লক্ষ্মী তোমাকে পুজা করলেই কি
কেবল মানুষের ঘরে ধরা দাও,,মানুষের হয়ে!
নইলে তুমি থাকো,, সবার অচেনায়, অজানায়
থাকো সবার কাছ হতে,,, কেবল দূরে?
কেন লক্ষ্মী পুজাই কি তোমার ভান্ডারকে
করে রেখেছে অপূর্ণ ?
তোমাকে করে রেখেছে গরীবের চেয়েও গরীব?
পুজা আর দক্ষিনা না হলে
তোমার উনুনে বাস করে মরুভূমির বালু।
আচ্ছা যে বা যারা,দিন রাত করে যায় তোমার পুজা
তুমি তাদের  ঘরে হাসতে হাসতে করতে পারো বিরাজ
দিনের পর দিন,,,বছরের পর বছর ?
তুমি তাদের ঘরে অনায়াসেই হ​য়ে যেত পার দাসী?
তুমি তাদের ঘরে ধানের উপর ভরিয়ে দিতে পারো ধান
তুমি তাদের ঘরে স্বর্ণের উপর ঢেলে দিতে পারো স্বর্ণ ?
তুমি তাদের মদের পেয়ালায় এনে দিতে পারো
মদের রঙিন জোয়ার?
লক্ষ্মী তুমি রাক্ষসের ঘরে সিন্দুক ভর্তি জহরতে
এনে দিতে পারো আরও জহরত,,?
ওই সিন্দুককে করে দিতে দামীর চেয়েও আরও দামী?


পারো লক্ষ্মী পারো,,তুমি বেশ ভালো করেই পার!
তুমি মহারাণীর মত
বেশ করতে পারো তা,,,আনন্দ উৎসবে,,।
কিন্ত তুমি যে পুজার এত ভিখারিনী মনে মনে!
নিঃস্ব অসহায় নিজ স্বভাব আয়োজনে
তা কি তুমি নিজেই জানো?
এত হাহাকারে পূর্ণ তোমার হৃদয়
কেবল তোষামোদের মন্ত্র শুনার তরে,
লক্ষ্মী তা কি  কভু লিখে রেখেছ
তোমার সম্পদ গুনের পরে?
লিখ নিত,,তাহলে দেখো,, ওই দেখ লক্ষ্মী,, ওই দেখ
তোমার দুয়ারে অভুক্ত শিশু কাঁদছে মায়ের কোলে।
ওই দেখ সন্তানকে শুন্য থালায় অশ্রু খেতে দিয়ে
উনুনের পাশে বসে উনুনের ভেতর
প্রাণ ঢুকিয়ে দিয়েছে তোমার মতই
কোন এক লক্ষ্মী নারী ?
ভাল করে দেখ লক্ষ্মী ভাল করে তাকিয়ে দেখ
বৃদ্ধা মায়ের থালায় এক মুঠি ভা,, না দিতে পেরে
গলায় রশি দেবার জন্য রশি খোঁজছে
খেটে খাওয়া কোন এক লোক,, তোমার আঁচল তলে।
লক্ষ্মী একটু সদয় হয়ে চোখ মেলে দেখ
তোমার কত পাশেই কেবল একটি অন্নের জন্য
অসহায় বালক বালিকা লাইন দিযেছে ডাস্টবিনে
কুকুরের সাথে কুকুরের মত জীবন লয়ে।
কেবল এক বেলা শ্বাস নেবার জন্য
তোমার মত কত নারীই
উলঙ্গ হয়ে দাড়িয়ে যাচ্ছে পুরুষের সম্মুখে,,
লক্ষ্মী ওই দেখ গোপন গৃহে গোপন গৃহবধু
অভুক্ত অনাহারে বিষ খেয়ে মারা গেছে তোমার সম্মুখে
তোমারে করুনা করে।
দেখ লক্ষ্মী ভাল করে দেখ ,,তোমার অবহেলায়
কত শ্রমিক শ্রমে শ্রমে মৃত্যু করেছে ভিক্ষা
জীবিতের দুয়ারে দুয়ারে।
শুধু প্রাণ টাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য,, কত মানুষ
নিজেকে তুলে দিচ্ছে যমের হাতে,,যমপুরী ভালবেসে।


আর তাই লক্ষ্মী,,কেবল তাই
দশ দিন উপবাস করে যে যুবতী
লিখে গিয়েছে চিঠি মরার আগে,,, বৃদ্ধ পিতার কাছে।
সেও নাকি ক্ষমা করে গেছে তোমায়,,করুনা করে
তবে তার বিয়ের আসনের মালাখানি
লিখে দিয়ে গেছে তোমার নামে,,,!!
খুশী তো লক্ষ্মী? এবার বেশ খুশিতো,,,
পুজার আসনে বসে মড়ার উপহার  মালা
পরার যে কী  মজা লক্ষ্মী,,পরার যে কী মজা
তা আসন ছাড়া আর কোথায়ই বা মিলে?
বাহ লক্ষ্মী বাহ,,,
আর তাই ভবঘুরের পেটের ক্ষুধার সামনে
চোখ বন্ধ করে থেকে তুমি বেশ খুশি হও।
পরিযায়ী মেহনতীর কান্না আর আকুতির জলে জলে
তোমার গঙ্গাস্নান হয়,,, ঘরে বসেই।
অনাহারে অর্ধ্বাহারে বসে থাকা,,,কর্মহীন মানুষের
তিলে তিলে মৃত্যু দেখলে তোমার চিত্তে
ফুল চন্দন খেলা বাড়ে,,,পুজার ঢাক ঢোলে।
তুমি খুশি হও লক্ষ্মী,,তুমি বেশ খুশী হও
দিন মজুর যদি মজুরী দিয়েও,,, পায় না খোঁজে প্রাণ।
তুমি খুশি হও অসহায় ভাসমান মজদুর যদি
দিনে দিনে হয় আরো,,,পাতাল মূখী অসহায়।


লক্ষ্মী যখন শুকনো পাতার মত
শহরের কঙ্কাল শিশু গুলি
না খেয়ে খেয়ে  শুয়ে  থাকে
ফুটপাথে কিবা রেল লাইনের উপর,,,
তখন তোমার পুজার ধুপের গন্ধে আসে তীব্রতা।
যখন গ্রাম ছেড়ে কোন অনাথ অনাথিনী
প্রাসাদময় নগর নরকে
ছেনি খুন্তির মরণ দাগ হজম করে
কেবল দু বেলা পেট ভরে খাবারের জন্য।
তখনও তোমার সামনে রেখে দেওয়া ভোগ নৈবদ্যে
আসে শুধু,, তোমারই অমৃতের ঘ্রাণ।
যখন সামান্য কিছু কড়ির জন্য
কেউ মারা যায় বিনা চিকিৎসায়,,অবহেলায় অবহেলায়
তখন  মন্দিরের ঘন্টির শব্দে তুমি
ঘুমাতে পার নিশ্চিন্তে!!
তুমি আলোকিত হতে পার
তোমার আরতির বাতিতে বাতিতে,,,
যখন দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত
কোন পিতা মাতার নাবালক সন্তান
ধর্ষিত হয়,, হুজুরের লম্বা টুপির লম্বা ছায়ার নিচে!!


যখন দারিদ্রের জন্য দারিদ্রতাই আসে
আরও রাবণ বলিয়ান হয়ে
যখন অর্থের জন্য স্থবির হয়ে পড়ে
সরস্বতী তার সুমহান আসনে,,,,।
যখন মুদ্রার জন্য গণেশের হাতের কলমে
জমে যায় পাথর সম জগতের বরফ।
যখন সমৃদ্ধির জন্য কার্তিকের তীরে বাসা বাঁধে জং।
যখন ঐশ্বর্যের সামান্য ছোঁয়ার জন্য
স্তব্দ হয়ে যায় কৃষ্ণের কদম তলার বাশী।
যখন সামান্য খাবারের জন্য
রাধারা যমুনা ছেড়ে,, চলে যায় বাজারে ভেজা বসনে।
যখন প্রাচুর্যের জন্য শিবের ত্রিনয়নে
বাসা বাঁধে মেঘ মালা,,,
তখন,, ঠিক তখনও  কি চাও লক্ষ্মী
তখনো কি চাও কেউ তোমাকে
মন্দিরে বসিয়ে পেঁচা হোক তোমার পায়ের নিচে।
তোমার পায়ের তলে পদদলিত হতে হতে
মন্ত্র পড়ুক ক্ষুধার্ত প্রাণে,,,বিরাট উচ্চারণে,,।


ওঁ মহালক্ষ্ম্যৈ বিদ্মহে মহাশ্রীয়ৈ
ধীমহি তন্নোঃ শ্রী প্রচোদয়াৎ।
ওঁ বিশ্বরূপস্য ভার্য্যাসি পদ্মে পদ্মালয়ে শুভে।
সর্ব্বত পাহি মাং দেবী মহালক্ষ্মী নমহস্তুতে।।


তাহলে এমন মন্ত্র পড়লাম না লক্ষ্মী
এমন মন্ত্র পড়লাম না,
তোমার শ্মশান রাজ্য সীমানায় বসবাস করে।।
মৃত্যু যদি হয়,, হোক,,
তবু তুমি যে অলক্ষ্মী তা
জানিয়ে গেলাম তোমারই সংসারে
মরনরে ক্ষুধায় ক্ষুধায় আলিঙ্গন  করে,
তুমি যে লক্ষ্মী নামের অলক্ষ্মী
তা জানিয়ে গেলাম তোমারই সংসারে।
ভালো থেক লক্ষ্মী,,
ভালো থেক,,
ক্ষুধিতের কান্নার উপরে।।