যদি আবার দরজাটা খুলতে পারি
ছুঁইতে পারি সম্মুখে রাখা পাপোশ,,
তাহলে পাশের বাড়ির চাচীর হাতে ভাত খাব
মায়ের হাতে প্রসাদ ভোজনের মত।
রঙ নিয়ে যেখানে যে দেয়ালে পাব সেখানেই
লিখে দিব এখানে দেয়াল নেই,,
এখানে দেয়াল ছিল না
এখানে দেয়াল থাকবে না,,।।
তারপর দৌড়ে হ্যা হ্যা দৌড়ে নেমে যাব নিচে,,
না গো না,,আমি লিফট ধরে উপরে যাব না
নিচে যাব,,নিচ তলার ভারু কাকীমার
অনেক দিন ধরে জ্বর ছিল
তার মাথায় পুত্র হয়ে সারা রাত পানি দিব,,
তার ঘরের পাশেই যে ফেলে রাখা হয়েছে
আবর্জনা,,আমাদের উপর তলার আবর্জনা
তা নিজ হাতে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে দিব,,
লোকে আমায় হয়ত মুচি বলবে,,বলবে মেথর
বলুক না,,পুণ্য করার সূযোগ কেন হাত ছাড়া করব৷।


বিশ্বাস কর,,আবার,, আবার দরজা খুললেই
আমি আমার প্রায় হারিয়ে যাওয়া সেই গ্রামে যাব,,
ধান ক্ষেতে লেগে থাকা, ঘামের গন্ধ আঁতর খুঁজব,,
খালে বিলে সাঁতার কেটে শিখে নিব যুদ্ধ
কাঁদা ভরা পথে হেটে হেটে চিনে নিব জীবনের সুখ,,
যে ভিখারী এখনো পায় নি এক পয়সা ভিক্ষে
তার থালায় তুলে দিব আমার গলার রত্ন হার।
যে গাছের গোড়ায় এখনো দেওয়া হয়নি জল
আমি তার নিচে বৃষ্টি এনে দিব,,
শুনেছি বীরেন কাকার মেয়ের বিয়ে হয়নি এখনো
হাজার চেষ্টা করে আমি তার ঘরে একটা
প্রজাপতি এনে দিব,,লাল আলতায়।
তার উঠানেও জ্বালিয়ে দিব একটা বাতি
লাল নীল রঙের বাতি,,,।
আবার কেবল আবার যদি দরজা খুলতে পারি
তাহলে পশুদের গলায় বাঁধা সকল রশি খুলে দিব
বিড়ালের জন্য আমার থালার পাশে রেখে দিব দুধ ভাত
ঘরের ভেতর রাখব শুধু ঘর আর ঘর।
বনে-বাদাড়ে  যে সবুজ ঘাস,,মানুষের
পায়ে পায়ে হয়েছিল হলুদ
সেথায় আবার এক মুটি সবুজ দিব ছড়িয়ে।
পান ওয়ালার পানের দাম দিব ন্যায্যের চেয়ে বেশি
ওই যে জুতা পালিশ করা মুচি চাচা হারুন
তার বুকে বুক লাগিয়ে কাঁদব,, চিৎকারে চিৎকারে।
মনির,শ্রীদামকে খেতে দিব এক থালায়,,,
তারপর ডাক্তার বাড়ির পথটা
বুকের ছাতি দিয়ে করে দিব পরিস্কার।
নার্স,, হ্যা হ্যা নার্স দিদিমনির ঘরের ছাদে,,
বসিয়ে দিব আমার মাথার সমস্ত চুল।
যদি একবার,,কেবল একবার
খুলতে পারি আবার দরজা
গোল্লাছুট খেলে স্বেচ্ছায় হেরে যাব মৃদুলের কাছে।
ইচ্ছে করেই হাতের পুতুলটি তুলে দিব দশ বছরের বালিকা লিপি কে,,
নিজের থালার বড় মাছের ভাগটা আমার বোন শম্পাকেই দিব,,,
কলেজের জাহানারা ম্যাডামের কাছে এবার শিখে নিব
সাহিত্যের মাঝে গ্রাম কিবা শহরের গুপ্ত পথগুলি।
জেনে নিব কোন নারীর বুকের বিন্দু বিন্দু
কেমন প্রেম জমা হয়েছিল চোখের বালি উপন্যাসে।
বনলতা সেন কাব্য খানি পড়ে পড়ে
একটা তাজমহল নয় বরং একটা লাইব্রেরিই বানাব
সেই মেয়েটির সমাধির পরে।
  
যে মেয়েটির জন্য কলেজের প্রাঙ্গনে ভিজেছিলাম
মেঘে মেঘে,,শিমুল তলায় দাঁড়িয়ে,
যে মেয়েটির জন্য ঘাস ফড়িংয়ের পা
নিয়েছিলাম নিজেই পরে,,,
যে মেয়েটির জন্য আজও আমার রাত হয় নির্ঘুম।
যে মেয়েটির জন্য সাদা খাতার সমস্ত পাতা
করে দিয়েছিলাম লালে লাল।
হ্যা গো হ্যা,,যদি আরেকবার পারি দরজা খুলতে  
তাহলে গোপন ডায়রীর সব পাতা পড়ে শুনাব
মন্দিরে কিবা মসজিদের সকল মানুষকে।
সমস্ত অস্ত্রের মুখে বসিয়ে দিব চুমুর আসর
সমস্ত যুদ্ধের ময়দানে লাগিয়ে দেব ফুলের বাগান,
আর কিছু পারি বা না পারি
ঠিক আগের মতই  স্বপ্ন দেখব,,নতুন নতুন
আগের মতই হাসব,,,
হাসতে হাসতে ধুলিকনা হতে
ওই পাহাড় পর্বতের সাথেও রাখব যোগাযোগ,,
সভ্যতার যোগাযোগ,,।
যে যোগাযোগের হাত ধরে নিত্য বসব ঠাকুরঘরে
প্রার্থনায়,,আরাধনায় আর আরতিতে,,,
কিছু কিছু কথা যে বলতে হয় একান্ত ঈশ্বরের সাথে,,
যদি পারি তাহলে মৌলবাদের গোড়ায় ঢেলে দিব বিষ
ঢেলে দিব সর্বোচ্চ গরল ওই দেব দেবীদের মুখে
যারা নেতা সেজে জনতার রক্তে হোলি মাখে।
আর এভাবেই বুঝে নিব আমি আমার সকাল সূর্য,,,
মধ্য দুপুরের পুকুরের জলে ভাসা হাঁস
আর বিকালের একাকী জীবনের সন্ধ্যা আরাধনা,,,
কিন্তু এত কিছুর পর ভয় জাগে,,,
আমি সব কিছু ভুলে যাব না তো,,,
ভুলে যাব না তো সবকিছু
পলিমাটির স্তুপে ঘর বাঁধা জীবনের নিয়মে,,,
এক বন্যার অপরাধ ঢেকে দিবনা তো
আরেক বন্যার জলে?


তবে যাই হোক,,বিশ্বাস রাখি ধানকাটার ক্ষেতে বসে
হলুদ রঙ্গের ধানের সাথে কৃষকের হাসিতে হাসিতে,,
ঘূর্ণিঝড়, শিলা,অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি,,,
যাই,,,যাই আসে আসুক জীবনের ময়দানে,,
তবু দরজা যদি খুলতে পারি,,আবার
যদি পাই বাতাসের মাঝে অক্সিজেন,,আবার
তাহলে বাবাকে প্যাম্পার্স পড়িয়ে নিয়ে
ঘুম পাড়াব আমার বুকের উপর,,
আর মাকে,, দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে
সারাক্ষন রাখব আমার কোলে,,,,,।


আবার যদি দরজা খোলে
বাইর হতে পারি এ জীবনে,,,
তাহলে
বাইরটাকে দেব ঘরের আদর,,,,
ঘরের কারনে।
পারব তো এসব করতে,,,বাকী জীবনে?