বাবা,,ও বাবা,,, তুমি রাগ করেছ?
আর সে জন্যেই বুঝি আমার পুতুলটার দিকে তাকিয়ে
কোন কিছুই অনুভব করতে পার না?
আমার বিছানার ছোট ছোট বালিশটাকে
একবারও  ইচ্ছে করে না ছুইতে?
ও বাবা আমার দুধ মুখের ঘ্রাণ
এখন তোমার,,, খুব খারাপ লাগে বুঝি,,
আমার ছোট ছোট হাত পা,,, একেবারেই লাগে অসহ্য!
আমি কথা বলতে পারি না বলে
কেঁদে কেঁদে রাত বিরাতে তোমাকে জাগাই বাবা,,
আমি হাটতে পারি না বলে,, প্যাম্পার্স করে ফেলি নষ্ট
আমি অনেক অনেক ছোট বলে,,
কথা নেই, বার্তা নেই করে ফেলি বমি।
তাই কি রাগ করলে বাবা?
রাগ করলে দু টি কোল বালিশ ছোঁয়ে থাকা
তোমার এই শিশুটির উপর?
ও বাবা তাই আর বাবা হচ্ছ না আমার!!
দেখেও করে যাচ্ছ,, না দেখার ভান?


আমি যতই তাকিয়ে থাকি তোমার দিকে অপলকে
যতই হাত বাড়াই তোমার দিকে,,
ততই তুমি দূরত্বের আলমারিতে লুকিয়ে রাখ তোমায়।
ততই তুমি তোমার মুখের উপর মাখিয়ে রাখো
অচেনা অজানা রঙ,,!
ঘরের বাতাস টার গায়ের পরিচিত ঘ্রাণটা
বন্দি করে রাখ মুটিতে,,
কেন বাবা,,কেন?কেন কর এসব?


উত্তর বুঝি আজ তোমার কাছে নেই
তাই ব্যবধানে থেকে,, দেখাচ্ছ নাঁচ,,,
অস্পর্শে থেকে গেয়ে যাচ্ছ ঘুম পাড়ানির গান,,
হাড়িকেনের কাঁচের মত পাশে থেকেও
অনেক দূরে বাবা,তুমি অনেক দূরে।
বাবা তোমার এই দূর দূর খেলা ভাল লাগে,,
সত্যি করে বলো,,বুক তোমার মেনে নেয় এইসব?
নাড়ীর বন্দন যার আত্মায়,,তার দূরত্বের স্বাদ
নিকঠে থেকে কেবল নোনাই লাগে যে বাবা,,।
কাছে পাবার ব্যাকুলতা অবহেলায় পড়ে গেলে
ফুলও যে ভুল মনে হয়,,।


যে ভুলে ভুলে ভাবছি আমার দু মাসের ঠোট
ভাষা জানে না বলে
কথা বলার ভঙ্গিতে তুমি নাচাচ্ছ  তোমার ঠোট?
তাও তিন হাত ব্যাসার্ধের মহাসাগর পাড় থেকে।
যে তিন হাত আমার কাছে তিন শত ব্রহ্মান্ড সমান
তার ব্যথা শিশু না হলে,, কভু বুঝবে না বাবা বুঝবে না।
তাই বলছি,,  তুমি আর এমন করো না,,,বাবা
তুমি আর এমন করো না,,,
কথা দিচ্ছি,,আমি সারা রাত ঘুমাব,,,
কথা দিচ্ছি ক্ষুধা লাগলেও কাঁদব না,,
কথা দিচ্ছি স্নানের সময় বাধ্যগত থাকব তোমার
জলের উপর হাত নাড়িয়ে,জল ফেলে দেব না মেঝেতে।
বিশ্বাস করো,,তুমি যদি বল ঘুমাও
আমি ঘুমাব,,
যদি বল জেগে উঠো,,জেগে উঠব,,তবু
আমার কাছে এসে আমার কচি হাতের সাথে
কথা বলো বাবা
কথা বলো আমার নরম বিছানার সাথে,,
কথা বলো আমার গায়ে মাখা লোশনটার সাথে,,।
কথায় কথায় আমাকে তুলে নাও তোমার কোলে,,
সংযুক্ত কর পিতার ঘ্রান সন্তানের ঘ্রাণে,,!!
করবে না বাবা,,করবে না আর?
ঘরের বাতিটার আলোকে আটকিয়ে রাখবেই
সময়েতভকালো কাপড় দিয়ে,,।
ঝুন ঝুনির শব্দে মিশিয়ে দিবেই নিশব্দতা,,
পিডারের দুধের মাঝে,,,ঢেলে দিবে স্বাদ হীনতা?
এমন করে তুমি থাকতে পারবে বাবা,,?
এমন করে তুমি অবহেলায় রাখতে পারবে,,আমায়?
এড়িয়ে যেতে পারবে আমার অশ্রু ভরা অসহায় চাহনি?
এড়িয়ে যেতে পারবে বাবা,,আমার নিষ্পাপ ব্যাকুলতা
এড়িয়ে যেতে পারবে বাবা,,আমার রাত জেগে কান্নার
আকুলতা??


হয়ত তুমি পারবে বাবা,,হয়ত তুমি পারবে
কিন্তু তুমি কি জানো বাবা,,,
আমি আমার পাশে থাকা পুতুল টাকে বলি
দেখিস এখনি বাবা এসে আমাকে একটা নাঁকো দিবে
দেখিস এখনি বাবা এসে আমাকে চুমু দিবে!
এখনি আমার সাথে খেলবে,,হাসবে,,গাইবে,,
আমাকে বুকের উপর রেখে ঘুম পাড়াবে,,
আমাকে স্পর্শ করার প্রতিযোগিতায়
ঝগড়া করবে মায়ের সাথে।
আমার কথা শুনে পুতুলটা হাসতে থাকে বাবা,,
ঝুনঝুনটাও হাসতে  থাকে,,অবজ্ঞায়।
আমাকে কি বলে জানো,,
বলে তোমার নাকি কি এক রোগ হয়েছে
দূরে থাকার রোগ,,,কাছে না আসার রোগ।
স্পর্শ না করার রোগ,,
আর সে জন্যেই নাকি,,
তোমার পোশাকের উপর দেয়ালের মত লিখে রেখেছ
তুমি এখন বাবা না,,,
তুমি এখন বাবা না,,,
কিন্তু বাবা,,
সত্যি কি তুমি এখন বাবা নও?


বাবা ওই দেখ,,
তোমার বুক পকেটে রাখা কলমের মুখ ভেদ করে
বের হয়ে এসেছে তরল কালি,,
কালো তবে বেশ তরল বাবা বেশ তরল।
পাড়ার ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া
ফেরিওয়ালার ডাকের মত,,,
লাগবে নিগো,,,লাগবে নিগো শব্দজোড়ার মত
খুবই,,সরল,,খুবই তরল।।
তারপরেও কি বলবে বাবা
এখন তুমি আমার বাবা নও।
এখন তুমি আমার বাবা নও?


বল বাবা বল,,যত পার বল,,
আমার শিশু মন
না বুঝে রাগ,না বুঝে অভিমান
না বুঝে রোগ,,
বাবা এটা তুমি বুঝ-তো?
#########
রুবেল চন্দ্র দাস
প্যারিস
২৫/০৩/২০