( লকডাউনের কবিতা,,,,)


অনেক রোদ বাইরে,,একেবারে যে
ঘর থেকে বের হওয়া যায় না তা কিন্তু নয়।
তবু এর মাঝেই ট্রেন গেছে থেমে
বাসের চাকায় বসে গেছে পাথর,,
সরবতার ঘর দখল করে নিয়েছে নীরবতা।
দিনের আলোর মুখে রাতের বাতির যেন
জোর জবরদস্তি অবস্থান।
পথের ধারে যে খেজুর গাছগুলি ছিল,,
সেগুলির ফলের উপর
লোহার আভরণ বসিয়েছে মালিকের দল।
কিন্তু আভরন মানে না কেবল একজন
এসব বুঝেই না কেবল একজন,,
ওই যে মোবাইল,,,,দেশের মোবাইল
যার ভেতর দিয়ে চলা ফেরা করা দেশ বিদেশ
সেথায় তো গাড়ি চলছে বেশ!
সেথায় তো মেশিনের ভেতর তেল করছে বিদ্রোহ,,!
সেথায় বৈশাখের বন্যার মত বাঁধ ভাঙ্গার প্রতিযোগতা
সেথা হতে কথা আসছে রোজ,,
সেথা হতে আবেদন আসছে রোজ,,
ঘরের চালার ফুটো বড় হয়ে গেছে,,
কিছু পাঠাও,,! ফুটো যে রুখতে হবে
নইলে ফুটো দিয়ে প্রবেশ করবে,অসুর
অসুরের হাত ধরে প্রবেশ করবে শনি
শনির হাত ধরে প্রবেশ করবে যমরাজ,,


যমরাজ শব্দটি কানে বাজতে না বাজতেই
টিভিতে ভেসে উঠছে
হাজার অভুক্ত শিশু,,মৃত্যু খাচ্ছে পেঠের ক্ষুধায়
আশ্রয়ের খোজে হাজার মাইল পায়ে হেটে
রওয়ানা দিয়েছে তিন বিছরের বালক,,,
হাটতে হাটতে পথের বুকে দাড়িয়ে থাকা
খুন দেখার বিনোদনে,,সমর্পিত হয়েছে নবজাতকের মা।
ঠিক এই সব ছবি দেখেই,,চোখ বন্ধ করে,
হাতের কাছে সিগারেটের প্যাকেটের ভেতর
হাত ঢুকালো  মনির।
না সেখানে কোন সিগারেট নেই
ছবি দেখতে দেখতে রান্না ঘরের ভেতর
চোখ ঢুকালো পরেশ।
না সেথায় হাড়িপাতিলের চিহ্ন ছাড়া
আর কিছুই নেই,,
এই ছবি দেখতে দেখতে ঘরের ভেতর
নাক ঢুকালো হরি
না সেখানে চোখের জল ভিন্ন কোন বাতাসই নেই।
না,, না কিচ্ছু নেই, কোথাও কিছু নেই
গাছের কাছে গাছ নেই
জলের কাছে জল নেই
কুড়ালের কাছে কুড়াল নেই
মাটির কাছে মাটি নেই।


তবু আবার,, হ্যা হ্যা আবার
ফোনটা করে উঠল চিৎকার।
বেশ গরম সুরেই বলল
বাড়িতে ইদুরের পেটেও অন্ন নেই অনেক দিন ধরে
কয়েক ব্যাগ কাগজ পাঠাও,,বাঁচতে যে হবে।
পুকুরের মাছ গুলি করেছে বিদ্রোহ,,
জলে নাকি শ্যাওলা জমে নি গতবারের মত
আরে বেশি না পারো,,, কিছু শ্যাওলাই পাঠাও,,।


স্তব্দ হল মনির,স্তব্দ হল পরেশ,স্তব্দ হল হরি
তবু টিভিটা বলেই চলেছে
লকডাউনের দূরত্ব বজায় রাখুন,,ঘরে থাকুন
অযথা বাইরে বের হবেন না,,ভীর জমাবেন না।
পাশের রুমের টিভিতে শুনা যাচ্ছে
সিরিয়ায় আবারো একের পর এক
বোমা পড়ছে আকাশ থেকে
সাগরের জল উঠে আসছে জাপানে
আগ্নেগিরির ছাইয়ে ঢাকা পড়েছে ইন্দোনেশিয়া,,
সন্ত্রাসীর হাতে পথে ঘাটে মারা গেছে
অনেক নিরীহ জনতা।
সাথে যোগ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার দাবানল
যোগ দিয়েছে বাদুরের রাত্রি উপদ্রব আর
পঙ্গপালের মুখে নিরন্নের সংকেত।
অন্য কোথাও কারো মোবাইলে বয়ান দিচ্ছেন
এক হুজুর,,,
এটি ভাইরাস নয়রে,,, ভাইরাস নয়।
এটি আল্লাহর সৈনিক।
শুধু মারা যাবে বিধর্মী আর কাফের।


মনির মাথাটা উচু করে বলল আমি কাফের
পরেশ,, আচ্ছা সন্ত্রাসীদের কাছ
ঠিকানা পাঠানো যায় কীভাবে?
হরি আকাশের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে মেঘের ফাঁকে ফাঁকে দেখে নিল অনেক সিরিয়া
ঠিক তার মাথার উপরেই,,।
কিন্তু বোম কোথায়? মৃত্যু কোথায়?
না কোথাও কোন মৃত্যু নেই
আত্মহত্যা আছে,,খুন আছে,,
প্রকৃতির প্রতিশোধ আছে,
তবে মৃত্যু নেই।


চারদিকে আছে গরমের উপর গরম,,
আছে মাটির বালুকনার সাথে সূর্যের গলাগলি
যেন মানুষের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভের নীরব বিদ্রোহ।
আছে ফোনের উপর লেখা লকডাউন
যে লকডাউনের লেজ  এবার স্পর্স করেছে
বিদেশ হতে দেশ
এপার হতে ওপার,, এ ঘর হতে ওই ঘর।
তাই ফোনে ভেসে আসে,,
বাবারে কেমন আছিস
বোন বলে,, ভাইয়া ঠিক মত খেয়ে নিও
বাবা বলে,,ঔষধ আমার লাগবে না বাপ,,নিরাপদে থাকিস
বউ বলে,, কিচ্ছু চাই না আমি,, চলে আসো দেশে।
কিন্তু এসবের পরেও কে যেন বলে
কারা যেন বলে নীরবে,,চোখের জলে,,, ভাষাহীন হয়ে।
ওই আগের মত বলে,,করুন চেহারায় করুন চাহনিতে
ঘরের চালার ফুটোর কথা
কে যেন বলে পুকুরে মাছের বিদ্রোহের কথা
কে যেন বলে ঘরে ইদুরের খাবারের কথা।
এসবের জবাব কি হবে
এসবের জবাব কি লকডাউন হবে।
নাকি তাদের বিছানা হতে চলে গিয়েছে যে রক্তের নালা
বাইরে ওই খেজুর গাছের তলে
সেই খেজুর গাছের রসের মুখে
সেথায় আরো আরো রক্ত বাড়িয়ে বলতে হবে
বাঁচতে দাও,,বাঁচতে দাও
লকডাউন তুলে দাও,,তুলে নাও
মরে মরে মরার চেয়ে
বাঁচতে বাঁচতে মরতে দাও, মরতে দাও!


কিন্তু এমন দাবীর পেছেনের দাবী যে বলছে ভিন্ন কথা
বলছে দেখ,,দেখ,,একবার বাইরটা দেখ ঘর হতে।
তাই বন্ধ জানালার কাঁচ ভেদ করে
বাইরের দিকে তাকালো মনির,পরেশ হরি
রাস্তার উপর জন্মেছে বেশ ভালো সবুজ ঘাস
বেশ ভাল দখল নিয়েছে বালু ধুলিকনা গাড়ির উপর
ডাস্টবিনের পাশটা স্বচ্ছ,, একেবারে নির্ভেজাল পরিষ্কার,,
জানালা গুলি সিল গালা, দরজা গুলিতে বড় বড় তালা
এর মাঝেই তাদের চোখ গেল আকাশে উড়া
কয়েকটি প্রবাসী পাখির দিকে,,
পাখিগুলি উড়ছিল বেশ,,,পাখিগুলি চলছিল বেশ।
পাখিগুলি গাইছিলোও বেশ।
কিন্তু কে,, কে যেন হুট করে যেন গুলি মেরে
কেড়ে নিলো তাদের শুন্যে উড়ার মিছিল,,
কে যেন থামিয়ে দিল পথের উপর পথ।
পাখিগুলি একে একে ধব ধব করে পড়ল মাটিতে
প্রাণহীন গানের পাখি,,নিস্তেজ হয়ে ছুইল মাটি
অথচ কোন শব্দই আসল না কানে
অথচ কোন গন্ধই ভাসল না বাতাসে।


###########
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
১০/০৬/২০