রাজু মজুমদার
------রুবেল চন্দ্র দাস------


রাজু মজুমদার,,লোকে বলে জন্মটাই নাকি
তার সবচেয়ে বড় পাওয়া,,
কিন্তু সে যে আজন্ম ভরে সেই পাওয়ার
মূল্য দিয়ে যাচ্ছে,,,,,,
কখনো ঘাস পাতার তলে বাধ্যগত বাস করে ,,,
আবার কখনো,,,ইচ্ছেমত করে গাছের মগডালে বসে,,
তবু তার জীবনের মূল্য আর পরিশোধ হল না,,,
বাড়ির পাশ দিয়ে গরুর গাড়ির রাস্তা খানি
বাস গাড়ির মহাসড়ক হয়ে গেল,,সেই কবে!
কই পাশে যে ঘাস ফুল,,তার উপর
ধুলি বালি জমা কি বন্ধ হলো,,
ময়লা স্তুপের আড়ালে থেকে থেকে
ফুলের অভিনয় জীবনের কি যবনিকাপাত হল?
হল না।


হবে কি করে?
জন্মের পরেই যে মাতৃদুগদ্ধের জন্যে
ঋনী হতে হয় ভ্রাতৃবধুর কাছে,,
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে চোখের জল
করতে হয় পান,, তার আবার জীবন!
সারা বন জঙ্গল এক করে দানা কুড়িয়ে
ঘরে ফিরা  দাদা,,ভগ্ন দেহে এক মুটি ভাত হয়ত
তুলে দিয়েছে মুখে,,,বিনিময়ে
এক পলকের মিষ্টি হাসি আর তা তা শব্দ শুনেই
কি পরম আনন্দেই না ভুলে গেল সারাটা দিন,,
আর দিন ভর যুদ্ধের ক্ষতের কথা।
ভুলে গেল সারাটা দিন সুস্থ মানুষগুলির অসুস্থ আচরণের কথা,,,
গরীব হলে এগুলি মনে রাখতে নেই,,,
গরীবের সব মনে রাখা পাপ,,,মহাপাপ।
খাল থেকে কুমির উঠে এসে ভাঙ্গা ঘরের উঠোন টেনে খাবে,,
গরীব কে হেসে হেসে বলতে হবে,,আরে কুমির মশাই পেটে খিদে বুঝি!!!
কর্তা বাড়ির পাগলা কুকুরটা বাড়ির তুলসী তলায় কিছু একটা করেইই যাবে,,
গরীব কে দাঁত খেলিয়ে বলতে হবে,,বাবু আপনার কুকুর একখান,,কি ভালো কী ভালো! সব বুঝে সব বুঝে গো।
মুখার্জি বাড়ির বিড়াল টা পর্যন্ত,, তছনছ করে যাবে বাড়িতে লাগানো শষ্য ফুলের গাছ,,,
হোট করেই কামড় দিয়ে বসবে গরীবের ঘরের রুগ্ন বিড়ালনীর গায়ে,,
তখনো গরীবকে অট্টহাসি দিয়ে বলতে হবে,,কিয়া বাত কিয়া বাত,, আপকা বিল্লী বহুত চাঙ্গা হ্যা,,,! কিতন্যা পিয়ারী হ্যা,,,


এসব শিখে শিখে,দেখে দেখে,,
খাবারের সাথে মিশিয়ে মিশিয়েই বড় হয়েছে
রাজ মজুমদার,,,।
ঘাসের বুক হতে জন্ম নেওয়া
বট গাছটির সাথে পাল্লা দিয়ে বড় হয়েছে
কিন্তু মানুষ ভাবে কেমন করে জন্ম হল
এই বৃক্ষের,,
টিভি, পত্রিকার ব্রেকিং নিউজ হতে
সকল হৃদয়ে আজ এমন চঞ্চল প্রশ্ন,,,,
কোটি টাকার প্রশ্ন,,,


রাজু মজুমদার ও ভাবে,,,
যার ভাতের গায়ে লেগে থাকত বড় দাদার ঘামের গন্ধ,
বইয়ের ময়লা পুরান পাতায় মেঝদাদার চোখের জল,,,
পায়ের তলার প্রতি ইঞ্চি মাটি হতে,,মাথার চুলের অগ্রভাগে লেগে থাকত সেঝ দাদার স্বপ্নের হাতুড়ি!
সেই মাতৃহীন শিশুটি কীভাবে,, দাঁড়িয়ে গেল মানুষের লাইনে,,,মানুষের স্বীকৃতি নিয়ে,,!মানুষ বেশে,,!
ক্ষুধার উদরের সাথে সাথে মস্তিস্কের ক্ষুধাটা বেশ বুঝেছিল কি সে?ডাস্টবিনে কুড়ানো সাদা পাতায় কিছু লিখতে শিখেছিল কি ময়লা হাতে,,,?


এই শিখাটাই তোমাকে দাঁড় করিয়েছে জীবন সম্মুখে জীবনের নাম দিয়ে,,,রাজু মজুমদার!
কিন্তু,, জীবনের দাম যে এত চোখের জল,এত বেদনা তরল,,এত পাশাপাশি দূরত্ব!!এত লুকোচুরি! তা কি জানতে,?
জানতে কি রাজু মজুমদার,,মানুষের সাথে মানুষ হয়ে থাকার নামই হল মৃত্যু,,
চরম এক জীবন্ত মৃত্যু
জানতে না,,,!না জানারই এক কথা।
ইস্ত্রি দিয়ে  সোজা থাকা কাপড়
আতরের গন্ধে বুদ হয়ে থেকে
গায়ের গন্ধের কথা কীভাবে জানবে?
শহরের লাল নীল বাতি যে খুব সহজেই
গ্রামের কুপির কথা ভুলে যায়"
যেভাবে ভুলে যায় সুইমিংপুলে সাঁতরানো মাছ,,
বিলের কথা,খালের কথা,নদীর কথা,,
ভুলে যেতে হয়,, রাজ মজুমদার,,ভুলে যেতে হয়,,


হা হা,,কিন্তু ভুলে গিয়ে গিয়ে এতো জেনে গেলে,,,
মানুষ হতে হলে
মৃত দেহের নাম দিতে হয় জীবিত প্রাণ,,!!
সমগ্র চেতন কে করতে হয় অবচেতনে!
আড়ালে আবডালে একা একা কেঁদে
একা একাই নিজেকে নিজের মাঝে লুকিয়ে,,
লুকিয়ে শুধুই লুকিয়ে,,,
থাকতে হয় মানুষ হয়ে মানুষের সাথে!!
হাতে হাত রেখে
কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র দূরত্বে করতে হয়
মিলিত বসবাস,,,!
সামাজিক নিত্য আধুনিক বসবাস!!