আমাকে দেখে অনেকে বলত,,।
আরে ও গাঞ্জাখোরের ছেলে,,।
জীবনে আর কী করবিরে,,,
বড়জোড় হাল চাষ করবি,,
অন্যের ক্ষেতে কামলা দিবি,,
তা না হলে পেটের খিদের দায়ে
মানুষের কাছে হাত পাতবি, ভিক্ষে করবি,,ভিক্ষে!!


কথাগুলি আমার কানে ঢুকার আগেই আমি দেখতাম
আকাশ হতে মেঘ ছেড়ে আসা বৃষ্টিগুলি
তীর হয়ে আমাকে বিঁধছে,,
আমি যে পথে হাটছি,,সে পথের উপর দূর্বাঘাস
রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে সাপ,,আমাকে কামড়াতে চাচ্ছে
আমাকে মারতে চাচ্ছে,,স্বয়ং আমার জীবন।


কিন্তু আমি তো মরব না,,
জীবনের ইচ্ছের মুখে লাথি মেরে আমাকে যে
বাঁচতে হবে,,বাঁচার জন্য,
জানি বাঁচার রাস্তা আবিষ্কার করতে হয়
আর মরনের রাস্তা? আসে উপহার,,হয়ে।
তাই পণ করেছি,,কাঠাল পাতার ভরা খাই
আর খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাই তা বড় কথা নয়
আমাকে খোঁজে বের করতেই হবে,,
মরন হতে বেঁচে যাবার পথ,,
যার জন্য জীবনের এলোমেলো
কচি পাতার উপর লিখতে হয়েছে রক্তাক্ত যোদ্ধা,,
প্রচন্ড বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে বলতে হয়েছে
হ্যা হ্যা হ্যা,,আমি রক্তাক্ত যোদ্ধা।


যে যোদ্ধার চারপাশে সামান্য বৃষ্টি হলেই
কাদায় কাদায় ডুবে যেত পথঘাট,,
এখনকার মত কোন পথই
শুকনো ছিল না আমার জন্য,,!
এখনকার মত দিনের আলো ছিল না
আলো হয়ে আমার জন্য।
তবু আমি শপথে রেখেছি
যে পথ কবরের মাটি হয়ে যেতে চায়
ভাগ্যের লিখন তাগিধে,,,
সে পথকে আমি জীবনের রং দেখাবই,,।
আমাকে দেখে যে অন্ধকাররা আপন করে
নিতে চায় কোলে,,
আমি তাদের মোমের আলোর স্পর্শ দিবই।
তারপর অনেক নদীর জন্ম হল
আমার বাবার ভাঙ্গা ঘর হতে  প্রাসাদের অন্বেষণে!
আমি সে নদীগুলিকে
চোখের জলে জলে ভরিয়ে দিয়ে
এনে দিয়েছি বর্ষার যৌবন,,,।
যৌবনের বন্যায় কর্মের জাহাজ ভাসিয়ে
যাত্রা করেছি গন্তব্যের পথে,,।
আমার যাত্রা দেখে কেউ হেসেছে প্রকাশ্যে
আবাত কেউবা গোপনে!!
আমার যাত্রা দেখে,,অনেক কোকিলের স্বর
হয়েছে বন্ধ
অনেক কোকিলই হয়েছে কাক,,!
তবু আমি পায়ের তলায় ঘোড়ার পা লাগিয়ে,,
ছুটেছি বাঁচনের সন্ধানে
ছুটতে ছুটতে কতবার মনে হয়েছে
মরণ কে অবহেলে মরনই বুঝি নিলাম বেঁচে।
আর তাই,,আমার জন্য গ্রীষ্মের মাঠ মানে
পুরাই এক আগুনের জঙ্গল।
আমার জন্য হাওরের জল মানে,,
পুরাই এক উত্তাল অতল সাগর।
আমার জন্য লোহা মানেই
শত্রুর হাতের এক ধারালো তলোয়ার।
আমার জন্য উপোস মানেই একেবারে অন্নহীন,,
আমার জন্য বিপদ মানেই একেবারেই বিপদ,,কেবল বিপদ।


যে বিপদে বিপদে যুদ্ধ করতে করতে,,
চোখের জলের সাথে
গায়ের ঘামের হয়ে গেল বেশ বন্ধুত্ব।
আর এই দুই বন্ধুর মিলিত প্রয়াসে,,
একদিন গৃহ ছেড়ে আসা এই গৃহহীন আমি
পেয়ে গেলাম শহরে প্রাসাদের স্থান।
পেয়ে গেলাম ভালবাসায়,,
পেয়ে গেলাম আশার নেশায় রঙিন বাতির জগত।
কিন্তু দিনশেষ মনে হল,তাহল আমি কে?
আমি কি গাঞ্জাখোরের ছেলে নই?
সমাজের জুতার উপর মুকুট একে দিলেইতো
জুতা সমাজের মুকুট হয়ে যায় না!


তাই আমি জানি,,আমি
হ্যা হ্যা আমি ভালো করে জানি
আমি গাঞ্জাখোরের ছেলে!!
আমার ঠোটে মধুর লোভে হয়ত চমু দিয়েছে অপ্সরা
আমার বুকে ধোয়া হীনতার জগৎ
পেয়েছে হয়ত কোন না কোন অহল্যা!
আমার শ্বাসে বিশুদ্ধতার নেশা পেয়েছে নেশাহীনেরা
আমার সাথে রাত কাটাতে চিঠি লিখেছে
হয়ত চাঁদের দেশের পরী
আমার সাথে সমুদ্র দেখতে যেতে চেয়েছে, হয়ত পাহাড়ের কন্যা, কিন্তু কেন?
আমার কোন শক্তিতে আমি পরাজিত করেছি
আমার কোন এক আমিকে,,,
কোন শক্তিকে সাইনবোর্ডের উপরেও
বসিয়ে দিয়েছি এক ভিন্ন সাইনবোর্ড?  


না না আমার কোন শক্তি নেই,
আমার কোন গুন নেই,,
আমার কোন অবদান নেই,,
আছে কেবল চারপাশের চরম ঘৃণা,,
অবজ্ঞা আর অবহেলার অভিশাপ,,
যে অভিশাপই আমাকে শক্ত করেছে হৃদয়ে
ভয়হীন করেছে মৃত্যুর পথে
যে অভিশাপ শিখিয়েছে
গাঞ্জাখোরের ছেলে শব্দজোরাকেই
কেমন করে বানাতে হয় তেজের  তাজ?
যে তেজে তেজে আমি বার বার শিখেছি
পায়ের তলা হতে কীভাবে রাখতে হয় মাথার খবর?
কীভাবে শিখর হয়ে লুকিয়ে থেকে মাটির বুকে,,,
জীবন ছড়িয়ে দিতে হয় পাতায় পাতায়,,
,বৈঠার মত থেকে পেছেনে,,কেমন করে
নিয়ে যেতে হয় নৌকা সামনে কেবলি সামনে,,,?


কিন্ত এতদিন পর এসে মনে হল
সত্যি কী জীবনের নৌকা সামনে যায়,,?
সত্যি কি গোল পৃথিবীটার ব্যাসার্ধ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে বেরিয়ে পড়ে আপনার ঐচ্ছিক ঠিকানায়,,
নাকি একই বৃত্তে ঘুরার মত কেবল ঘুর্ণন,,


কি জানি গো,, এত সব বুঝি না,,
এত সব জানি না,,,।তবে এই জানি,,
হাত বাড়ালে জীবনের ঘ্রাণ
জীবনের কাছেই পাওয়া যায়!!
আর হাত বাড়ানোর জন্য,,
আদরের সকল স্থান দূরে রেখেও
থাকা যায় আদরের কাছে,,
জানি মায়ের কোলে মাথা না রেখেও
থাকা যায় মায়ের ছায়ার তলে,,
জানি ভাই,বোনের সাথে এক যুগ দেখা না করেও
সুন্দর করে রওয়া যায় তাদের বুকে,,


তবে আমার মুখে বাড়ির তেতুল তলার
তেতুল টকটা হয়ত লাগে না,,সুখে।
হয়ত আমার ঘরের গাভীর দুধের স্বাদ,, মনেই নেই
মনেই নেই কেমন করে,,বাড়ির পাশে হাওর ঘাটে
ফোটেছিল এক জোড়া কচুরিপানার ফুল,,।
ভুলে গেছি,,বৈশাখ মাসে
হাড়িকেন জ্বালায়ে ঘাসফড়িং ধরার দিন,,
ভুলে গেছি ছোট ছোট ডুবা, গ্রাম্য নালা শুকিয়ে
মাছ ধরার মহাসুখ,,,
ভুলে গেছি,,অনেক গাছের অনেক কচি পাতার ঘ্রাণ,,কচি কচি ঘ্রাণ!
ভুলে গেছি ওই বড় বাড়ির পাশের জঙ্গলে
বরুন গাছটার ডালে,,
পাখির বাচ্চা দুটির বড় হবার গল্প।
তারা হয়ত ডানার সুখে,,ডানার কারনে
ভুলে গেছে তাদেরই নীড়
ভুলতে ভুলতে হয়ত হারিয়ে ফেলেছে ফেরার পথ
হারিয়ে হারিয়ে হয়ত অভ্যস্ত হয়ে গেছে
বিসর্জনের অভ্যাসে।


বিসর্জনের অভ্যাস ছাড়া  কোন পাখি
বাঁচে না যে মানুষে মাঝে মনুষ্য পরশে।
তাই এবার আমি বলছি,,আমাকে
আরে ও গাঞ্জাখোরের ছেলে
অন্ধকার ঘরে আলো দিয়ে,,
সত্যি কেমন আছিসরে বিসর্জনের প্রবাসে?
পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বিড়ালটা
আমার কথা শুনেই,,বাঘের মত তাকালো আমার দিকে
আমারে ভালবেসে,,
বিড়ালের চোখে আমি দেখলাম বাঘ,,,
এক ভিন্ন জীবনের ভিন্ন প্রয়াসে।
############
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
২০/০৭/২০