মা কি করছ?
হা হা আমাকে স্নান করাচ্ছ?
ও মা তাও এক বালতি জলে
নিজের আঁচলের ছায়া ডুবিয়ে
স্নান করাচ্ছ আমায়,,,!! তারপর কি করবে মা?
রোদ্রের মাঝে শুয়ায়ে দিয়ে
যুদ্ধ করে রোদের বুকে হতে এনে দিবে
নানান শক্তি আমার গায়ে,,তাই না?
তারপর,,
তারপর মাঠফাটা সূর্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
ভগবানের ছায়া দিয়ে যাবে,,আমার পরে।
গুনগুনিয়ে শুনাবে সুখের গান,,দুঃখের সিড়িতে বসে
ও মা এসব করা বুঝি খুব আনন্দের,,
খুব উপভোগের?
আচ্ছা নিজে না খেয়ে অন্যকে খাওয়ালে পেট ভরে?
নিজ ভাল না থেকে অন্যকে ভাল রাখলে,, সুখী হওয়া যায়,,?
নির্ঘুম থেকে অন্যকে ঘুম পাড়ালে,,ঘুমানো যায়?
বল না মা,,যায় কি?


হয়ত যায় মা,,,,হয়ত যায়
আর সে জন্যেই তুমি
ঘরের কোনায় কোনভাবে পড়ে থাকা তোমার ছবিটার উপর
মাকড়সার জাল টাকে দেখছই না অবহেলে,,
বরং আদরে আদরে,,,সারাক্ষণ আছ
আমার ছবিটাকে করে দিতে গজ্ঞা পরিষ্কার ?
আমি কী খাব,,কী খাব না তাই তোমার অসমাপ্ত ভাবনা,,
অথচ তোমার থালার ভাত খেয়ে নিচ্ছে পিপড়ায়
তোমার দুপুরের খাবার পঁচে যাচ্ছে বিকালে
রাতের খাবার বাসী হয়ে যাচ্ছে সকালে
তাতেও তোমার অস্তহীন রাজ্যের রানীর নেই
কোন খবর,,,
খবর নেই নিজের পায়ের নিচে কাদা মাটির দিকে
অথচ আমাকে কর দিচ্ছ তুলসী ধৌত,, বারে বারে।


কিন্তু একি তোমার চুল বাঁধা হয় নি
ও মা তোমার চোখের নিচে অমাবশ্যার ভীর
ও মা তোমার গলার নিচ টা হয়ে গেল কালো,,
ও মা তোমার বসনের কাপড়ের রঙ চলে গেছে
ও মা তোমার গা লাগছে ঘর্মাক্ত,,
ও মা তোমার কপালে মাটি
ও মা তোমার হাত কেটে গেছে,,,
ও মা তোমার চোখের কোন জল,,,
তবু আমার দিকে তাকিয়ে হাসছ,,,
আমার মুখের হাসিতে হাসি খোজে পাচ্ছ রাজ্যের,,,,
আমার মুখের লালাতে পেয়ে যাচ্ছ স্বর্গ ঘ্রাণ।
আমার দুধ মুখের বমিতে পাচ্ছ হাজার গন্ধরাজ,,
কিন্তু নিজের দিকে একটু তাকিয়ে দেখবে না মা
ঘরে আবদ্ধ করে রাখা ওই আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে,,,
দেখবে না নিজেকে?
তাও আমার চোখে,,,সবার চোখে,,
কেবল তোমার ছবি খানি,,,দেখবে না মা?
জানি ইচ্ছে করেই আয়নায় দেখে নিবে আমাকে
কল্পনায় আমার কষ্ট গুলি করে নিয়ে নিজের
অস্থির করে ফেলবে ঘরের শান্ত দধি,,,
তুফান এনে দিবে ঠাকুরের আসনের ফুলে,,
আর ভাববে,,,বার বার ভাববে
যাদুটার, সোনামনিটার লেগে গেছে  সর্দি,,
খেতে পারে না,, দুধ টেনে
ঘরের বিড়াল ছানাটার মত কাঁদতেও পারে না ক্ষুধায়
তাই নিজের অমরাবতী স্তন হতে
বের করে রাখবে দুধ,,, স্বর্ণ পেয়ালায়,,।
হীরের চামচ দিয়ে তুলে দিবে তা,,আমার মাটির মুখে ,।
এভাবে মায়ের হৃদয়ে চেয়ে নিবে
দেবলোক দর্শনের আনন্দ,,আনন্দময়ী হয়ে।


ওমা সে আনন্দে আনন্দে একবারও কি দেখবে  মা
তোমার ঘর হতে এক পায়ের দূরত্বের উঠানে
আমার প্রস্রাবে ভেজা, তোমার রঙ্গিন শাড়ি খানা
দোলছে কেমন রঙহীন  বাতাসে,,।
অহংকারে,গর্বে, আহ্লাদে শান্তি নিশান হয়ে
ছোয়ে নিচ্ছে কেমন,,মহাকাশের বুক,,।
যে বুকে,, ভালবাসার বীরত্ব, স্নেহের বীরত্ব মমতার বীরত্ব,,
হয়ে আছে মিলেমিশে একাকার!!


আর তাই গো মা,,,তাই
তোমার ঘরের ভেতর  কলসীতে
যে জল ছিল তৃষ্ণার্তের জন্য আবদ্ধ,,
সে জলও মাটিতে পড়ে গেল সহসা,,
তোমার উনুনের হাড়িতে রাখা দেব অন্ন
স্বইচ্ছায় মিশে গেল ছাইয়ের মাঝে,,,
তোমার ঠাকুরের আসনের ঘন্টিটাও
থেমে গেল আরতির আনন্দ তরঙ্গে,,।
সবচেয়ে বড় বটগাছটা
নুয়ে গেল তোমার দুয়ারে।
রাজমাতা স্বর্গগামিনী স্বর্গের সন্ধানে
সিংহাসন পুড়ে লিখল চিঠি তোমার কাছে,,
কেন জান মা,,কেন,,?
তারা সব তোমাকে,, কেবল তোমাকে
ছোঁয়ে দেখতে চায়,,,
শিখতে চায় নিজেকে ভেঙ্গেচুরে
এক আত্মায় এত দেবীত্ব কেমন করে থাকে?
কেমন করে থাকে
মাতৃত্ব বোধনে।