একটা লেখা লিখতে হবে,,,
তাও নদীর তীরে ফোটা কাশ ফুলের মত।
শরতের আকাশের ছুটন্ত মেঘ দলের সাথে
লিখতে হবে,,,আমার দুর্গা।
কয়দিন পরেই দুর্গা পুজো,,,
তা না লিখে কি পারা যায়,,,!
কিন্তু কীভাবে লিখব,,,,?
একটু আগেই যে,আমি এক দুর্গাকে
ধমক দিয়ে এসছি,,
বলেছি ছাই চাপা আগুন দিয়ে,,
ধোঁয়ার কুয়াশাময় হাজত রান্নাঘরে,,
রান্না করতেও এত সময় লাগে তোমার,,,,!
কাজের মধ্যে কিইবা করো,,
রান্না বান্না,হাড়ি পাতিল ধুয়া ,,
ঘর দুয়ার  আর মাত্র তিন চারটে বাচ্চা,,,!
ঘরের ভেতর পোকা মাকড় গুলিও
এর চেয়ে বেশি ভালো কিছু করে দুর্গা
এর চেয়ে বেশি ভালো কিছু করে!


এই দেখ তোমার চেয়ে বেশ বেশি কিছু করছে
বারান্দার পাশে অপরাজিতা ফুলের ডালে
মৌছাক বাঁধা মৌমাছির দল!
তোমার ঘরের ভেতর এসেই,,
কভু তোমার চোখের সম্মুখে,,
আবার চোখের আড়ালে
ফুলদানির ফুল হতে নিয়ে যাচ্ছে মধু,,,
আর তুমি!! হা,হা,,,,,মধু সংগ্রহ নাইবা করো,,
ফুলদানিতে জল তো ঢালতে পারো!
তা না হলে বাইর থেকে কবে কোন বন দুর্বা এসে
ঘরের সাজানো, গুছানো মেঝে টা দখল করে নেয়,,
কে জানে?
সত্যি কে জানে?
কখন চোখের কাজলের বাধ ভেঁংগে
নেমে যেতে পারে অশ্রুর বন্যা।
আমি এই বন্যায় ভেসে ভেসে কি লিখব আর
দুর্গা কে নিয়ে,,,
প্রতিদিনই তো আমার ঘরের ভেতরেই দেখি,,,,
এক বয়স্ক বৃদ্ধ দুর্গা ঘরের ভেতরই
বাইরের বৃষ্ট জল এনে ফেলার
করছেন আপ্রাণ চেষ্টা ।
কারন সেই কাদা মাখা জলই পান করে
বেঁচে থাকাই যে তার এখন একমাত্র অবলম্বন,,,
অন্তত ঘরের ভেতর,,ঘরের জল পান করার আয়েশ,,।
এই আয়েশে আয়েশে বার বার বলেছেন৷
খোকা আমার পাশে একটু বসবি বাবা৷ বসবি?


আমি কার্তিকের মত তেজস্বী বীর,,,
আমার সুদর্শন চেহারার সাথে কাঁধে ঝুলন্ত তীর!
আমার আর সময় কোথায় মায়ের পাশে বসার!
আমার মা এখন
অফিসের কম্পিউটারের নানান ফাইলে,,
আমার মা এখন ব্যাংকের
হিসাবের গতির বৃদ্ধিতে।
আমার মা এখন সংসারের বিচিত্র ময়দানে,,,
সেই মা-দের সাথে পুজো খেতে খেতে আমি ক্লান্ত,,,
আমার আর সময় কোথায়
ঘরে বসে আবদার শুনার
এই বৃদ্ধা দুর্গার!


আমি গনেশের মত,,দোকানে দোকানে
হিসাবের ম্যানেজার,,,
আমার কিবা আমাদের এমনকি বাইরের
সর্ব স্থানের সর্ব সিদ্ধান্তের সিদ্ধিদাতা,,,,
সামান্য এক বৃদ্ধার মন মেজাজের
সজ্জিত দেয়ালিকার পরিচর্চা করার,,,সময় কোথায়?
বরং এর চেয়ে দেয়ালেই ঝুলে থাকুক,,,
ধুলো বালির আশ্রয়ে,,মাকড়সাদের আদরে।
চোখের সামনেই চোখের আড়ালে পড়ে থাকুক,,,,,
তাও কম কিসের?
এত ভালো ভাগ্য আজকাল
অনেকে দেয়ালিকারই কপালেই জুটে না,,,,
ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকতে থাকতেই
চলে যায় বাকী দিনগুলির বাকি পঞ্জিকা!
সেই পঞ্জিকার পাতা দেখতে দেখতে
আমার ঘরেইত জন্ম নিয়েছিল আরেক দুর্গা,,
ঠিক সেদিন থেকেই আমার মাথার চুল
বকের পালকের সাথে প্রতিযোগিতায়,,,!
ঘরের বাইর পানে এক পুকুর খনন করে রেখেছি,,,,
অন্তত চোখের জল ঘর ছেড়ে উঠোনেই
ধরে রাখতে পারার আশায়।
ছাদের উপরে গাছ গুলির পাতা যেভাবে যাচ্ছে ঝরে,,!
আশ পাশের রাস্তায় যেভাবে সাপ - শিয়ালের উপদ্রব।
সেখানে আমার আশ্রয়ের কোপে পালিত
কবতুরের জীবন নিয়েইবা কি আর লিখি!
বরং কলমকে আজ মুক্তি দেই,,,
বলে দেই সেই নিজেই লিখুক কিছু দুর্গাকে নিয়ে,,,!


দেখি,,,সে কিছু লিখতে পারে কিনা!
কাগজের উপর কলম দিয়ে লিখা দুর্গা
আর জীবনের সাথে জীবনের বসতের দুর্গা
যে বিরাট ব্যবধানে,বিরাট ওলট পালটে।
আমি এক সামান্য কবি,,,,
জীবনের করি চাষ,জীবনের কালি আর কলমে।
তাই আমার দুর্গা এখনো
মন্দিরের পূজার আসনে নহে,,,,।


কিন্তু জানতে চাই
তোমাদের দুর্গা আছে কোথায়?
কি সহে?
------
আমার দুর্গা এখনো
মন্দিরের পূজার আসনে নহে,,,,।


#########
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস