প্রতিবার যে তুলসীর তলায়
জল ঢালার মত ধান গাছের গোড়ায় জল ঢালিস,,
গায়ের ঘামের স্রোতের নদী থেকে,,,
তা কেন বার বার আকাশের মেঘ হয়ে যায় হিমু,,?
কেন উড়িয়ে নেয় ঘরের ছালা হতে ছায়া,,,
তোর পায়ের নিচের সামান্য মাটি,,?


খুব তো আশা করছিলে,,,
গায়ের ঘাম হতে যে সোনার জন্ম হবে হাতে নাতে,
তোর মাঠের জমিতে,,
সেই সোনা দিয়ে একেবারে লেপে মুছে
মেয়েকে পাঠাবে তার আপন বাড়ী!
ছেলেটিকে পাঠাবে গন্তব্যের ঠিকানায়,,,
মায়ের অপারেশনটা এবার করেই ফেলবে,,,
ঘরের গাভীটার জন্যে আনবেই খইল,ভুষি কিনে,,
কিন্তু তোর এসব আজেবাজে স্বপনের
বাড়িটি কোথায়রে হিমু,,,!
কোথায় এই সব নষ্ট আশার বাসা?
সুন্দর বড় গাছের উপরে বাসা বাধলেই
গাছ আপনার হয়ে যায় না হিমু, হয়ে যায় না,,,!
বাধ না,,সূক্ষ বাবুই ঠোটে সেই বাসা ,,
কিন্তু ঝড় তা ভাংগবেই,,,ঝড় আসবেই
এমন ঝড় তোর জন্য বরাদ্ধ হিমু,,একেবারেই বরাদ্ধ।
সৌভাগ্য অতিক্রম করে যেতে পারে কিন্তু
দূর্ভাগ্য তোকে পোহাতেই হবে,,।


ইটের দালানের ঠিক পাশের
তালগাছেই যে বাসা বাঁধিস,,
খোলা আকাশের নিচে এমন বাসায়
এমন অত্যাচার হয়ই,,
কিন্ত কেন হিমু? তুই কি ওই পাখির মত
খাদ্য সংগ্রহ করে তুলে দিতে চাস
আরো কয়েকটি পাখির  মুখে, তাই?
তুই কুজনে কুজনে সুন্দর করে দিতে চাস ঈশ্বরের পৃথিবী,,
সেজন্য ঈশ্বরদের এত রাগ!
কিন্তু তুইতো ঈশ্বরদেরকে ঈশ্বর মানিস-ই
তাহলে সমস্যা কোথায়?


হা হা হিমু! হা হা ঈশ্বরকেও তো
ভক্ত সেবক পূজক মানতে হবে তোকে!
জানতে হবে তোরও বাঁচার অধিকার আছে,,
তোরও জীবন নামে যেন তেন একটা জীবন আছে
আছে একটা বৃক্ষ,,
যে বৃক্ষের ছায়ায় জন্ম নেয় আরো বৃক্ষ,
আরো যেন তেন প্রাণ,শ্রম ঘামের অনিশ্চিত দুনিয়া।


কিন্তু ঈশ্বরদের এত সময় কোথায় বল?
এত সময় কোথায় স্বর্গের বৈঠকে
তোকে নিয়ে ভাবার,,
তোর স্বপ্নের কথা বিবেচনার,
তোর ক্ষুধার কথা মনে রাখার,,
ওই দেখ বাইরে বজ্রপাত হচ্ছে,,
আর ভেতরে মশারীর আয়তনে,পাখার নিচে,,
কে যেন সহবাসে ব্যস্ত,
কে যেন খাতা আর কলমে লিখছে বজ্রপাতের গান,,
কে যেন ভারী বৃষ্টিতে প্রেমিকাকে ছোঁবায়ে
লিখছে ভেজা চাঁদের ভেজা অংগ,,
এসবের মাঝে ফুল, বেলপাতা,ঢাক ঢোলের বাড়ি,
পাঁচ ছয়বার গুনগান  পেলে
সবাই এমন ঈশ্বরের মত পাষণ্ডই হয় হিমু,
কারন উপরতলায় থাকলে
নিচ তলার খবর এত নেওয়া যায় না,,
নেওয়া লাগেও নারে অভাগা,, লাগে না।
এত খবর কেউ নেয় না।
পাতাল থেকে স্বচ্ছ পানিটা উপর তলায় যায়,,
কিন্তু উপর তলা হতে নোংরা পানিটাই
নিচ তলা হয়ে নামে,,এ অন্য জিনিস বুঝবি না,,।
বরং এই বুঝ তুই বাঁচলেই বা কী
আবার মরলেইবা কী!!
তোর ধানের জমি কি পতিত রবেরে?
কভু না,,তুই মরে যা,,তোর ঘর চলে যাক শ্মশানে,,
বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাক বর,
স্কুলের মাস্টার তাড়িয়ে দিক তোর ছেলে,,
শুকুনো রশিতে পরিবার শুদ্ধ ঝুলে পড় ডালে,,
তবু তোর এই জমিতেই অন্য জন আসবে
জেনে শুনেই আসবে
হিমু হতেই আসবে,,,
কারন হিমু হওয়া যে ফসল হারা কৃষকের বাধ্যতামূলক ভাগ্য-লিখন পরিহাস।
ঈশ্বরদের অবহেলার গোলাম পূজক,,,!!
তাই প্রতিবার তোদের ফসল নিয়ে চলে
ঈশ্বরদের ঘুমের ঝলক,,
মর চাষা মর,,পূজা রোজা করতে করতেই মর
বন্যার জলে মর,খরার তাপে মর,,
শিলাবৃষ্টিতে মর,অনা বৃষ্টিতে মর,,
ভারী বৃষ্টিতে মর,
যেমনে পারিস তেমনি মর,,
তবু ঈশ্বরদের পূজা কর,,
বাঁচিয়ে রাখ সভ্যতা,,বাঁচিয়ে রাখ শহর বন্দর!
################
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস