,নমস্কার,, কেমন আছ? আমাদের ঘরে রান্না শেষ।তুমি খেয়েছ দাদা? মা রান্নাঘরে থালা বাসন মাঝছেন! শব্দ শুনতে পাচ্ছ? পাচ্ছ না! কেমনে শুনবে দাদা,,,এত দূর থেকে কি কোন শব্দ শুনা যায়?
আচ্ছা দাদা তুমি যে টাকা পাঠিয়েছিলে,, গতকাল ব্যাংক থেকে তুলেছি।লোহার ব্যাংক থেকে তোমার নরম টাকাগুলি আমার নরম হাতেই তুলেছি।
তুমি যা যা বলেছিলে ঠিক তাই করেছি।ওই তো বড়দিকে দুখান শাড়ি,,মেঝদির মেয়েটার জন্যে দু কৌটা দুধ,,,,আর আমার জন্যে একখান শার্ট কিনেছি দাদা।জানো শার্ট টার উপরে ইংরেজি অক্ষরের এস লিখা অনেক গুলি।কোম্পানি গুলিও না কীভাবে জানে আমার দাদার নাম সোয়েল।কেমনে জানে দাদা কেমনে?
মাকেও একটা শাড়ি কিনে দিয়েছি।মা নিতে চাননি ,,, বার বার বলছিলেন তুমি দেশে এসে কিনে দিবে নিজ হাতে! কিন্তু সে যে কবে হবে তা মা কেন স্বয়ং ঈশ্বরও বোধ হয় জানে না।জানবে কি করে দাদা জনম ভর কপাল পুড়াদের খবর ঈশ্বরের কাছে পৌছায় না।কখনো পৌছায় না,,,মাটির নিচে পানির খবর আকাশের বৃষ্টির জানার কোন দরকার যে নেই।
দাদা জানো,,ঘরে কোন ছবি নেই তোমার,,আমি রাখি না।রাখলে মা রাতের ঘুমটা ওই ছবির উপরেই ঢেলে দেন।কত্তবার বলেছি মাকে,,এভাবে সজাগ না থাকতে।কিন্তু কে শুনে কার কথা! তুমি নাকি মা পাশে না বসলে ঘুমাতেই না,,মার হাতের তাল পাখার বাতাস না খেলে দুচোখ ভরে তোমার কভু নিদ্রা আসত না,,তাই মা বসে থাকেন।বসে বসে পাখার গায়েই আঁচল দিয়ে বাতাস করেন,,,কেন করেন দাদা,মা এই কেন করেন?
আর বাবার কথা কি বলব? মাঠ থেকে এসেই,, সোয়েল কইরে,,, ও সোয়েল,, বলে ডেকে উঠেন।প্রতিদিন একই ভুল করে বলেন,, দেখ দেখ আমার মনেই থাকে না আমি এখন প্রবাসী ছেলের পিতা!!কি সৌভাগ্য আমার কী সৌভাগ্য বলেই তোমার লাগানো বটগাছটার নিচে গিয়ে বসেন।কেন যে বসেন তা জানি না দাদা,,,তুমি জানো? জানো কী?
   দাদা তুমি কোনদিন বাবাকে কাঁদতে দেখেছ? দেখনি! তাই  না?আমিও আগে ভাবতাম বাবা
কাঁদতে জানেন না।কিন্তু জানো প্রায়দিনই ঘুম থেকে উঠে বাবা তার বালিশ খানা রোদে শুকাতে দেন,,এখনো দেন। বালিশ টা যে তার কেমনে ভিজে দাদা? কেমনে ভিজে? এত সুন্দর ঘর,বাড়ি,হাড়ি ভর্তি খাবারের মাঝে কেন যে বাবাকে প্রতিদিন বালিশ শুকাতে দিতে হয়?  তা আমি জানি না।তবে আমিও মাঝে মাঝে বাবাকে নয় মায়ের ঠাকুর ঘরে গিয়ে ঠাকুর কে জিজ্ঞেস করি,রাজ প্রাসাদেও কি দু:খ থাকে ঠাকুর? কান্না কি স্বর্গেও থাকে?
হা,হা,,না দাদা,, না,, কোন উত্তর ঠাকুর দেন না,,আমিও যা বুঝার বুঝে নেই,,,নিরুত্তর তো সম্মতির লক্ষণ।তাই না দাদা তুমিই তো এই শিখিয়েছিলে,,,কোলে বসিয়ে আঙুল ধরে ধরে শিখিয়েছিলে বইয়ের পাতা হতে জীবনের পাতা।শিখিয়েছিলে পাশের বাড়ি হতে পোলাও কুর্মার গন্ধ আসলে কীভাবে নাক বন্ধ করে রাখতে হয়? কীভাবে চোখের সামনে অন্যের দরজা বন্ধ করা দেখলে বড় করে শ্বাস নিতে হয়,তুমি শিখিয়েছিলে চোখের কোনে কান্নার জল কীভাবে আটকিয়ে রাখতে হয়,,,।আমি বেশ ভালো শিখেছি,,,বেশ ভালো শিখেছি ঠিক তোমার মত,,,


তাই না! কত কথাই তো তোমাকে জিজ্ঞেস করি কভু তো উত্তর দাও না?
যারা মাথার উপরে থাকে তারা এমনি তাই না দাদা?উত্তর দেওয়ার সময় যে কাজের সময়ের হাতে বন্দি!!
শুনো তুমি যে টিভি কিনিতে বলেছিলে তা কিনেছি।অনেক বড় টিভি।এত বড় টিভি এই মহল্লায় আর নেই,,,জানো টিভিটা দেখতে পাড়ার লোক সবাই ছুটে এসেছে।মা বলল এই ভাবে নাকি আমাদের বাড়ীতে আগে কোন কাকের দলও আসে নি,,,তোমার আমার জন্মের খবর শুনে কোন পিপীলিকার দলও নাকি এভাবে আসে নি,,অথচ কী সৌভাগ্য আমাদের আজ সবাই আসল,,,


কিন্তু টিভিতে এসব কি দেখায় মেঝ দা,,,
পুলিশ,সাংবাদিক,ডাক্তার,উকিল,,,মাস্টার,প্রফেসর, কত কী! কিন্তু আমি বুঝি না দাদা একেবারেই বুঝি না,,মা-বাবা কেন তাদের দিকে তাকিয়ে কেঁদে উঠেন। কেন টিভি দেখ বুকের ভেতরটার ভাষা আর বন্দি করে রাখতে পারেন না?
  আর তাই বুঝি টিভিটার ঠিক উপরেই একটা বাক্সে তোমার সমাবর্তনের কিছু ছবি মা তালাবন্ধ করে রেখেছেন,,,কেন রেখেছেন তাও জানি না,,টিভিটার পাশেও তোমার সেই গীটারটা মা ত্রিশূল এর মত সাজিয়ে রেখেছেন,,টিভিটার পাশেই তোমার পাওয়া নানান খেলার নানান পুরুষ্কার গুলি মা আশীর্বাদ এর মত গুছিয়ে রেখেছেন।এমনকি তোমার রক্তমাখা একটি ছোট্ট গেঞ্জি সেথায় সুন্দর ভাবে মায়ের সেবা যত্ন নিচ্ছে। শুনেছি ছোট কালে তুমি নাকি হোচুট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলে,,সেই হোচুটের রক্তাক্ত দাগ খানি এখনো মা ভুলতে পারেন নি,পারবেন কি করে,, উনি যে মা! তাছাড়া রক্তের বন্দনের মতই রক্তের দাগ যে ভুলা যায় না দাদা!! এই দেখ বাইরে বোধহয় পাশের বাড়ির পিচ্ছিটা মা মা বলে কাঁদছে,,আর ওমনি মা দৌড়ে চলে গেলেন সেথায়! আচ্ছা দাদা তুমি কি এখন হোচুট খেয়ে পড়? রক্তাক্ত হও?
হয় বুঝি?
অসুখে বিসুখে তোমার মুখ দিয়ে কি বের হয়ে যায় ও মাগো!তুম কি কল্পনায় দেবতার নাম নিতেই ভুল করে নাও মায়ের নাম,,
আর যার জন্যেই মা টিভি দেখতে পারেন না,,
দেখলেই অবাক চোখে তাকিয়ে চোখের জল ফেলেন অঝরে,,,।কেন দাদা কেন? টিভিতে দেখানো পুলিশ,মাস্টার,ডাক্তার মানুষগুলি কি তুমি হবার কথা ছিল ? তুমি কি মায়ের কাছে কোন শপথ করেছিলে?দাদা তুমি কি সেই শপথ ভঙ্গ করেছ?ভুলে গেছে সেই শপথের সাথে তোমার আজন্ম লালিত স্বপ্ন!আর কেউ জানুক আর না জানুক তোমার পড়ার টেবিল চেয়ার টা যে খুব ভালো করে জানে, তোমার টিউশনির টাকায় কিনা গীটার টি যে সেই স্বপ্নের কথা জানে,,আর জানি আমি,,,
তাই তোমাকে বলছি,,
আমাদের হাড়িতে এখন ভাত রান্না হয় দাদা,ভাত রান্না হয়,,,এখন আর দুয়ারে বসে দাঁড় কাক গালি দিয়ে চলে যায় না।এখন আমাদের ঘরের ছালায় বৃষ্টি আসতে করুনা করে না,,,আমাদের ঘরের গাভীটার মুখেও এখন পর্যাপ্ত ঘাস,,
তাহলে এবার তুমি চলে আসো দাদা,চলে আসো তোমার শপথের কাছে,,আমরা কভু আর শীতের মাঝে খালি গায়ে কাঁপব না দাদা,কথা দিলাম পরজনমেও কভু কাঁপব না,ক্ষুধার জন্যে কাঁদব না তবু তুমি ফিরে আসো?ফিরে আসো দাদা,ফিরে আসো,,।এসে টিভিটার পাশে একটু দাড়াও দাদা,,,দাঁড়াও।টিভিতে দূর দেখতে দেখতে আমরা যে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি দাদা খুব ক্লান্ত!এত দূরত্ব ঘরে বসে দেখা আমাদের শ্বাস কেড়ে নিতে চায় দাদা!
আসবেতো দাদা?আসবেতো তুমি?
নাকি ফিরিবার পথে শুধু পাহাড় আর পাহাড়,,জ্বলন্ত লাভার পাহাড়।নরক থেকে স্বর্গের ব্যবধান,,,যা টিভির মতই খুব কাছে দেখায় বস্তুত বহু দূরে,,ভিন্ন গ্রহ থেকেও দূরে।ফিরিবার পথ কি এমনি দাদা?এমনি?টিভিটার মতই কাছ দূরের মায়াবিনী?